ফিফা
ফুটবল বিশ্বকাপ (পুরুষ),
২০তম আসর: ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ
২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের বিশ্বকাপ ফুটবলের লোগো |
১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে
Federation Internationale de Football Association।
সংক্ষেপে FIFA(ফিফা)
কর্তৃক প্রবর্তিত পুরুষদের জন্য
'বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা'র
২০তম আসর। ২০১৪
খ্রিষ্টাব্দের ১৩ জুন
থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
আয়োজক: ফিফা পর্যায়ক্রমিকভাবে মহাদেশভিত্তিক ২০১৪
খ্রিষ্টাব্দের স্বাগতিক দেশের জন্যে দক্ষিণ আমেরিকাকে নির্ধারণ করেছিল। এর আগে
ফিফা
ঘোষণা দিয়েছিল যে, প্রতিবারের
'বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা'র
আয়োজন দেশ হবে
মহাদেশভিত্তিক। এই সিদ্ধান্ত অনুসারে, কলম্বিয়া আয়োজক হওয়ার দাবি তুললেও পরে
তারা প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে। অন্যদিকে ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে কোরিয়া-জাপানের
সফলভাবে বিশ্বকাপ সমাপণের পর, চিলি এবং আর্জেন্টিনা যৌথভাবে স্বাগতিক দেশ হওয়ার
আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু যৌথ ডাক প্রক্রিয়া অগ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা বাতিল
হয়ে যায়। ইতিমধ্যে ব্রাজিল স্বাগতিক দেশ হবার জন্যে আগ্রহ প্রকাশ করলে,
দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল ফেডারেশন কনমেবল ব্রাজিলকে স্বাগতিক হবার জন্যে সমর্থন
জানায়। ফলে ব্রাজিল একমাত্র দেশ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে কনমেবলের মাধ্যমে
ডিসেম্বর, ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে ডাক প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠুভাবে সমাপণের জন্যে
প্রস্তাবনা পাঠায়। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ অক্টোবর, ফিফা নির্বাহী পরিষদ
স্বাগতিক দেশ হিসেবে ব্রাজিলের নাম ঘোষণা করে। উল্লেখ্য, এর আগে ব্রাজিলে এই
আসর বসেছিল ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে।
বিশ্বকাপে
ব্রাজিলের প্রতিবন্ধকতা
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিরোধী দলের বিক্ষোভ
চলছিল। এই পর্যায়ে বিশ্বকাপ ফুটবল বর্জনের জন্য বিরোধী দলের মানুষ বিক্ষোভ ও
ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছিল। এই কারণে খেলাগুলো শান্তিপূর্ণভাবে হবে কিনা, তা নিয়ে
বিশ্ববাসীর শঙ্কা ছিল। এ বিষয়ে ব্রাজিলের প্রখ্যাত প্রাক্তন খেলোয়ার
এবাং ফিফা বিশ্বকাপে ব্রাজিলের স্থানীয় আয়োজক কমিটির প্রধান রোনাল্ডো মন্তব্য
করেছিলেন−
'বিক্ষোভ-ধর্মঘট, আন্দোলন কিছুই থাকবে না। ব্রাজিলের মানুষের মনে রং ধরবে,
বিশ্বকাপ ফুটবল উন্মাদনার।' শেষ পর্যন্ত রোনাল্ডোর উক্তি সত্য হয়। সামান্য কিছু
উত্তেজনা ছাড়া, সমগ্র ব্রাজিল শান্তই ছিল। প্রথম দিকে ব্রাজিলে যে বিশ্বকাপ
ফুটবলের মতো পৃথিবীর সেরা আয়োজন অনুষ্ঠিত হচ্ছে বোঝার উপায় ছিল না। বাড়ি-ঘরের
জানালা, ছাদে ব্রাজিলের জাতীয় পতাকা চোখে পড়লেও সাধারণ মানুষের মধ্যে কোন
