কোয়ান্টাম পদ্ধতির বলবিজ্ঞানে এমন কিছু মানকে বিবেচনা করা হয়, যাদেরকে
কোয়ান্টাম সংখ্যা বলা হয়। এই সংখ্যামানগুলো হতে পারে পূর্ণমান (১,২,৩) বা
অর্ধমান (১/২)। বিষয়ানুসারে কোয়ান্টাম সংখ্যার অঙ্ক কমবেশ হতে পারে। এই কারণের
সুনির্দিষ্টভাবে বলা যায় না যে, কতগুলো কোয়ান্টাম সংখ্যা আছে। আধুনিক পরমাণু-বিশ্লেষণে পরমাণুর ইলেক্ট্রনের পরিচয় তুলে ধরা হয় কোয়ান্টাম সংখ্যা দ্বারা। পরমাণুতে ইলেক্ট্রনের পরিচয় তুলে ধরা হয় চারটি মান দ্বারা। এই মানগুলোকে বলা হয়— প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা, সহকারী কোয়ান্টাম সংখ্যা, চৌম্বকীয় কোয়ান্টাম সংখ্যা ও চক্রণ কোয়ান্টাম সংখ্যা। |
|||||||||||||||||||
১. প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা
(principal
quantum number: n) পরমাণুর নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে এক বা একাধিক ইলেক্ট্রন আবর্তিত হয়। পরমাণুভেদে ইলেক্ট্রনের সংখ্যার কম-বেশি লক্ষ্য করা যায়। এই পরমাণুগুলো কেন্দ্র থেকে কিছু দূরে কক্ষপথ ধরে আবর্তিত হয়। পরামণুতে যদি ১টি ইলেক্ট্রন থাকে তবে ওই ইলেক্ট্রন কেন্দ্রের নিকটেই একটি কক্ষ পথ তৈরি করে ঘুরতে থাকে। যেমন— হাইড্রোজেন পরমাণু। কোনো পরমাণুতে দুটি ইলেক্ট্রন থাকলে তখনো ওই কক্ষপথেই দুটি ইলেক্ট্রন নিউক্লিয়াসকে আবর্তন করে। যেমন— হিলিয়াম। কিন্তু কোনো পরমাণুতে ৩টি ইলেক্ট্রন থাকে, তখন দুটি ইলেক্ট্রন প্রথম কক্ষপথে থাকবে, বাকি একটি আর একটু দূরে দ্বিতীয় কক্ষপথ তৈরি করে নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকবে। যেমন- লিথিয়াম।
পরমাণুভেদে ইলেক্ট্রনের সংখ্যার
হেরফের রয়েছে। সংখ্যাধিক্যের বিচারে ইলেক্ট্রনগুলো ভিন্ন ভিন্ন কক্ষপথে
বিন্যস্ত থাকে। কক্ষপথের স্তরগুলোকে বলা হয় শক্তিস্তর। যেমন—নিউক্লিয়াসের
নিকটবর্তী কক্ষপথকে বলা হয় প্রথম শক্তিস্তর, পরবর্তী কক্ষপথকে বলা হয়
দ্বিতীয় শক্তিস্তর। প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যার সঙ্কেত হলো
n।
এক্ষেত্রে
n
-এর হতে পারে
শক্তিস্তর ১, ২, ৩। বর্তমানে কোয়ান্টাম সংখ্যার মান অঙ্কবাচক সঙ্কেতের
পরিবর্তে কতকগুলো রোমান বর্ণ দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এই বর্ণগুলো হলো— |
|||||||||||||||||||
২.
সহকারী কোয়ান্টাম সংখ্যা (azimuthal
quantum number:
l) বোরের মতে পরমাণুর নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ইলেক্ট্রন আবর্তিত হয় বৃত্তাকার পথে। ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে আর্নল্ড সোমারফিল্ড (Arnold Sommerfeld) বোরের মতবাদের সংশোধন করে বলেন যে, সকল ইলেক্ট্রন বৃত্তাকার পথে আবর্তিত হয় না, কোনো কোনো ইলেক্ট্রন উপবৃ্ত্তাকার পথেও আবর্তিত হতে পারে। কক্ষপথটি বৃত্তাকার না উপবৃত্তাকার হবে, তা বুঝানোর জন্য সোমারফিল্ড সহাকারী কোয়ান্টাম সংখ্যা উপস্থাপন করেন। এই সংখ্যার প্রতীক l । একে বলা হয় উপশক্তি স্তর। এই উপস্তরগুলোকে s, p, d, f দ্বারা প্রকাশ করা হয়। সহকারী কোয়ান্টাম সংখ্যার মান l , প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যার মান n -এর উপর নির্ভরশীল। যেমন— যদি n=1 হয়, তবে l=0 হবে। আবার যদি n=2 হয় তবে l=0,1 হবে। কিন্তু যদি n=3 হয় তবে l=0,1, 2 হবে। নিচের সারণীতে এর একটি তালিকা দেওয়া হলো।
১ম কক্ষপথে n=1
হয়,
তবে
l=0
হবে। উপ-শক্তিস্তর হবে
1s |
|||||||||||||||||||
৩.
