কার্তিকেয়
|ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা
{|
হিন্দু দৈবসত্তা
|
দৈবসত্তা
|
আধ্যাত্মিক সত্তা
|
বিশ্বাস
|
প্রজ্ঞা
|
জ্ঞান |
মনস্তাত্ত্বিক বিষয়
|
বিমূর্তন
|
বিমূর্ত-সত্তা
|
সত্তা
|}
এর অন্যান্য নাম : অম্বিকানন্দন,
অম্বিকাসূত,
অম্বিকেয়,
অগ্নিকুমার,
অগ্নিজ,
অগ্নিজন্মা,
অগ্নিভূ,
অমোঘ।
হিন্দু পৌরাণিক
কাহিনি মতে–
ইনি
দেবসেনার প্রধান ছিলেন।
কার্তিকেয়ের জন্ম নিয়ে একাধিক কাহিনী প্রচলিত আছে।
যেমন–
১. তারকাসুরকে হত্যা করার জন্য একটি পুত্র উৎপাদনের লক্ষ্যে, মহাদেব পার্বতীর সাথে মিলিত হন। কিন্তু মহাদেবের বীর্য গ্রহণে পার্বতী অসমর্থা দেখে তিনি তা, অগ্নিতে নিক্ষেপ করেছিলেন। অগ্নিও উক্ত বীর্য গ্রহণে অক্ষম ছিলেন বিধায় তা গঙ্গায় নিক্ষেপ করেছিলেন। গঙ্গা আবার তা শরবনে নিক্ষেপ করলে একটি সুদর্শন বালকের সৃষ্টি হয়। মহাদেব তাঁর বীর্য অগ্নিতে নিক্ষেপ করেছিলেন বলে– এই বালকের নাম অগ্নিভু রাখা হয়। কৃত্তিকারা এই বালককে স্তন্যদানে প্রতিপালন করেন। কৃত্তিকাদের স্তনদানের কারণে ইনি তাঁদের পুত্র হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন এবং সেই সূত্রে ইনি কার্তিকেয় নামে অভিহিত হয়ে থাকেন। পরে পার্বতী বিষয়টি অবগত হয়ে কার্তিকেয়কে তাঁর কাছে নিয়ে যান।
২. দক্ষ কন্যা স্বাহা অগ্নিকে পাবার জন্য কামাতুর হয়ে পড়েন এবং অগ্নি কি ধরনের নারীদের পছন্দ করেন তা অনুসন্ধান করতে থাকেন। অনুসন্ধানে ইনি জানতে পারেন যে– অগ্নি সাতজন ঋষির স্ত্রীদের কামনা করেন। এই ঋষি এবং তাঁর স্ত্রীরা হলেন– মরীচির স্ত্রী কলা, অত্রির স্ত্রী অনুসূয়া, পুলহের স্ত্রী ক্ষমা, পুলস্ত্যের স্ত্রী হবির্ভূ, ক্রতুর স্ত্রী সন্নতি, অঙ্গিরা স্ত্রী শ্রদ্ধা ও বশিষ্ঠের স্ত্রী অরুন্ধতী।
স্বাহা উক্ত স্ত্রীদের ছয় জনের রূপ ধরে অগ্নির সাথে মিলিত হন। একমাত্র বশিষ্ঠের স্ত্রীর অরুন্ধতি'র তপস্যার প্রভাব অত্যন্ত প্রবল থাকায়– ইনি তাঁর রূপ ধরতে অপারগ হন। স্বাহা প্রতিবার মিলিত হওয়ার পর অগ্নির বীর্য একটি কাঞ্চনকুণ্ডে নিক্ষেপ করেন। পরে এই কুণ্ড থেকে ছয় মাথা বিশিষ্ট একটি বালকের জন্ম হয়। উল্লেখ্য ইনি কার্তিকেয়।
কার্তিকেয়ের জন্মের পর বশিষ্ট ব্যতীত সকল ঋষিই তাঁদের স্ত্রীদের ত্যাগ করেন। কারণ ঋষিরা মনে করেছিলেন যে, তাঁদের স্ত্রীরাই অগ্নির সাথে মিলিত হয়েছে এবং তাঁরাই অগ্নির বীর্য কুণ্ডে নিক্ষেপ করেছে। স্বাহা প্রকাশ্যে তাঁর এই কীর্তি বর্ণনা করলেও ঋষিরা বিশ্বাস করলেন না। এই বিপর্ষস্ত অবস্থার আংশিক সমাধান হিসাবে দেবতারা কার্তিকেয়কে হত্যা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করলেন। কিন্তু এই বালক অত্যন্ত শক্তিশালী ছিলেন বলে– কোন দেবতাই তাঁকে হত্যা করার জন্য অগ্রসর হতে সাহসী হলেন না।
এরপর দেবতারা তাঁকে হত্যা করার জন্য মহাদেবের অনুচরী মাতৃকা'কে পাঠালেন। কিন্তু মাতৃকা গিয়ে তাঁকে সন্তান হিসাবে বুকে টেনে নিলেন। আপন স্তন পান করিয়ে মাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করলেন। এরপর দেবরাজ ইন্দ্র কার্তিকেয়কে হত্যা করার জন্য সসৈন্যে অগ্রসর হলেন। কার্তিকেয় মুখ-নিসৃত আগুন দ্বারা ইন্দ্রের সকল সৈন্য দগ্ধ করলেন। এরপর ইন্দ্র বজ্র নিক্ষেপ করলে– বালকের এক পাশ্ব বিদীর্ণ হয়ে একটি স্বর্ণবর্ণের যুবক আবির্ভূত হয়। এবার ইন্দ্র ভয় পেয়ে এর সাথে সন্ধি করে দেবসেনাপতি করে দেন।
কার্তিকেয় মূলত মহাদেবের পুত্র হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকেন। স্বাহার কৌশলে কার্তিকেয়ের জন্ম হলেও কথিত আছে– অগ্নির শরীরে প্রবেশ করে মহাদেব স্বাহার সাথে মিলিত হয়েছিলেন এবং যা অগ্নির স্খলিত বীর্য হিসাবে স্বাহা কুণ্ডে নিক্ষেপ করেছিলেন- তা মূলত মহাদেবের বীর্য ছিল।