মাতামাতি ছিল না । এমনকি বিশ্বকাপের ময়দানী লড়াই শুরুর আগেরদিন পর্যন্ত।
মানুষের উচ্ছ্বাস পাওয়া যায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে
ব্রাজিলের জয়ের পরে। অলি-গলিসহ হাইওয়ে, সর্বত্র মানুষের ঢল এবং উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে
পড়ে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান:
২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই জুন বৃহস্পতিবার, বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা ১৫
মিনিটে, ব্রাজিলের সাও পাওলোতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়। শেষ হয় ১২টা ৪০ মিনিটে।
ব্রাজিলিয়ানদের ঐতিহ্যবাহী নাচ-গান আর সাংস্কৃতিক অয়োজনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। বিশ্ব দর্শকরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেন তাদের
পরিবেশনা।২৫ মিনিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শেষের দিকে জেনিফার লোপেজ, র্যাপার
পিটবুল ও ক্লদিয়া লেইতের গাওয়া অফিশিয়াল থিম সং 'ওলে ওলা' গানের মাধ্যমে
অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়।
বিশ্বকাপ
মাস্কট
এবারের বিশ্বকাপের মাসকট ব্রাজিলীয় তাতু-বলা। শিকারিদের হাত থেকে বাঁচতে
বলের মত করে গুটিয়ে যায়কে তাতু-বলা হয়। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বরে
স্থানীয় আয়োজক কমটি কর্তৃক আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে এটিকে নির্বাচিত করা হয়।
এর নকশা প্রণয়নে ছয়টি ব্রাজিলীয় সংস্থা অংশগ্রহণ করে। এদের দাখিলকৃত ৪৭টি
নকশার ভিতর থেকে একটি নির্বাচিত করা হয়। বিজয়ী নকশাটির কোনো নাম ছিল না।
মাসকটটির নামকরণে জন্য ভোটের আয়োজন করা হয়। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে নভেম্বর ৪৮
শতাংশ ভোটে (১৭,০০,০০০ ভোট) বিজয়ী হয় পর্তুগিজ শব্দ ফুলেকো (Fuleco)।
উল্লেখ্য পর্তুগিজ Futebol
(ফুটবল) এবং Ecologia
(বাস্তুসংস্থান) শব্দদ্বয়ের সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে
Fuleco।
বিশ্বকাপের বল
যথারীতি
এবারও জার্মান ক্রীড়া সামগ্রী উৎপাদক প্রতিষ্ঠান এ্যাডিডাস এবারের বিশ্বকাপের
বল তৈরির দায়িত্ব পায়। উল্লেখ্য ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এই কোম্পানি বিশ্বকাপের
জন্য বল তৈরি করে আসছে। এ্যাডিডাস ব্রাজিলের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বিবেচনায়
ব্রাজুকা,
বোসা নোভা ও কার্নাভালেস্কা
নাম তিনটি প্রস্তাব
করেছিল। পরে ব্রাজিলীয়দের কাছে নাম বেছে নেওয়ার জন্য ভোটের আয়োজন করা হয়। প্রায়
৭০ শতাংশ ভোটে শেষ পর্যন্ত বাজুকা নামটি গৃহীত হয়। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে এই বলের
নাম ঘোষণা করা হয় এ্যাডিডাস বাজুকা।
যদিও বল সরবরাহ করবে এ্যাডিডাস। কিন্তু বল তৈরি করবে পাকিস্তান। শুরুতে বল
নির্মাণে চীনের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হওয়ায়, পাকিস্তানের শিয়ালকোটের
ফরোয়ার্ড স্পোর্টস বল তৈরির দায়িত্ব পায়। এই বলটি এ্যাডিডাসের
'এ্যাডিডাস টাঙ্গো'-এর ১২
সিরিজের উন্নত সংস্করণ। এতে একই ধরনের ব্লাডার ও আবরণ থাকলেও এর বাইরে পৃথক