চুম্বকীয় কোয়ান্টাম সংখ্যা (Magnetic
quantum number: m) কোনো পরমাণু বাইরের কোনো চুম্বকক্ষেত্র দ্বারা প্রভাবিত হলে, সৃষ্ট বর্ণালী সূক্ষ্মতর রেখায় বিভাজিত হয়ে যায়। ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে বিজ্ঞানী জীম্যান এই বিষয়টি উপস্থাপন করেন। এই কারণে পরামণুর উপর চুম্বকীয় প্রভাবকে বলা হয় জীম্যান প্রভাব (Zeeman effect)। মূলত চুম্বকীয় প্রভাবে ইলেক্ট্রনের কৌণিক অবস্থানের বিন্যাস ঘটে। এবং এই বিষয়টি ঘটে উপবৃত্তাকার কক্ষে আবর্তিত ইলেক্ট্রনকে প্রভাবিত করে। এর কোয়ান্টাম সংখ্যা হলো m। যেহেতু উপবৃত্তাকার কক্ষপথে আবর্তিত ইলকে্ট্রনের উপর এর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়, তাই এর সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি হয় সহকারী কোয়ান্টাম সংখ্যা l-এর। নিচের সারণীতে উভয় কোয়ান্টাম সংখ্যার সম্পর্ক তোলে ধরা হলো।
|
|||||||||||||||||||
৪. চক্রণ
কোয়ান্টাম সংখ্যা (Spin
quantum number: s) পরমাণু কক্ষপথে ইলেক্ট্রন আবর্তিত হওয়ার সময়, ইলেক্ট্রনগুলো নিজ অক্ষের উপর আবর্তিত হয়। ইলেক্ট্রনের আবর্তনকে ইলেক্ট্রনের চক্রণ বলা হয়। এর কোয়ান্টাম মান হলো s। ইলেক্ট্রন ঘড়ির কাঁটার দিকে বা ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘুরতে পারে। এই চক্রণের দিকের উপর নির্ভর করে, ইলেক্ট্রনকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। ১. ঘড়ির কাঁটার
দিকে ইলেক্ট্রন আবর্তিত হলে, তা ধনাত্মক মান (+) হবে। যেমন―
+১ আবার কণিকাটির
চক্রণ যদি হয় ২, তাহলে আগের রূপে নিতে একে ১/২টি পূর্ণ-আবর্তন (১৮০
ডিগ্রী) করতে হবে, অর্থাৎ এক্ষেত্রে কণিকাটি দেখতে দুইপ্রান্তে
তীরচিহ্নযুক্ত সরলরেখাংশ বলে মনে করা যেতে পারে। ইলেক্ট্রনের চক্রণমান
১/২। পাউলর বর্জনবিধি অনুসারে একই কক্ষে একই চক্রণমান যুক্ত ইলেক্ট্রন একই কক্ষে থাকতে পারে না। চক্রণমানের এই বিচার শুধু ইলেক্ট্রনের জন্য প্রযোজ্য হয় না। এই মান পরমাণুর যেকোন মৌলিক কণার জন্য হতে পারে। এই চক্রণমানের উপর ভিত্তি করে, মৌলিক কণাগুলোকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন ১. যদি কণার পূর্ণ আবর্তন হয়,
তবে তার আবর্তন মান হবে ১। তখন এই কণাগুলোকে বলা হবে বোসন। |
|||||||||||||||||||
সূত্র http://en.wikipedia.org/wiki/Angular_momentum_quantum_number" বাংলা একাডেমী বিজ্ঞান বিশ্বকোষ। ১ম-৪র খণ্ড। |