দুর্বাসা
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা { ঋষি | পৌরাণিক সত্তা | কাল্পনিকসত্তা | কল্পনা | সৃজনশীলতা | দক্ষতা | জ্ঞান | মনস্তাত্ত্বিক বিষয় | বিমূর্তন | বিমূর্ত-সত্ত | সত্তা |}

হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে  মহর্ষি অত্রির ঔরসে অনসূয়ার গর্ভে মহাদেবের অংশ হিসাবে ইনি জন্মগ্রহণ করেনইনি তপস্যার দ্বারা নিজেকে অত্যন্ত তেজময়রূপে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেনতবে ইনি অল্পেতেই রেগে যেতেন এবং ভয়ঙ্কর অভিশাপ দিতেনঔর্ব মুনির কন্যা কন্দলীকে ইনি বিবাহ করেনবিবাহকালে ঔর্ব ঋষি তাঁকে কন্যার শত দোষ ক্ষমা করতে বলেনকলহপ্রিয় এই কন্যা অল্পদিনের মধ্যেই একশত দোষ পূর্ণ করেএরপর দুর্বাসা তাঁকে অভিশাপ দ্বারা ভষ্ম করেনএরপর ঔর্ব কন্যার শোকে কাতর হয়ে দুর্বাসার দর্প হত হবে বলে অভিশাপ দেনএকবার অম্বরীষ বর্ষব্যাপী ব্রত উদ্যাপন শেষ করার সময় ইনি সেখানে উপস্থিত হনএখানে তিনি ঘটনাক্রমে অম্বরীষকে অভিশাপ দিলে, অম্বরীষের রক্ষাকারী সুদর্শনচক্রের কবলে পড়েনপরে কৃষ্ণের পরামর্শে অম্ববরীষের কাছে ক্ষমা চেয়ে সুদর্শন চক্রের হাত থেকে রক্ষা পানএইভাবে ঔর্ব ঋষির অভিশাপে দুর্বাসার গর্ব খর্ব হয়েছিল।          

ইনি পাণ্ডব জননী কুন্তীর সেবায় সন্তুষ্ট হয়ে এমন মন্ত্র দান করেছিলেন যে, যার প্রভাবে কুন্তী যে কোন পুরুষকে পেতে পারতেনকুন্তী পরবর্তীতে এই মন্ত্রের প্রভাবে সূর্য, ধর্ম, পবন ও ইন্দ্রের সাথে মিলিত হয়ে যথাক্রমে কর্ণ, যুধিষ্ঠির, ভীম ও অর্জুনকে জন্ম দেন

এঁর ভ্রমণকালে এক অপ্সরা তাঁকে সন্তানক নামক মালা উপহার দেনদুর্বাসা উক্ত মালা ইন্দ্রের হাতী ঐরাবতের মাথায় স্থাপন করলে ঐরাবত উক্ত মালা ছিন্ন করে মাটিতে নিক্ষেপ করেএই কারণে ইনি ক্ষুব্ধ হয়ে ইন্দ্রকে শ্রীভ্রষ্টের অভিশাপ দেনএঁর অপর এক অভিশাপে শকুন্তলা রাজা দুষ্মন্ত কর্তৃক পরিত্যাক্তা হয়েছিলেনপাণ্ডবদের বিপন্ন করার জন্য দুর্যোধনের অনুরোধে ইনি দশ হাজার শিষ্য নিয়ে অসময়ে পাণ্ডবদের অতিথি হিসাবে উপস্থিত হন কিন্তু কৃষ্ণের অলৌকিক ক্ষমতায় ইনি অভিশাপ দিতে সমর্থ হন নি

একবার দুর্বাসা উত্তপ্ত পায়েস খাবার সময় ইনি কৃষ্ণকে তাঁর সর্বাঙ্গে পায়েস লেপন করতে বললেনকৃষ্ণ দুর্বাসার পায়ের তলা ছাড়া সর্বত্র পায়েস লেপন করেনএরপর দুর্বাসা কৃষ্ণের স্ত্রী রুক্সিণীর শরীরে পায়েস লেপন করে তাঁকে রথে যোজন করেনযথাসাধ্য চেষ্টায় রথ টেনে নিতে থাকলে দুর্বাসা তাঁকে কশাঘাত করতে থাকেনএকসময় রুক্সিণী ক্লান্ত হয়ে পড়লে, দুর্বাসা রেগে রথ থেকে নেমে দক্ষিণ দিকে যাবার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এই সময় কৃষ্ণ তাঁকে অনুনয়-বিনয় দ্বারা সন্তুষ্ট করেনএরপর দুর্বাসা কৃষ্ণ ও রুক্সিণী সর্বলোকপ্রিয় হওয়ার আশীর্বাদ করেনকৃষ্ণ পায়ের তলা ছাড়া সর্বশরীরে পায়েস লেপন করেছিলেন বলে ইনি আশীর্বাদ করে বলেন যে, কৃষ্ণের পায়ের তলা ছাড়া সর্বশরীর অভেদ্য হবেউল্লেখ্য পরে পায়ের তলায় বাণ বিদ্ধ হয়ে কৃষ্ণ মৃত্যুবরণ করেছিলেন

দুর্বাসার সাথে পরিহাস করার জন্য শাম্বকে গর্ভবতী স্ত্রী বানিয়ে যদুবংশীয়রা তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন যে, এই স্ত্রীর গর্ভে কি আছেদুর্বাসা এই পরিহাস বুঝতে পেরে বলেন যে, এর গর্ভে মুশল আছে এবং তার দ্বারা যদুবংশ ধ্বংস হবে

রাম একবার কালপুরুষের সাথে নির্জনে কথা বলছিলেনএই কথোপকথনের সময় কেউ উক্ত স্থানে প্রবেশ করলে, তাঁকে রাম পরিত্যাগ করবেন এবং তাঁর মৃত্যু হবে এমন বাধ্যবাধকতা ছিলউক্ত আলাপকালে লক্ষ্মণ দ্বার রক্ষা করছিলেনএমন সময় দুর্বাসা মুনি রামের সাক্ষাৎ করতে আসেনলক্ষ্মণ দুর্বাসার অভিশাপের ভয়ে, দুবার্সার আগমন বার্তা রামের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য রাম-কালপুরুষের আলাপস্থানে প্রবেশ করেনসে কারণে লক্ষ্মণকে রাম পরিত্যাগ করেন এবং পরে সরযূনদীর তীরে লক্ষ্মণ প্রাণত্যাগ করেন