অগ্নিপূজা
অগ্নি নামক শক্তিকে দেবতা হিসেবে পূজা করা।
প্রাকৃতিকভাব উৎপন্ন আগুনের সাথে মানুষ পরিচিত হয়েছিল আগ্নেয়গিরির জ্বলন্ত
লাভাস্রোত, দাবানল, বজ্রপাত ইত্যাদির মাধ্যমে। তবে প্রাক্-মানব গোষ্ঠীর
প্রজাতিসমূহের কাছে আগুন ছিল শুধুই প্রাকৃতিক ভয়ঙ্কর শক্তি। এরা আগুন জ্বালানো বা
এর নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল আয়ত্ব করতে পারে নি। প্রায় ২৬ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে
পাথরকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার আদিম কৌশল উদ্ভাবন করেছিল হোমো হ্যাবিলিসরা।
নানা ধরনের পাথুরে অস্ত্র তৈরি করার সময় এরা লক্ষ্য করেছিল, প্রস্তরখণ্ডে আঘাত করলে
আগুনের ফুলকি বেড়িয়ে আসে। এই স্ফুলিঙ্গ শুকনো ঘাস জাতীয় দ্রব্যাদিতে পতিত হলে, তা
জ্বলে উঠে। প্রাকৃতিক এই ঘটনাকে অনুসরণ করে এরা আগুন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল।
অচিরেই এরা আগুনের নানাবিধ গুণের সাথে পরিচিত হয়ে উঠেছিল। প্রাধমিক পর্যায়ে এরা
আগুনকে তিনটি উদ্দেশ্যে ব্যবহার শুরু করেছিল। এরপর
হোমো গণের পরবর্তী প্রজাতিসমূহের মধ্যে আগুনের
ব্যবহার ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছিল। তারপরেও আদিম মানুষ তথা
হোমো স্যাপিয়েন্সরা-দের আবির্ভাবের আগের প্রজাতিগুলোর
ভিতরে আগুনের ব্যবহার ছিল- তিনটি ক্ষেত্রের ভিতরে সীমাবদ্ধ। এগুলো ছিল- মাংস
পুড়িয়ে খাওয়ার জন্য আগুনের ব্যবহার, শীতের প্রকোপ থেকে
রক্ষা পাওয়ার জন্য আগুনের ব্যবহার
এবং হিংস্র পশুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আগুনের
ব্যবহার।
হোমো স্যাপিয়েন্সরা- আগুনের ব্যবহারকে সম্প্রসারিত করেছিলে।
আদিম মানুষ
আগুনের তাপ ও আলো দেওয়ার ক্ষমতাকে ভয় এবং শ্রদ্ধা করতে শিখেছিল। বিশেষ
করে অগ্ন্যুৎপাৎ, বজ্রপাত, দাবানলের মতো প্রাকৃতিক ঘটনায় আগুনের লৌকিক ভয়ঙ্কর রূপ দেখে,
এর ভিতরে অলৌকিক শক্তি কল্পনা করেছিল। এই সূত্রে সৃষ্টি হয়েছিল অগ্নি দেবতা।