রুদ্রবীণা
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা
{ততযন্ত্র |
বাদ্যযন্ত্র |
ডিভাইস |
যন্ত্র |
যন্ত্রীকরণ |
মনুষ্য-সৃষ্টি |
এককঅংশ |
দৈহিক-লক্ষ্যবস্তু |
দৈহিক সত্তা |
সত্তা | }
প্রাচীন ভারতীয় ঘাটযুক্ত ঘাতযশ্রেণির
ততবাদ্যযন্ত্র।
ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনি মতে-
মহাদেব
তাঁর পত্নী দেবী পার্বতীর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এই বীণা তৈরি
করেছিলেন।
শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর তাঁর যন্ত্রকোষ গ্রন্থে লিখেছেন-
মুসলমান শাসনামলে মুসলমান সঙ্গীতজ্ঞদের হাতে রুদ্রবীণার রবাবে পরিণত হয়েছিল। মূলত এ
দুটি বাদ্যযন্ত্র ভিন্ন ধরনের।
এক সময় এই যন্ত্রটির ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা ক্রমে ক্রমে
এতটাই কমে গিয়েছিল, যে ভারতবর্ষের এক সময় এই বাদ্যযন্ত্রটি
সম্পর্কে শুধু
বইপত্রের বিবরণে পাওয়া যেতো।
বিংশ শতাব্দীতে এই যন্ত্রটির নিজের নকশায় তৈরি করেন জিয়া
মহিউদ্দীন ডাগর। পরবর্তী সময়ে ডাগর পরিবারের সদস্যরাই এই যন্ত্রের বাদনশৈলী নতুন
করে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেন। এরপরে একে নতুন করে জনপ্রিয় করে তোলেন
ওস্তাদ আসাদ আলী খান,
ওস্তাদ শামসুদ্দীন ফরিদি দেসাই এবং ওস্তাদ বাহাউদ্দীন ডাগর।
|
ছায়ানটে শুদ্ধসঙ্গীত উৎসব ২০১২-এ রুদ্রবীণা বাজাচ্ছেন ওস্তাদ বাহাউদ্দীন
ডাগর |
এই যন্ত্রে কাঠামোটিতে
৫৪-৬২ ইঞ্চি লম্বা বাঁশ বা কাঠের দণ্ড থাকে। একে বলা হয় দণ্ডী। এই দণ্ডটি দুটি বড়
বড় গোলাকার তুম্বার উপর বসানো থাকে। এই তুম্বা দুটি তৈরি হয়ে থাকে লাউয়ের খোলস
দ্বারা। মূলদণ্ডের উপর নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে ২৪টি কাঠের আড়া স্থিরভাবে বসানো থাকে।
প্রতিটি আড়ার উপরে তামার পাত বসানো থাকে। এই আড়াগুলোকে বলা হয় ঘাট।
এতে মোট ৭টি তার থাকে। এর ভিতরে ৪টি প্রধান তার ও ৩টি চিকারি
তার। এই তারগুলো হয় ইস্পাতের
এবং ব্যাস হয় .৪৫-.৪৭ মিলিমিটার। এই তারগুলো ঘাটের উপর দিয়ে সটান অবস্থায় থাকে।
তারগুলো যথাযথাভাবে বেঁধে মিজরাবের সাহায্যে বাজানো হয়।
এই যন্ত্রের ধ্বনি গম্ভীর ও সুমিষ্ট।
ধ্রুপদ আঙ্গিকের সঙ্গীতে
সহযোগী যন্ত্র
হিসেবে বাজানো হয়ে থাকে। তবে
বেশিরভাগ সময় একক বাদন হিসেবে ব্যবহৃত
হয়। এই যন্ত্রের বাদনে রাগের দীর্ঘ আলাপ হয় ধ্রুপদের মতো করে
এবং তালের বিভিন্ন গুণিতক মানে ধ্রুপদের বৈশিষ্ট্য বাদিত হয়ে থাকে।
শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বিচারে রুদ্রবীণার যে ঘরানাগুলোর
উল্লেখ পাওয়া যাব, সেগুলো হলো-
- ইন্দোর ঘরানা:
এই ঘরানার সূত্রপাত
করেছিলেন ওস্তাদ বন্দে আলি খাঁ। এই ঘরানার উল্লেখযোগ্য বাদকরা ছিলেন ওস্তাদ
মুরাদ আলি খাঁ, ওস্তাদ মুহম্মদ খাঁ।
- কলকাতা ঘরনা:
এই ঘরানার সূত্রপাত
করেছিলেন পণ্ডিত প্রমথনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি রামপুরা ঘরানার ওস্তাদ ওয়াজির
খাঁ-এর কাছে এবং ইন্দোর ঘরানার ওস্তাদ মুরাদ আলি খাঁর কাছে বীণ বাজনো শেখেন। পরে
তিনি উভয়ই ঘরনার বীণ বাদন শৈলী ব্যবহার করে রুদ্রবীণার কলকাতা ঘরানার বাদনশৈলী
তৈরি করেন।
- গোয়ালিয়র ঘরনা:
এই ঘরানার সূত্রপাত
করেছিলেন ওস্তাদ আসাদ আলি খাঁ।
- জয়পুর ঘরানা:
এই ঘরানার সূত্রপাত
করেছিলেন ওস্তাদ রজব আলি খাঁ। উল্লেখ্য, তাঁর গুরু ছিলেন ইন্দোর ঘরানার ওস্তাদ
বন্দে আলি খাঁ।
- ডাগর ঘরানা:
এই ঘরানার সূত্রপাত করেছিলেন ওস্তাদ বাহরাম খাঁ। এই ঘরানার উল্লেখযোগ্য
বাদকরা ছিলেন- ওস্তাদ জিয়া মহীউদ্দীন ডাগর, ওস্তাদ বাহাউদ্দীন ডাগর।
- লক্ষ্ণৌ
ঘরানা:
এই ঘরানার সূত্রপাত করেছিলেন ওস্তাদ আবিদ হুসেন খাঁ।
- গোয়ালিয়র ঘরনা:
এই ঘরানার সূত্রপাত
করেছিলেন ওস্তাদ আসাদ আলি খাঁ।
- সেনী ঘরানা:
এই ঘরানার সূত্রপাত করেছিলেন ওস্তাদ জাফর খাঁ। তবে এই ঘরানার প্রসার ঘটেছিলেন
তাঁর দুই পুত্র ওস্তাদ নুসার আলি খাঁ এবং সাদিক আলি খাঁ।