মূলধারকে বলা হয় সকল নাড়ির
মিলনক্ষেত্রে। মূলাধারের কেন্দ্রে
অবস্থিত এই মিলনবিন্দুটির নাম হলো-কুন্দস্থান। তন্ত্রমতে মানবদেহের জননেন্দ্রিয় ও গুহ্যদেশের
মাঝখানে কুন্দস্থানের অবস্থান। এই কুন্দস্থান থেকে ইড়া, পিঙ্গলা,
সুষুম্না, কুহূ, শঙ্খিনী প্রভৃতি প্রধান প্রধান নাড়িগুলো উৎপন্ন হয়েছে।
তান্ত্রিকরা
মনে করেন মূলধারকে একটি কুণ্ডের মতো। একে সাঙ্কেতিক ভাষায় বলা হয় 'লং'।
এই বিশেষ স্থানটি ত্রিকোণাকার। এই ত্রিকোণাকার স্থানকে অনেক সময় যোনির সাথে কল্পনা করা হয়ে থাকে। এর অপর নাম
শক্তিপীঠ। এই কুণ্ডের মতো ত্রিকোণাকার লং-এর ভিতরে শিবলিঙ্গস্বরূপ একটি
দণ্ডকে ঘিরে মহাশক্তি ঘুমিয়ে থাকে। এই ঘুমন্ত মহাশক্তিকে বলা হয় কুণ্ডলিনী।
তন্ত্রমতে কুণ্ডলিনী সাড়ে তিন পাকে শিবলিঙ্গস্বরূপ দণ্ডকে অবলম্বন করে ঘুমায়। এই
মহাশক্তিতে তিনটি চক্র গঠিত হয়ে ত্রিভুবনের শক্তিরূপে এবং বাকিটুকু বায়ুশক্তি।
হিন্দু তন্ত্রমতে— শরীরের পদ্মসূত্রের
মতো সূক্ষ্ম আদ্যাশক্তি ও প্রাণশক্তির মূল
কুলকুণ্ডলিনী শক্তি কুন্দস্থানে ঘুমিয়ে
আছেন। সেই মত অনুসরণ করে যোগীরা এই কুণ্ডলিনী শক্তিকে জাগরিত করে সিদ্ধিলাভ করার
চেষ্টা করে থাকেন।
এই ত্রিকোণাকার শক্তিপীঠটি রয়েছে চারটি পাপড়িযুক্ত পদ্মফুলের ভিতরে। এই পাপাড়িতে
রয়েছে চারটি বর্ণ। এগুলো হলো- বং, শং, ষং এবং সং। সাঙ্কেতিক এই বর্ণগুলোর অর্থ হলো-
বং- বায়ু, শং-আকাশ, ষং-বৃদ্ধি এবং সং-মন। তন্ত্রমতে প্রতিদিন ২১৬০০
বার শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এই শ্বাসপ্রশ্বাসের এই ক্রিয়াকে বলা হয়
'অজপা'।
অপান বায়ু নিচের দিকে এর
উপর চাপ প্রয়োগ করে, তখন জীব শ্বাস ত্যাগ করে। আর যখন এই চাপ তুলে নেওয়া হয়, তখন
জীব শ্বাস গ্রহণ করে। কুলকুণ্ডলিনীর প্রাণশক্তিই সুষম্নার ভিতর দিয়ে ঊর্ধ্ব দিকে
গমন করে এবং শেষ পর্যন্ত তা মস্তিষ্কে প্রবেশ করে।
কুণ্ডলিনীকে জাগরিত করার উপায় হিসেবে স্বামী বিবেকানন্দ বলেন- 'প্রাণায়ামের পূর্বে
ঐ ত্রিকোণ মণ্ডলকে ধ্যানে দেখবার চেষ্টা কর। চোখ বন্ধ করে এঁর ছবি মনে মনে
স্পষ্টরূপে কল্পনা কর। ভাবো এর চার পাশে আগুনের শিখা, তার মাঝখানে কুণ্ডলীকৃত সর্প
ঘুমিয়ে রয়েছে। ধ্যানে যখন কুণ্ডলিনীশক্তি স্পষ্টভাবে দেখতে পাবে তখন কল্পনায় তাকে
মেরুদণ্ডের মূলাধারে স্থাপন কর; এবং তাকে অনুভব করার চেষ্টা কর। প্রাণায়ামসহ
বিভিন্ন মুদ্রা ও বন্ধন অভ্যাস কালে কুম্ভকে শ্বাস রুদ্ধ রাখার সময় সুপ্ত
কুণ্ডলিনীকে জাগাবার জন্যে ঐ রুদ্ধ বায়ু সবলে তার মস্তকে নিক্ষেপ করবে। যার কল্পনা
শক্তি যত বেশি সে তত শীঘ্র ফল পায়, আর তার কুণ্ডলিনীও তত শীঘ্র জাগেন। যতদিন তিনি
না জাগেন ততদিন কল্পনা কর- তিনি জাগছেন। আর ইড়া ও পিঙ্গলার গতি অনুভব করার চেষ্টা
কর, জোর করে তাদের সুষুম্না পথে চালাতে চেষ্টা করো- এতে কাজ খুব তাড়াতাড়ি হবে। মনের
সংযমের দ্বারাই কল্পনা করা সম্ভব।'
তন্ত্রমতে মূলাধারের বীজ হলো- লং, দেবতা ব্রহ্ম, অধিদেবতা গণেশ, বীজের বাহন ঐরাবত, শক্তি ডাকিনী।