বহিরাবরণ ছিল। প্রবল বৃষ্টিপাতের ভিতরেও বলের আকার এবং ওজনের পরিবর্তন হয় নি।
চার বছর পূর্বেকার বিশ্বকাপে ব্যবহৃত আডিডাস জাবুলানি বলের চেয়েও অধিক পরিমাণ
বাতাসে বাঁক নেয়েছে।
২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের অংশগ্রহণকারী
দেশসমূহ
এই বিশ্বকাপে ফিফার স্বীকৃত ফুটবল সংগঠনগুলো থেকে যে সকল দল স্থান পেয়েছে তার
তালিকা দেওয়া হলো। এর পাশে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত
|
|
|
দেখুন: খেলার দল, তারিখ, সময় ও স্থান তালিকা
২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ফিফার ব্যয়।
এই বিশ্বকাপে ফিফার বাজেটে রয়েছে প্রায় ৫৭,৬০,০০,০০০ মার্কিন ডলার। এর
ভিতরে প্রধান খরচ রয়েছে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী দলের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ।
যেমন-
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দল প্রায় ৮০,০০,০০০ মার্কিন ডলার
বিজয়ী দল পাবে ৩,৫০,০০,০০০ মার্কিন ডলার
রানার-আপ ২,৫০,০০,০০০ মার্কিন ডলার
কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে যাওয়া দলগুলো পাবে ১,৪০,০০,০০০ মার্কিন ডলার।
১৬ দলের পর্বে হেরে যাওয়া দলগুলো পাবে ৯০,০০,০০০ মার্কিন ডলার
বিশ্বকাপ আসরের জন্য ক্লাব থেকে বিদায় নেওয়ার সময় খেলোয়াড়রা যেসব ক্লাবে খেলে থাকেন, সেসব ক্লাবকে খেলোয়াড়দের বীমা এবং অন্যান্য খরচ বাবদ দেওয়া হবে ৭,০০,০০,০০০ মার্কিন ডলার।
২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের অংশগ্রহণকারী ৩২টি দেশের দল বিভাজন
গ্রুপ এ: ব্রাজিল, ক্রোয়েশিয়া, মেক্সিকো ও ক্যামেরুন
গ্রুপ বি: স্পেন, নেদারল্যান্ড, চিলি ও অস্ট্রেলিয়া
গ্রুপ সি: কলম্বিয়া, গ্রিস, কোৎ দিভোয়ারা ও জাপান
গ্রুপ ডি: উরুগুয়ে, কোষ্টারিকা , ইংল্যান্ড ও ইতালিগ্রুপ ই: সুইজারল্যান্ড, ইকুয়েডর, ফ্রান্স ও হন্ডুরাস
গ্রুপ এফ: আর্জেন্টিনা, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, ইরান ও নাইজেরিয়াগ্রুপ জি: জার্মানি, পর্তুগাল, ঘানা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
গ্রুপ এইচ: বেলজিয়াম, আলজেরিয়া, রাশিয়া, ও দক্ষিণ কোরিয়া।
নক-আউট পর্ব
প্রথম পর্ব উত্তীর্ণ ১৬টি দল
৪৯তম দল: গ্রুপ এ বিজয়ী বনাম গ্রুপ বি রানার-আপ
৫০তম দল: গ্রুপ সি বিজয়ী বনাম গ্রুপ ডি রানার-আপ
৫১তম দল: গ্রুপ বি বিজয়ী বনাম গ্রুপ এ রানার-আপ
৫২তম দল: গ্রুপ ডি বিজয়ী বনাম গ্রুপ সি রানার-আপ
৫৩তম দল: গ্রুপ ই বিজয়ী বনাম গ্রুপ এফ রানার-আপ
৫৪তম দল: গ্রুপ জি বিজয়ী বনাম গ্রুপ এইচ রানার-আপ৫৫তম দল: গ্রুপ এফ বিজয়ী বনাম গ্রুপ ই রানার-আপ
৫৬তম দল: গ্রুপ এইচ বিজয়ী বনাম গ্রুপ জি রানার-আপ
কোয়ার্টার ফাইনালে উত্তীর্ণ ৮টি দলকোয়ার্টার ফাইনাল: ৪৯ বিজয়ী বনাম ৫০ বিজয়ী : ৫৭তম দল
কোয়ার্টার ফাইনাল: ৫১ বিজয়ী বনাম ৫২ বিজয়ী : ৫৮তম দল
কোয়ার্টার ফাইনাল: ৫৩ বিজয়ী বনাম ৫৪ বিজয়ী : ৫৯তম দল
কোয়ার্টার ফাইনাল: ৫৫ বিজয়ী বনাম ৫৪ বিজয়ী : ৬০তম দল
সেমিফাইনালে উত্তীর্ণ ৪টি দল
৫৭তম দল বনাম ৫৮তম দল : ৬১তম দল
৫৯তম দল বনাম ৬০তম দল : ৬২তম
ফাইনাল
৬১তম দল বনাম ৬২তম দল