মন
বানান বিশ্লেষণ:
ম্+অ+ন্+অ।
উচ্চারণ :
mon
(মোন্)।
শব্দ-উৎস:
সংস্কৃত
মনস্>মনঃ>বাংলা
মনঃ>মন
পদ:
বিশেষ্য
অর্থ:
মনের কোনো দৈহিক সত্তা নেই তাই মন বিমূর্ত। আমি'র বিমূর্ত কার্যকর্মে
বিমূর্ত ঘটক হিসেবে মন অবস্থান করে। এই কার্যক্রমের ভিতর দিয়ে প্রাণশক্তির
প্রকাশ ঘটে। এই কারণেই মন,
আত্মা
(ধর্মীয় বিশ্বাসে) বা আমির অংশ।
দর্শনের বিচারে মন
মন আমি নামক সত্তার অংশ এবং আমি তার নিয়ন্ত্রক। সত্তার ইচ্ছাই হলো মন। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য যা কিছু আমি'র কাছে প্রকাশ পায়, আমি সিদ্ধান্ত নেয় সে অনুভূতি অনুসারে কি করবে। আমি ইচ্ছা করলো, সে গান শুনবে বা শুনবে না। এই বিচারে মন স্বেচ্ছাচারী। কিন্তু মন স্বেচ্ছাচারী হলেও আমি স্বেচ্ছাচারী নয়। আমি'র ইচ্ছায় প্রাথমিকভাবে যে ভাবনাই জাগ্রত হোক না কেন, আমি তা বিচার করতে বসে। এই বিচারে যে জয় যুক্ত হয়, আমি তাই করে। এক্ষেত্রে মন দ্বৈত-সত্তা হিসেবে বিরাজ করে। এক্ষেত্রে মনের ভূমিকা হয়ে উঠে আদালতের মতো। এক্ষেত্রে মনের স্বেচ্ছাচারী ভাবাবেগ এবং তাকে অভিজ্ঞতার আলোকে বিচার করার ইচ্ছা, উভয়ই একটি অখণ্ড মনের দুটি অংশ হিসেবে প্রকাশ পায়। আমি মনের উভয় অংশ নিয়ে ভালমন্দের তুলনামূলক বিচারে বসে। আমির ইচ্ছাতেই এই কার্যক্রম চলতে থাকে। ফলে আমি'র আর একটি ইচ্ছা আগের ইচ্ছার কাতারে এসে হাজির হয়। আবার সবশেষে আমি কোনটি গ্রহণ করবে, তার সিদ্ধান্ত নেয় এবং সেই সিদ্ধান্ত দ্বারা চালিত হয়। এর ফলে মনের আরও একটি অংশের সৃষ্টি হয়। এই কারণে মন বলে যে সত্তাকে উল্লেখ করা হয়, তা অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইচ্ছার সমন্বিত অখণ্ড অংশ হিসেবে উপস্থাপিত হয়। এই কারণে মন বড়ই জটিল। এক্ষেত্রে আমিকে দক্ষ বিচারকের ভূমিকায় থাকতে হয়। কখনো কখনো মন সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। ফলে ইচ্ছা বা মনের অস্থিরতার ভিতর দিয়ে আমি অসহায় হয়ে পড়ে। একটি আমি অন্য কোনো আমি'র সাহায্য নিতে পারে। এটাও মনের অংশ হয়ে যায়। আমি মস্তিষ্কের স্মৃতিভাণ্ডার থেকে অভিজ্ঞতাকে উত্তোলন করে। উল্লেখ্য আমি যে স্মৃতি ভাণ্ডার থেকে অভিজ্ঞতা তুলে আনার ইচ্ছা করে, তাও মনের আর একটি অংশ।আমি কোনো বিষয়কে মস্তিষ্কের স্মৃতিভাণ্ডার থেকে তুলে আনার চেষ্টা করে। আমি'র এই ইচ্ছার ভিতর দিয়ে মনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে যায়। মনের এই ক্ষেত্রে প্রার্থিত বিষয় যখন স্মৃতি থেকে উত্তোলিত হয়ে উপস্থাপিত হয়, তখন তা আমির ইচ্ছাকেই পূরণ করে। এই পূরিত ইচ্ছার সূত্রে প্রাপ্ত ফলাফলকে স্মরণ বলা যায়। আর এই চেষ্টা ব্যর্থ হলে বলা হয় মনে পড়ছে না। অর্থাৎ মনের ক্ষেত্রটিতে প্রার্থিত বিষয়টি স্থান লাভ করে নি। সব মিলিয়ে দাঁড়ায় মন হচ্ছে- স্বয়ম্ভূ বা পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকে উদ্ভূত 'আমি'র ইচ্ছা ও প্রচেষ্টার একক বা পারস্পরিক ঐচ্ছিক কার্যক্রমের ক্ষেত্র।
ইন্দ্রিয়দ্বারা যে অনুভবের সৃষ্টি হয়, মনকেই তা স্পর্শ করে।
আমি এবং ইন্দ্রিয়
'আমি' দেহগত বা দেহের সকল তথ্য সংগ্রহ করে, দেহের কিছু তথ্য সংগ্রাহক, তথ্যসঞ্চালক এবং তথ্য প্রক্রিয়াকরণ উপকরণের সাহায্যে। বহুকাল আগে থেকেই কার্যক্রমের বিচারে এই কার্যক্রমকে পাঁচটি অংশে ভাগ করে ব্যাখ্যা করা হয়ে আসছে। এর প্রতিটি ভাগকে বলা হয় ইন্দ্রিয়। এগুলো হলো
- দর্শন: চোখ, আলোকসংবেদী তথ্য সঞ্চালন পথ এবং আলোকসঙ্কেত প্রক্রিয়াকরণ ডিভাইস।
- শ্রবণ: কান, শব্দসংবেদী তথ্য সঞ্চাচালক পথ এবং এবং শব্দসঙ্কেত প্রক্রিয়াকরণ ডিভাইস।
- স্পর্শন: ত্বক, স্পর্শসংবেদী তথ্য সঞ্চাচালক পথ এবং এবং স্পর্শসঙ্কেত প্রক্রিয়াকরণ ডিভাইস।
- ঘ্রাণ: নাসিকা, ঘ্রাণসংবেদী তথ্য সঞ্চাচালক পথ এবং এবং ঘ্রাণসঙ্কেত প্রক্রিয়াকরণ ডিভাইস।
- আস্বাদন: মুখবিবরের স্বাদ গ্রহণের উপকরণ, খাদ্যদ্রব্যের স্বাদসংবেদী তথ্য সঞ্চালক পথ এবং স্বাদসঙ্কেত প্রক্রিয়াকরণ ডিভাইস।
এর বাইরে একটি বিশেষ সঙ্কেতসংবেদী বিষয়ের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করার প্রয়োজন আছে। এই অংশ রয়েছে শরীরের সমগ্র অংশ জুড়ে। এই অংশ মূলত শরীরের আনন্দ-বেদনার সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে। যেমন পেটের ব্যথা হলে— শরীরে যে বেদনাদায়ক অনুভূতির জন্ম হয়, তা দর্শন, শ্রবণ, ঘ্রাণ, আস্বাদন বা স্পর্শের বিষয় নয়। এই জাতীয় বিষয় শরীরের স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় অনুভূত হয়।
যুক্তশব্দ: অকপটমন, অকুণ্ঠিতমন।