শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর
১৮৪০-১৯১০ খ্রিষ্টাব্দ
প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ এবং বিষ্ণুপুর ঘরানার উত্তর-পুরুষ

১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের ৬৫ নম্বর বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। পাথুরিয়াঘাটা ঠাকুর পরিবারের গোপীমোহন ঠাকুরের পঞ্চম পুত্র হরকুমার ঠাকুরের কনিষ্ঠপুত্র। মায়ের নাম শিবসুন্দরী দেবী। শৌরীন্দ্রমোহনের প্রাথমিক শিক্ষা হয় বাড়িতে। ১৮৪৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। ১৬ বৎসর এই কলেজে তিনি অধ্যয়ন করেন। কলেজের পাঠ শেষ করে তিনি সঙ্গীতের পাঠ শুরু করেন। মূলত বারবারিক পরিবেশে তিনি সঙ্গীতের সাথে বিশেষভাবে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন।

১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর উদ্যোগে একটি নাট্যমঞ্চ স্থাপিত হয়েছিল। এই নাট্যমঞ্চে অভিনীত হয়েছিল 'মালবিকাগ্নিমিত্র' নাটক। উল্লেখ্য এটাই ছিল পাথুরিয়াঘাট বঙ্গনাট্যালয়ের আদি মঞ্চ। ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দের ৭ জুলাই এই মঞ্চে 'মালবিকাগ্নিমিত্র' দ্বিতীয়বার অভিনীত হয়েছিল।

পাথুরিয়াঘাটা রাজসভার সঙ্গীতজ্ঞ ক্ষেত্রমোহন গোস্বামী' র কাছে গান শেখেন। এরপর তিনি ওই রাজসভার বীণাকার লক্ষ্মীপ্রসাদ মিশ্রের কাছে বীণা ও ধ্রুপদ শেখেন। এরপর তিনি সঙ্গীতে তালিম নেন সেতার ও সুরবাহার বাদক ওস্তাদ সাজ্জাদ মহম্মদের কাছে। পাশ্চাত্য সঙ্গীতের পাঠ নিয়েছিলেন জনৈক জার্মান সঙ্গীতজ্ঞের কাছে। এছাড়া ভারতের অঞ্চল থেকে আগত সঙ্গীতগুণীর রাজদরবারে আসার সূত্রে তিনি বহুজনের কাছ থেকে সঙ্গীতের পাঠ নিয়েছেন। সমাসময়িক সঙ্গীত শিক্ষার পাশাপাশি তিনি প্রাচীন গ্রন্থাদি পাঠ করেছেন প্রচুর। এছাড়া সঙ্গীত দর্পণ, সঙ্গীতসার সংগ্রহের মতো সুপ্রসিদ্ধ প্রাচীন গ্রন্থাদি প্রকাশ করেছিলেন। ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দে পাইকপাড়ার রাজা ঈশ্বরচন্দ্র সিংহের মৃত্যুর পর, বেলগাছিয়া নাট্যশালা বন্ধ হয়ে যায়।

১৮৬৫ খ্রিষ্টাব্দে শৌরীন্দ্রমোহনের সহায়তায়, তাঁদের প্রাসাদে 'পাথুরিয়াঘাটা বঙ্গ-নাট্যালয়' প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দে  ক্ষেত্রমোহন গোস্বামী ও লক্ষ্মীপ্রসাদ মিশ্র< কলকাতায় সঙ্গীত সম্মেলনের আয়োজন করেন। এই আয়োজনকে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য তিনি সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন।

১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর  তাঁর উদ্যোগে ক্ষেত্রমোহন গোস্বামী'র প্রথম স্বরলিপি গ্রন্থ 'ঐকতানিক স্বরলিপি' প্রকাশিত হয়। ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর ;জাতীয় সঙ্গীত বিষয়ক প্রস্তাব' নামক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।
১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দে শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর এবং কিছু সঙ্গীতগুণী কলকাতায় 'বঙ্গ সঙ্গীতবিদ্যালয়' স্থাপন করেছিলেন। ওই সঙ্গীত বিদ্যালয়ের প্রচার এবং সঙ্গীতশিক্ষার্থীদের সহায়তা দানের জন্য ' সঙ্গীত সমালোচনী' নামক একটি পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন তাঁর সঙ্গীতগুরু ক্ষেত্রমোহন গোস্বামী।পত্রিকাটি প্রকাশিত হতো কলকাতার ৫২ নম্বর হিদারাম ব্যানার্জি লেন থেকে। এরপর পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়েছে ২ নম্বর হল্‌ওয়েল্‌স্ লেন থেকে। এই পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে (আশ্বিন ১২৭৯ বঙ্গাব্দ)। পত্রিকাটির মূল্য ছিল ছয় আনা।

এই পত্রিকার নামে মাত্র সম্পাদক ছিলেন ক্ষেত্রমোহন গোস্বামী। পত্রিকার প্রধান লেখক এবং সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করতেন শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর। ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জুন পরলোকগমন করেন।

পুরস্কার ও প্রাপ্তী

১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দে ফিলাডেলফিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'ডক্টর অব মিউজিক' উপাধি পান।
১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'ডক্টর অব মিউজিক' উপাধি পান।
এছাড়া ভারত সরকার তাঁকে রাজা উপাধি দেয়। নেপাল রাজদরবার থেকে তাঁকে 'সঙ্গীত নায়ক' এবং 'সঙ্গীত সাগর' প্রদান করে।

রচিত গ্রন্থাবলি
তথ্যসূত্র :
সংসদ বাঙালি চরিতাবিধান (প্রথম খণ্ড)। জানুয়ারি ২০০২।
বাঙালির রাগসঙ্গীত চর্চ্চা। দিলীপকুমার মুখোপাধ্যায়।