একাদশী ব্রত
হিন্দুধর্মের বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মধ্যে পালিত ব্রত বিশেষ।

হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে সৌর-মাসের চান্দ্র-তিথি অনুসারে শুক্ল ও কৃষ্ণ পক্ষের একাদশতম চান্দ্র তিথি। প্রতিটি সৌর-মাসে একাদশীর সময় চাঁদের অবস্থান অনুসারে এই ব্রতের সময় নির্ধারিত হয়ে থাকে। বছরে সাধারণত ২৪টি একাদশী থাকে, এবং কখনও কখনও অধিবর্ষে দুটি অতিরিক্ত একাদশী হয়।

একাদশীর দিন সূর্যোদয় থেকে পরের দিন সূর্যোদয় পর্যন্ত নিয়ন্ত্রিত উপবাস করা হয়। এই সময় উচ্চ প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার গ্রহণ করা হয় না। তবে ফল, শাকসবজি ও দুগ্ধজাত পণ্য খাওয়া হয়।  

একাদশী ব্রতের উৎপত্তি
পদ্মপুরাণের মতে (উত্তর খণ্ড ৩৮.৪৬-১১৮, নবভারত সংস্করণ)- সত্য যুগে তালজঙ্ঘ নামক এক রাক্ষসের পুত্র মুরের কাছে পরাজিত হয়ে, দেবতারা স্বরগ থেকে বিতারিত হন। পরাজিত দেবতারা প্রথমে এর প্রতিকারের জন্য মহাদেবের কাছে যান। মহাদেব তাঁদেরকে এর প্রতিকারের জন্য বিষ্ণু কাছে যেতে বলেন। দেবতাদের কাছে সব শুনে বিষ্ণু সসৈন্যে মুরের বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযান শুরু করেন। বিষ্ণুর সুদর্শন চক্রের আঘাতে মুরের সকল সৈন্য বিনষ্ট হলেও মুর অক্ষত রয়ে যান। এরপর বিষ্ণু সরাসরি মুরের সাথে মল্লযুদ্ধ শুরু করেন। দীর্ঘদিন ধরে এই যুদ্ধ চললেও কেউ কাউকে পরাজিত করতে পারলেন না। ইতোমধ্যে ইন্দ্র এবং দেবসেনারা যুদ্ধক্ষেত্রে ত্যাগ করেছিলেন। যুদ্ধের এক পর্যায়ে বিষ্ণু ক্লান্তি বোধ করলেন। তাই তিনি যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করে, বদরিকাশ্রমের সিংহবতী নামক গুহায় বিশ্রাম নেওয়ার জন্য শায়িত হলেন। মুর বিষ্ণুর পথ অনুসরণ করে বদরিকাশ্রমে এসে শায়িত বিষ্ণুকে দেখতে পেলেন। তিনি ভাবলেন- বিষ্ণু তাঁর ভয়ে এখানে লুকিয়েছেন। এই অবস্থায় বিষ্ণুকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে মুর গুহায় প্রবেশ করলেন। এই সময় বিষ্ণুর শরীর থেকে এক মায়াময়ী  সুন্দরী কন্যা আবির্ভূতা হলেন। এই কন্যা সাথে যুদ্ধে মুর পরাজিত ও নিহত হন। বিষ্ণুর দেহজাত এই কন্যাই হলেন একাদশী।

বিষ্ণু এই কন্যাকে বর দিতে ইচ্ছা করলে, তিনি বর প্রার্থনা করে বললেন, 'আমাকে ত্রিলোকে চারিযুগে এমনভাবে প্রতিষ্ঠা করুন, যাতে আপনার কৃপায় আমি সকল তীর্থ ও সমস্ত পূণ্যকর্মের চেয়ে বেশি পুণ্যফলদায়িনী ও সিদ্ধিদাত্রী হতে পারি। আমার জন্য উপবাসের নির্দিষ্ট দিন ধারয করে দিন। যিনি এই উপবাস করবেন, তাঁর মনস্কামনা পূরণ হবে।' বিষ্ণু একাদশীকে সেই বরই দিলেন। বিষ্ণু একাদশীকে আরও বললেন-  ''তুমি আজ থেকে একাদশী তিথি হিসেবে প্রসিদ্ধা হবে। যারা এই তিথিতে উপবাস করবে, আমাকে (বিষ্ণু) পূজা করবে, তারা  অবশ্যই মোক্ষলাভ করবে।

একাদশী ব্রতের ফল
একাদশী ব্রতের পালনের ফললাভ সম্পর্কে, পদ্মপুরাণ ছাড়া অন্যান্য পুরাণে বিশেভাবে পাওয়া যায়। যেমন-

শুক্ল ও কৃষ্ণপক্ষের বিচারে একাদশীর নাম এবং মাহত্ম্য
পদ্মপরাণে পক্ষভেদে  প্রতিটি একাদশীর পৃথক নাম এবং অধিষ্ঠাত্রী দেবতার নাম পাওয়া যায়। এই দেবতারা বিষ্ণুর অবতার বা ভিন্নতর নামে প্রতিষ্ঠিত।
 

মাসের নাম কৃষ্ণপক্ষ শুক্ল পক্ষ  অধিষ্ঠাত্র দেবতা
চৈত্র পাপমোচনী কামদা রাম
বৈশাখ বরূথিনী মোহিনী মধুসূদন
জ্যৈষ্ঠ অপরা নির্জলা ত্রিবিক্রম
আষাঢ় যোগিনী শয়নী বামন
শ্রাবণ কামিকা পুত্রদা শ্রীধর
ভাদ্র অজা পরিবর্তনী ঋষিকেশ
আশ্বিন ইন্দিরা পাপাশঙ্কুশ পদ্মনাভ
কার্তিক রমা প্রবোধিনী দামোদর
মার্গশির্ষ (অগ্রহায়ণ) উৎপন্না/উৎপত্তি* মোক্ষদা কেশব
পৌষ সফলা পুত্রদা নারায়ণ
মাঘ ষট্‌তিলা জয়া মাধব
ফাল্গুন বিজয়া আমলকী গোবিন্দ
অধিবর্ষের মাস পদ্মিনী পরম শুদ্ধা পুরুষোত্তম
* পদ্মপুরাণে এই নাম নেই। হিন্দু পণ্ডিতের এই নাম অন্যান্য পুরাণ থেকে গ্রহণ করেছেন।