বাদ্যযন্ত্র
[দেখুন:
বাদ্যযন্ত্র [অভিধান]
এর আক্ষরিক অর্থ হলো বাদনের উপযোগী যন্ত্র। সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনিসৃষ্টিকারী যে সকল যন্ত্র সঙ্গীতে ব্যবহৃত হয়, তার সবই বাদ্য
যন্ত্র। বাদ্যযন্ত্র অন্য
সঙ্গীতের সহযোগী হিসেবে বা একক বাদনের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে।
বাদ্যন্ত্রের গাঠনিক প্রকৃতির বিচারে
তিনটি ভাগে ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
- ক্রিয়াত্মক অংশ : বাদ্যযন্ত্রের
যে অংশ প্রত্যক্ষভাবে বাদিত হয়, বা যার মাধ্যমে বাদিত হয়, তাকে বাদ্যযন্ত্রের
ক্রিয়াত্মক অংশ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। যেমন-
তানপুরার
তার প্রত্যক্ষভাবে বাদিত হয়। তাই তানপুরার তার ক্রিয়াত্মক অংশ।
বাদ্যযন্ত্রের ক্রিয়াত্মক অংশের উপাদান দুই ধরনের হতে পারে।
১. স্ববাদন উপাদান : শব্দ উৎপাদনে বাদ্যযন্ত্রের কোনো অংশ কম্পিত হয় এবং এর ফলে
ধ্বনি উৎপন্ন হয়। যেমন তানপুরার তারে আঘাত করলে, তা কম্পিত হয় এবং তা ধ্বনি
তৈরি করে। যেহেতু তানপুরার তার, তানপুরা নামক যন্ত্রের প্রত্যক্ষ অংশ, এবং তা
আঘাতের দ্বারা নিজেই বাদিত হয়।
২. পরবাদন উপাদান : এই জাতীয় যন্ত্রের কোনো অংশ কম্পিত বা অনুরণিত না হয়ে সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনি সৃষ্টি হয়।যেমন আড় বাঁশি।এই বাঁশিতে, বাঁশির কোনো অংশ থেকে ধ্বনি উৎপন্ন হয় না। বাতাসের অনুরণনে সৃষ্ট ধ্বনি বাঁশির উন্মুক্ত অংশ থেকে নির্গত হয়। বাঁশির কোনো অংশকে কম্পিত না করেই এই ধ্বনি তৈরি করে।
- বাদ্যযন্ত্রের ভিত্তি : প্রত্যক্ষ বাদনযোগ্য
অংশ বাদ্যযন্ত্রের যে অংশের উপর বিন্যস্ত থাকে। তাকে বাদ্য যন্ত্রের ভিত্তি বলা
যায়। যেমন-
লম্বা কাঠের দণ্ড।
- বাদ্য নিয়ন্ত্রক অংশ : বাদ্য যন্ত্রের অংশের দ্বারা ধ্বনির প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। যেমন-তানপুরার তারের সটান দশাকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় এর উপরের দিকের কান ঘুরিয়ে। এই যন্ত্রাংশ দ্বারা ধ্বনি তৈরি করা যায় না, কিন্তু বাদ্য যন্ত্রের ধ্বনি প্রকৃতি এই সকল উপাদান দ্বারা নিয়ন্ত্রণ হয়। হারমোনোয়াম জাতীয় রিড যন্ত্রের রিডগুলো সুনির্দিষ্ট স্বরে বাঁধা থাকে, তাই এদের বাদ্য নিয়ন্ত্রক অংশ নেই। তবে হারমোনিয়াম জাতীয় বাদ্যযন্ত্রের বেলোর দ্বারা তাড়িত বায়ু প্রবাহের তারতম্য ঘটিয়ে-উৎপাদিত ধ্বনি উচ্চতা-সামান্যতা নিয়ন্ত্রিত করা যায়। তবলার ধস্বর নির্ধরাণে দোয়াল ও গুঁটি ব্যবহার করা হয়। ।
সকল ধরনের বাদ্যযন্ত্রে এই সকল উপাদান
একসাথে নাও থাকতে পারে। যেমন বাঁশি। এই যন্ত্রে ধ্বনি তৈরির ফুটো, বাঁশির দৈর্ঘ্য,
ব্যাস তৈরির সময়ই স্থির করে দেওয়া হয় এবং তা কখনো পরিবর্তন করা যায়। আর ধ্বনি
উৎপাদনের জন্য মুখের বাতাস এবং আঙুল ব্যবহার করা হয়। বলাই বাহুল্য এগুলো বাঁশি
