এস্‌রাজ
ভিন্নতর বানান এস্রাজ
বিতত (ছড় তাড়িত) ধাতব
তত বাদ্যযন্ত্র। অনুষঙ্গী যন্ত্র এবং একক-বাদন যন্ত্র।

বলা হয়ে থাকে, এস্রাজ হলো সেতার এবং সারেঙ্গীর সমন্বিত রূপ। এতে সেতারের মতো বাঁধা ঘাট আছে, আবার সারঙ্গীর মতো ছড় টেনে বাজানো হয়। এর ব্যবহার দেখা যায় মধ্য ভারত এবং বঙ্গদেশে (বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ। অনেকে মনে করেন দিলরুবা নামক যন্ত্রের আধুনিক সংস্করণ হলো এস্রাজ।

অনেকের মতে, খ্রিষ্টীয় পঞ্চদশ শতকের দিকে মুসলমান সম্রাটদের হেরেমে সঙ্গীতের অনুষঙ্গী যন্ত্র হিসেবে অল্পবিস্তার সারেঙ্গীর চল ছিল। সঙ্গীতানুষ্ঠানের জন্য এই যন্ত্র বাজাতেন পুরষ বাদকেরা। কিন্তু হেরেমের মেয়েরা নিজেদের সঙ্গীত চর্চার জন্য এই সব বাদকদের অনুমতি ছিল না। প্রথম দিকে মেয়েরা সারেঙ্গী শেখার চেষ্টা করে। কিন্তু হাতের নখ নিয়ে সারঙ্গী বাজানো মুশকিল। তা ছাড়া সুনির্দষ্ট ঘাট না থাকায় সারঙ্গী শেখাটা সহজ নয়। অন্যদিকে সেতারের ঘাট আছে কিন্তু বাজানোর সময় তারে এতটাই চাপ দিতে হয় যে, তাতে শিক্ষাকালীন সময়ে আঙুলে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এই কারণে সম্রাটরা সহজতর কোনো যন্ত্রের কথা ভাবছিলেন। পরে হেরেমের জন্য সেতার ও সারেঙ্গীর মিশ্রণে এই যন্ত্রটির উদ্ভাবন হয়। তবে ঠিক কোন সম্রাটের হেরেমের জন্য কে এই যন্ত্রটি তৈরি করেছিলেন, তা জানা যায় না।

সেতার-এর
ন্যায় দণ্ড এবং সারিন্দার মতো খোল ব্যবহার করে এই যন্ত্র উদ্ভাবন করা হয়েছে। এর খোলের উপরিভাগ চামড়া দ্বারা আচ্ছাদিত থাকে। এই আচ্ছাদনের উপরে সওয়ারি থাকে। আর এই সওয়ারির উপর যন্ত্রের তারগুলো বিন্যস্ত থাকে। এই তারগুলোতে আঙ্গুল বা কোনো কঠিন বস্তু দ্বারা আঘাতের পরিবর্তে ছড় দ্বারা ঘষে ঘষে ধ্বনি উৎপন্ন করা হয়।

এক হাতে ছড় টানার সময় এর দণ্ড বরারবর বিন্যস্ত তারের উপর অঙ্গুলি সঞ্চালনের দ্বারা প্রার্থিত ধ্বনি তৈরি করা হয়। অঙ্গুলি সঞ্চালনের সময় যথাযথ স্থানে অঙ্গুলি স্থাপনের জন্য সুনির্দিষ্ট ঘাট থাকে। এতে পিতলের নির্মিত তরপের তার থাকে। পক্ষান্তরে নায়কীর তার থাকে ইস্পাতের। এই যন্ত্রের তার বাঁধার নিয়মও সেতারের মতো।

 


সূত্র :
ভারতীয় সঙ্গীতকোষ। শ্রীবিমলাকান্ত রায়চৌধুরী। কথাশিল্প প্রকাশ। বৈশাখ ১৩৭২।
[
History of the Esraj, www.kksongs.org ]