ততযন্ত্র
সঙ্গীতশাস্ত্রে বাদ্যযন্ত্রে একটি প্রকরণ বিশেষ। ভরতের নাট্যশাস্ত্রের অষ্টাবিংশ অধ্যায়ে তন্ত্রীযুক্ত বাদ্যযন্ত্রকে ততযন্ত্র বলা হয়েছে। এই জাতীয় বাদ্যযন্ত্রের ক্রিয়াত্মক অংশ হিসেবে ধাতব তার, প্রাণীয় শুকনো নাড়ি এবং সুতা জাতীয় অধাতব উপাদান ব্যবহার করা হয়। পাশ্চাত্য সঙ্গীতে এই শ্রেণির বাদ্যযন্ত্রকে
String instrument বলা হয়। 

এই জাতীয় বাদ্যযন্ত্রে ব্যবহৃত তারের আঘাত করলে বা এতে ঘর্ষণ করলে তার কম্পিত হয়। ততযন্ত্রে ধ্বনি উৎপাদনের জন্য যা ব্যবহার করা হয়, তা হলো-

বেশিরভাগ ততযন্ত্রে তারের উপর প্রত্যক্ষ আঘাত হানার পাশাপাশি, তারের উপর অাঙুল বা চাবি দিয়ে চেপে ধরে- স্বর তৈরি করা হয়। যেমন- সেতারে তারে আঘাত হানার সাথে সাথে তারের উপর আঙুলের চাপ দিয়ে স্বরগুলো বাজানো হয়। কিন্তু বেঞ্জুর মতো বাদ্যযন্ত্রে তারের উপর চাপ দেওয়া যান্ত্রিক চাবির মাধ্যমে।

তারের শব্দমান বৃদ্ধি এবং অনুরণন বৃদ্ধির জন্য ততযন্ত্রসমূহে নানাবিধ কৌশল ব্যবহার করা হয়। যেমন-

রের সংখ্যার বিচারে ততযন্ত্রেকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন-

রের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে বাদ্যযন্ত্রকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন-

 বাদন প্রক্রিয়ার বিচারে এই জাতীয় ততযন্ত্রকে ২টি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-

অনুরণন-গত শ্রেণিকরণ: কোনো কোনো তারের যন্ত্রে উৎপাদিত ধ্বনির জোরালো ভাব ধ্বনিরঞ্জকতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়। যেমন গিটার জাতীয় যন্ত্রর কাঠামোর সমতল অংশের একটি গোলাকার গর্ত থাকে।  এই বিশেষ অংশকে পাশ্চাত্য সঙ্গীতে বলা হয় সাউন্ড বক্স। আবার জিথার জাতীয় বাদ্যযন্ত্রে ঘাটহীন সমতলীয় অংশটি অনুরণিত হয়, কন্তি এতে সাউণ্ডবক্স থাকে না।

ততযন্ত্রের ক্রমবিকাশের ইতিহাস:
মানবসভ্যতার ঊষালগ্নে, শিকারের জন্য বা আত্মরক্ষার জন্য ধনুকের উদ্ভাবন করেছিল। এরা ধনুকের রজ্জুর থেকে উৎপন্ন বোঁ জাতীয় অনুরণন-জাত মিষ্টি ধ্বনির সন্ধান পেয়েছিল। কালক্রমে এই ধ্বনিকে সঙ্গীতে ব্যবহারের জন্য বাদ্যযন্ত্রে পরিণত করেছিল।

আদিম ততযন্ত্রের কাঠামোগত অংশ ছিল- ধনুকের মতো বাঁকানো। এই কারণে পাশ্চাত্য সঙ্গীতত্ত্বে একে সাধারণভাবে ধনুকাকার ততযন্ত্র
(bow instrument) নামে অভিহিত করা হয়েছে।

প্রায় খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০০ অব্দের দিকে মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে প্রাপ্ত নমুনা থেকে এই যন্ত্রের প্রাচীনত্ব অনুমান করা যায়। এই সময়ে ধনুবাদ্যযন্ত্রে এর বাঁকানো কাঠামো হিসেবে ব্যবহার করা হতো হাড়, কাঠ জাতীয় উপকরণ। এরা শব্দের অনুরণন বৃদ্ধির জন্য কোন শব্দ-বিবর্ধক অংশ ছিল না। সেকালের  এই জাতীয় বাদ্যযন্ত্রে তারের বদলে প্রাণী শুষ্ক নাড়ি ব্যবহার করা হতো। পরবর্তী সময়ে এই যন্ত্র থেকে উদ্ভব হয়েছিল ঘাত ততযন্ত্র এবং ছড় তাড়িত ততযন্ত্র। 

এই জাতীয় বাদ্যযন্ত্র এখনো আফ্রিকায় ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে আফ্রিকা নাইজেরিয়া ওবু জনগোষ্ঠীর শিল্পীরা ধনুকাকার ততযন্ত্র ব্যবহার করে থাকেন। এই যন্ত্রের কাঠামো হিসেবে ব্যবহার করা কাঠের তৈরি বাঁকা দণ্ড এবং ক্রিয়াত্মক অংশ ব্যবহার করা হয় একটি ধাতব তার। এই জাতীয় যন্ত্রে সর্বপ্রাচীন নমুনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়- ফ্রান্সের 'ট্রোইস ফ্রেরেস' গুহায় খোদিত চিত্রকর্মটিকে। আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ১৩,০০০ অব্দের দিকে এই চিত্রকর্মটি অঙ্কিত হয়েছিল।