ধর্ম
বানান বিশ্লেষণ:
ধ্+অ+র্+ম্+অ
উচ্চারণ:
d̪ʰɔrm.mo
(ধর্ম্.মো)।
ধর্ম্.মো [ র্ম বিভাজিত হয়ে র্ম্.মো ধর্ম ধ্বনিদ্বয় উৎপন্ন করে। আদি ধ-এর সাথে র্ম যুক্ত হয়ে ধর্ম্ ধ্বনি উৎপন্ন করে। অবশিষ্ট মো ধ্বনি একাক্ষর হিসেবে উচ্চারিত হয়।]
শব্দ-উৎস: সংস্কৃত
धर्म्म (ধর্ম্ম)>বাংলা ধর্ম।পদ: বিশেষ্য
১. ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা { | বিশ্বাস | প্রজ্ঞা | জ্ঞান | মনস্তাত্ত্বিক বিষয় | বিমূর্তন | বিমূর্ত-সত্তা | সত্তা |}
অর্থ:
১.১. মানুষের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণকারী অতিপ্রাকৃতিক শক্তি বা শক্তিসমূহের প্রতি প্রবল বিশ্বাস। এই বিশ্বাস এবং এর থেকে উদ্ভুত বিধানের সমন্বয়ে সৃষ্ট মতবাদ হলো−ধর্ম। (ইসলাম ধর্ম, হিন্দু ধর্ম, খ্রিষ্টান ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম ইত্যাদি)।
ইংরেজি : religion, faith, religious belief।
দেখুন: ধর্ম (দর্শন)১.২. সাধনার দ্বারা সিদ্ধি লাভের কোনো বিশেষ মতবাদ বা প্রথা। (সুফি ধর্ম)।
৩. ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা {| বৈশিষ্ট্য-গুণ | সত্তাগুণ | বিমূর্তন | বিমূর্ত-সত্তা | সত্তা |}
অর্থ: কোনো সত্তা যে বৈশিষ্ট্য ধারণ করে, তার একক বা সমষ্টিগত পরিচয়ের ভিতর দিয়ে ওই সত্ত্বার পরিচয় লাভ করা যায়।
সমার্থক শব্দাবলি: প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্যজাত স্বভাব, নিজস্ব গুণাবলি।
উদাহরণ: আগুনের ধর্ম দগ্ধ করা।
ইংরেজি: quality ।
৪. ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা {| মিতাচার | স্ব-নিয়ন্ত্রণ | নিয়ন্ত্রণ | মনুষ্য কার্যক্রম | ঘটিত বিষয় | মনস্তাত্ত্বিক বিষয় | বিমূর্তন | বিমূর্ত-সত্তা | সত্তা |}
অর্থ: ধর্মীয় দর্শনে স্বামী ছাড়া অন্য পুরুষের সাথে যৌনসংসর্গ থেকে নিজেকে বিরত রাখার নাম সতীত্ব। সতীত্ব বজায় রাখাকে নারীর ধর্মের অন্তর্গত বলে বিবেচনা করা হয়। এই কারণে বাংলাতে কোনো নারীর সতীত্বনাশ শব্দকে ধর্মনাশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সমার্থক শব্দাবলি: ধর্ম, সতীত্ব।
ইংরেজি: chastity, celibacy, sexual abstention
৫. ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা { পৌরাণিক সত্তা | কাল্পনিকসত্তা | কল্পনা | সৃজনশীলতা | দক্ষতা | জ্ঞান | মনস্তাত্ত্বিক বিষয় | বিমূর্তন | বিমূর্ত-সত্তা | সত্তা |}
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনিতে এই নামে দুটি চরিত্র রয়েছে। এঁরা হলেন–১. রাজা বিশেষ, এঁর ধর্মব্রতা নামে একটি কন্যা ছিল।
২. হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে– ধর্মের দেবতা। ব্রহ্মার দক্ষিণ অঙ্গ হতে ইনি উৎপন্ন হন। বরাহ পুরাণের মতে- ব্রহ্মা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে গভীর ধ্যানমগ্ন থাকা অবস্থায় তাঁর দক্ষিণ অঙ্গ হতে ধর্ম আবির্ভূত হন। ব্রহ্মা এই পুরুষকে বলেন- তুমি চতুষ্পদ ও বৃষভাকৃতিরূপে বৃদ্ধি পাও এবং প্রজাপালন কর। এরপর ধর্ম সত্যযুগে চতুষ্পদ, ত্রেতায় ত্রিপদ ও দ্বাপরে দ্বিপদ ধারণ করে প্রজাপালন করেন। কলিতে ইনি একপদী হয়ে প্রজাপালন করবেন। ব্রাহ্মণদের জন্য ইনি তাঁর সম্পূর্ণ অংশ, ক্ষত্রিয়দের জন্য তিনভাগ, বৈশ্যদের জন্য দুইভাগ ও শুদ্রদের জন্য একভাগ দিয়ে এই রক্ষা ও পালন করেন। ধর্মের চারটি পাদ- এগুলি হলো- গুণ, দ্রব্য, ক্রিয়া ও জাতি। বেদে ইনি তৃশৃঙ্গ নামে পরিচিত।
এঁর মাথা দুটি, হাত সাতটি। বামন পুরাণের মতে- ধর্মের স্ত্রীর নাম অহিংসা। এঁর গর্ভে ধর্মের চারটি পুত্র জন্মে। এঁরা হলেন- সন্যকার, সনাতন, সনক ও সনন্দ। মহাভারতের মতে- ইনি কুন্তীর মন্ত্রে আবিষ্ট হয়ে, কুন্তীর সাথে মিলিত হন। ফলে যুধিষ্ঠিরের জন্ম হয়।