(মোন্.জিল্)
শব্দ-উৎস:
আরবি মন্জিল>
বাংলা মঞ্জিল
পদ :
বিশেষ্য
অর্থ: সুফি মতবাদে মঞ্জিল একটি
পারভাষিক শব্দ। এর আক্ষরিক অর্থ প্রাসাদ বা বাসভবন। যেখানে আল্লার পথে সাধক স্থিতি
লাভ করে। এই স্থিতিকে বলা হয় মোকাম। সার্বিকভাবে সকল ধরনের স্থিতি বা মোকামকে বলা
হয় মোকাম-মঞ্জিল। স্থিতি লাভের কয়েকটি পথ রয়েছে। এই পথগুলো হলো-
- শরিয়ত: আল্লার পথ
অনুসরণের জন্য স্বাভাবিক এমন কিছু বিধি, যা সবার জন্য স্বাভাবিক আচারানুষ্ঠানের
মধ্য দিয়ে অনুসৃত হয়। এর ভিতর দিয়ে যে স্থিতি লাভের লক্ষ্য তৈরি হয়,
তাকে বলা হয় নাসুত মোকাম। এক্ষত্রে অনুসরণ করতে হয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত অঙ্গীকার।
প্রথাগত অনুষ্ঠানের ভিতরে নামাজ, রোজা, পরিবার ও দায়িত্ব ইত্যাদি। নাসুত মোকামে
মানুষ জাগতিক কাজকর্মের ভিতর দিয়ে, আল্লাহর নির্দেশ পালন করে। এই মোকামের
লক্ষ্য পূরণের জন্য- জাগতিক অসততা, কুটিলতা, অহংবোধ ইত্যাদি ত্যাগ করে তওবার দ্বারা
পরিশুদ্ধ থাকতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে আল্লাহর নির্দেশকে মান্য করা এবং মানুষের
সাথে অন্যায় না করা।
- তরিকত: বৈষয়িক স্বার্থ, লোভ, অহঙ্কার ইত্যাদি বিসর্জন দিয়ে শুধুই আল্লাহর প্রসন্নতা ও নৈকট্য লাভের জন্য
ধ্যান করা এবং আল্লাহর কাছে নিজেকে সমপর্ণ করা। এরূপ ভাবনা এবং সাধনার মধ্য
দিয়ে আল্লাহর পথে যে স্থিতি লাভ হয়, তাকে বলা হয় মলকুত মোকাম। এই সমর্পণ
মানুষকে ফেরেস্তার মতো নিঃস্বার্থ দশায় উন্নীত করা। মূলত তরিকত হলো সাধকের
ফেরেস্তার মতো হয়ে উঠার সাধনা। আধ্যাত্মিক সাধনার এই পর্যায়কে বলা হয়, সাধনার প্রথম
দ্বার।
- হকিকত: জাগতিক সকল জ্ঞানকে তুচ্ছ করে পরিত্যাগ করে, আধ্যাত্মিক জ্ঞানের
দ্বারা নিজেকে সমৃদ্ধ করাই হলো
হকিকত। এক্ষেত্রে সাধকের প্রধান লক্ষ্য হলো আল্লাহর সন্ধান করা। দেহ-মন ও
বাক্যের মধ্য দিয়ে এই জ্ঞানের সন্ধানে যে স্থিতি লাভ হয়, তাকে বলা হয় জবরুত
মোকাম। এই স্থিতি লাভের মধ্য দিয়ে সাধক জাগতিক সকল কিছু ত্যাগ করে নিঃস্বতায়
পৌঁছায় এবং এর মধ্য দিয়ে সাধক জাগতিক সকল চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে যায়। সাধক এই
স্তরে এসে আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জন করে।
- মারফত: এই মঞ্জিলে সাধক তাঁর সকল ইচ্ছাকে আল্লাহর কাছে সম্পর্পণ
করেন। সাধকের সকল দুঃখ-সুখ, আশা-হতাশা ত্যাগ করেন। এর মোকামকে বলা হয় লাহুত।
অহংবোধহীন দশায় সাধক স্রষ্টার লীলা নিজের দেহমনে অনুভব করেন।
এই চারটি স্তরকে সুফি সাধকরা ফানাবিল্লাহ বলে থাকেন।
- হাহুত: একে বলা হয় সর্বশ্বৈরবাদ। এই মঞ্জিলে সাধক সকল কিছুর ভিতরে
আল্লাহকে প্রত্যক্ষ করেন। স্রষ্টা এবং সাধক এমন একটি দশায় উপনীত হন, যার ভিতর
দিয়ে সাধক আল্লাহ এবং নিজের মধ্যে কোনো অভিন্নতা পান না। এই পর্যায়ে সাধক নিজকে
'আনাল হক' বা 'আমিই আল্লাহ' বলে মনে করেন। এই পর্যায়ের অবস্থাকে সুফি সাধকরা
বাকাবিল্লাহ বলে থাকেন।
মঞ্জিলের সকল স্তর অতিক্রম করতে পারলে, আল্লাহ সাধককে সিদ্ধি-ফল দান করেন। একে
বলা হয় হাল।