বাদনের অংশ হলেও বাঁশির অংশ নয়।
ব্যবহারের বিচারে বাদ্য যন্ত্র দুই প্রকার।
প্রকার দুটি হলো-
সুরযন্ত্র ও তাল যন্ত্র।
-
সুরযন্ত্র: এই জাতীয় যন্ত্র
সঙ্গীতের সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনি তৈরি করা যায়। বাদ্যযন্ত্র দিয়ে প্রত্যক্ষভাবে
সঙ্গীতের সকল স্বরকে প্রকাশ করা যায় বা যায় না। এই বিচারে সুরযন্ত্রকে দুই ভাগে
ভাগ করা যেতে পারে। এই ভাগ দুটি হলো-
-
সুর উৎপাদক যন্ত্র
: এই জাতীয় যন্ত্র দিয়ে পৃথক পৃথকভাবে স্বর উৎপন্ন করা
যায়। যেমন-
সেতার
, সরোদ, বাঁশি,
হারমোনিয়াম
ইত্যাদি। এই সকল স্বর
ব্যবহার করে বিচিত্র ধরনের সুরের সৃষ্টি করা যায়।
-
স্বর-উৎপাদকযন্ত্র : এই জাতীয় যন্ত্র সঙ্গীতের সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনি বা স্বর তৈরি করা যায়। এই জাতীয় যন্ত্রে সুর বাজানো যায় না। ব্যবহারের বিচারে এই জাতীয় যন্ত্রকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়।
- সুরধ্বনির সহযোগী যন্ত্র: সঙ্গীতের পরিবেশ তৈরি বা সহযোগী স্বর-উৎপাদক যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেমন- তানপুরা। এই যন্ত্রের মাধ্যমে ষড়্জ-মধ্যম বা ষড়্জ-পঞ্চম ধ্বনি তৈরি করা যায় মাত্র। ফলে এ সকল যন্ত্রের মাধ্যমে স্বরাষ্টাকের সকল স্বর বাজানো যায় না।
- ছন্দ সহযোগী যন্ত্র: এই জাতীয় যন্ত্রে সঙ্গীতোপযোগী একক ধ্বনি উৎপন্ন করা যায়। কিন্তু ধ্বনি ছন্দের প্রকাশ করা যায় মাত্র। যেমন -
এই জাতীয় যন্ত্র সঙ্গীতের সঙ্গীতোপযোগী
ধ্বনি তৈরি করা যায়। এই ধ্বনি সঙ্গীতের ছন্দ এবং লয় নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়।
যেমন- তবলা,
পাখোয়াজ,
মন্দিরা ইত্যাদি।
বাদ্যযন্ত্রের ক্রিয়াত্বক অংশের বিচারে ৫ভাগে ভাগ করা হয়। এগুলো
হলো-
-
আনদ্ধ যন্ত্র: চামড়া
বা এই জাতীয় উপাদান ব্যবহৃত হয়।
-
ততযন্ত্র:
যে সকল যন্ত্রে
তার বা সুতাজাতীয় উপাদান ব্যবহৃত হয়।
- সুষির যন্ত্র:
যে সকল বাদ্যযন্ত্রের ক্রিয়াত্মক অংশ
বায়ুপ্রবাহের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে বাদিত হয় বা বায়ুর অনুরণনে সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনি সৃষ্টি
করে।
- ঘনযন্ত্র:
তত, আনদ্ধ ও সুষির বাদ্যযন্ত্র, বৈদ্যুতিন-যন্ত্রাদি ব্যতীত, যে সকল
বাদ্যযন্ত্রের অঙ্গে অন্য বস্তুর আঘাতে, ঘর্ষণে বা সঞ্চালনে সঙ্গীতোপযোগী
ধ্বনি তৈরি করা যায়, তাদের সাধারণ নাম ঘন-বাদ্যযন্ত্র।
- ব্র্যাস: এই জাতীয় বাদ্যযন্ত্রে মুখের
বায়ুর চাপে ঠোটের সাহয্যে এক ধরণের গুঞ্জন সৃষ্টি করে তা একটি নলের ভিতর দিয়ে
সঞ্চালিত করা হয়। এই নালের সাথে থাকে ধ্বনি নিয়ন্ত্রক ভালভ। এক্ষত্রের বাতাসে
পরিবর্তে সৃষ্ট গুঞ্জনধ্বনি সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনি হয়ে ওঠে। যেমন্- ট্র্যাম্পেট,
টুবা ইত্যাদি।