ধর্ম (দর্শন)
শব্দরূপ দেখুন : ধর্ম (অভিধান)
সংস্কৃত ক্রিয়ামূল
ধৃ । এর ভাবগত অর্থ হলো 'ধারণ করা'। এর সাথে ম (মন্) , প্রত্যয়যোগে সৃষ্টি হয় ধর্ম্ম। আধুনিক বাংলা বানান হলো ধর্ম। ধর্ম শব্দের এই রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মধ্যেই রয়েছে ধর্ম শব্দের মূল সংজ্ঞা।

যে কোনো সত্তার পরিচয় পাওয়া যায়, তার নিজস্ব কিছু গুণাবলির মাধ্যমে। পানি তরল, খুব শীতল হলে বরফ হয়ে যায়, বেশি গরম করলে বায়বীয় রূপ ধারণ করে। এরূপ নানা ধরনের বৈশিষ্ট্য নিয়ে একটি সত্তা তার পরিচয় প্রকাশ করে। যেসব গুণাবলি সত্তা ধারণ, তার সমষ্টিগত নাম হলো ধর্ম। আগুনের ধর্ম থেকে পানির ধর্ম আলাদা বলেই এই দুটি সত্তাকে আলাদা করে চেনা যায়।

প্রকৃতিতে যা কিছু রয়েছে, তার ভিত্তি হলো- জড় পদার্থের রূপান্তরিত দশা হলো- আলো বা তাপের মতো শক্তি। আবার জড় পদার্থের কম্পন থেকে তৈরি হয়- শব্দ নামক শক্তি।

জড়পদার্থের পারমাণবিক পর্যায়ের বিশেষ বিন্যাসের দ্বারা সৃষ্টি হয় জীবাণু। আর জীবাণুর সুবিন্যস্ত বিন্যাসে সৃষ্টি হয়েছে জীবজগতের নানা প্রজাতি।

প্রত্যক্ষ অনুভবের সাথে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে, সত্তার গুণ
( Quality) । সাধারণভাবে বলা যায়, একটি সত্তা যে সকল বৈশিষ্ট্য ধারণ করে, তাই ওই সত্তার বৈশিষ্ট্য বা ধর্ম। এই সূত্রেই আমরা বলে থাকি আগুনের ধর্ম, পানির ধর্ম বাতাসের ধর্ম ইত্যাদি। কিন্তু বস্তুকে অনুভব করা হয়, শুধু এর নিজস্ব গুণ দিয়ে নয়, অন্য কোনো সত্তার কাছে তা কিভাবে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে, তার দ্বারা। এই বিচারে প্রত্যক্ষ সংবেদন হয়ে উঠে কোনো বিশেষ সত্তার দ্বারা অন্য সত্তার অনুভবের বিষয়। এই অনুভবের বিষয়টি নানা ভাবে সংঘটিত হতে পারে।

প্রতিটি সত্তার রয়েছে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্য তাকে অন্য বস্তু থেকে পৃথক করে। এই পার্থক্য সৃষ্টি হয় অন্য সত্তার শনাক্ত করার ক্ষমতার দ্বারা। সত্তার ধর্মের প্রকাশ ঘটে সত্তা এবং সত্তা পর্যবেক্ষকের পারস্পরিক তথ্য-যোগাযোগের সূত্রে। একটি সত্তা যত ধরনের গুণাবলি ধারণ করে, তার সবটুকু পর্যবেক্ষকের কাছে যদি ধরা না পড়ে, তাহলে পর্যবেক্ষক ওই সত্তার ধর্ম সম্পর্কে আংশিক ধারণা করতে পারে মাত্র। সেই কারণে একাধিক ব্যক্তি একই সত্তা একই রকমভাবে অনুভব করতে পারে না। ধরা যাক একটি আলোকিত ঘর। এই ঘরের একটি গুণ হলো আলোকিত দশা। একজন অন্ধলোকের কাছে এই ঘরটির আলোকিত গুণটি ধরা পড়বে না। অন্ধ লোকের বিচারে সবই অন্ধকার। তার অর্থ এই নয়, আলোকিত ঘর হতে পারে না। কোন বর্ণান্ধ মানুষ হয়তো লাল রঙ ধরতে পারে না। সুতরাং একজনের জন্য লাল ফুল, বর্ণান্ধের জন্য তা অন্য রঙের ফুল। সর্দি হলে, আমরা অনেক সময় অনেক গন্ধ পাই না। তার অর্থ এই নয় যে, ওই বস্তুটি তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলেছে। তাই কোনো সত্তার প্রকৃত গুণ কি, সেটা কোনো সুনির্দিষ্ট মান প্রদান করে না। এই বিচারে মানুষ বা মানবেতর প্রাণী বাস্তবে অন্যকোনো সত্তার ধর্ম সম্পূর্ণ জানতে পারে না তার তথ্যগ্রহণের অক্ষমতার কারণে।

কোনো সত্তার ধর্ম যখন কারো কাছে প্রকাশিত হয়, তখন সত্তার কিছু গুণ বা উপলব্ধি-কৃত গুণের মানের বিচার চলে আসে। একই সাথে ইন্দ্রিয়ভিত্তিক বিচারের বিষয়টি চলে আসে। সাধারণভাবে এই জাতীয় বিষয়গুলো যে ভাবে বিচার করা হয়, তাই হবে সত্তার গুণমানের বিচার। যেমন―

যে কোন সত্তার ধর্মের সাথে গভীরভাবে মিশে আছে-বিশ্বাস


সূত্র: