হেক্সাগ্রাম
গ্রিক  Hexa (ছয়) gram (কোণ)>ইংরেজি Hexagram>বাংলা হেক্সাগ্রাম

ছয়টি কোণাযুক্ত  তারকা চিহ্ন। দুটি ত্রিভুজ পরস্পরকে বিপরীত মুখী করে স্থাপন করলে হেক্সাগ্রাম তৈরি হয়। এর বাইরের ছয়টি ত্রিভুজের ছয়টি বাইরের কোণাগুলো একত্রে ছয়কোণা তারায় পরিণত করে। এর বাইরের ছয়টি কোণাকে বাদ দিলেও এর ভিরে একটি হেক্সাগ্রাম পাওয়া যায়।

এই প্রতীকের অভ্যন্তরীণ কোণ ১২০। অভ্যন্তরীণ মোট কোণের পরিমাণ ৭২০। এর ক্ষেত্রফল
3Ö3/2´a2 (পার্শ্ব রেখা=a)।

লেনিনগ্রাড কডেক্স, ১০০৮ খ্রিষ্টাব্দ

ধর্মদর্শন ও দাউদের তারা
দাউদ (আঃ)-এর ইংরেজি বানান
(David), হিব্রু ভাষায় রচিত বাইবেলে এই নামটির বানান লিখা হয়- D- W-D হিসাবে। গ্রিক ভাষায় D বর্ণটিকে বলা হয় ডেল্টা, এর প্রতীক Δ। দুটি ডেলটা চিহ্ন কোণাকুণিভাবে পরস্পরের উপর স্থাপন করে হেক্সাগ্রাম তৈরি সূচিত হয়েছিল পাশ্চাত্য জগতে। এই কারণে হেক্সাগ্রামকে অনেক সময় দাউদ (আঃ)-এর প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইহুদীদের ভিতর ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের প্রতীক হিসাবে হেক্সাগ্রাম ব্যবহার করা হয়।

জ্যোতির্বিজ্ঞানে এই চিহ্নকে ‘রাজার তারা’ বলা হয়। ইহুদি মতে এটি ‘দাউদের তারা’। কোনো কোনো খ্রিষ্টান গির্জায় এই চিহ্ন ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। ইহুদি ধর্মের শুরুর দিকে এই চিহ্ন তাবিজ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। তাদের কাছে এটা ছিল বিভিন্ন অলৌকিক বা অতিপ্রাকৃতিক ক্ষতি থেকে রক্ষা-কবজ। ১০০৮ খ্রিষ্টাব্দে হিব্রু বাইবেল 'লেলিনগ্রাড কোডেক্স'-এ।

অনেক সময় এই চিহ্ন পোশাকে এবং কার্পেটের নকশা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে অলঙ্করণ বা সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য মূল চিহ্নের সাথে আরও কিছু যুক্ত হয়। যেমন
লেনিনগ্রাড কডেক্স-এর নকশাটিতে কিছু লেখা যুক্ত করা হয়েছে।

ইস্রায়েলের পতাকা

আধুনিক কালে ইস্রায়েল এই চিহ্নটি ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় চিহ্ন হিসেবে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়। ইস্রায়েলের পতাকায় এই চিহ্নটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এছাড়া ইস্রায়েলে বিভিন্ন সরকারি নথিপত্রে, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়। অনেকে রক্ষা কবজ হিসেবে গলায় লকেটের মতো ঝুলিয়ে রাখেন। ইস্রায়েলের আতীয় চিকিৎসা সেবামূলক (Magen David Adom ) প্রতিষ্ঠানের কর্মী, এম্বুলেন্সে, চিকিৎসা সেবামূলক বাক্স ইত্যদিতে এই চিহ্ন ব্যবহার  লক্ষ্য করা যায়। এক্ষেত্রে এই চিহ্নটি লাল রঙে প্রকাশ করা হয়।

হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের মণ্ডল প্রতীক

প্রাচীন ভারতের হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এই প্রতীককে, মণ্ডল প্রতীকের চিহ্ন হিসেবে ব্যবহার করতো। এই চিহ্ন সাধনা করার আসনে অনেক সময় ব্যবহার করা হতো। এই মণ্ডলের চক্রাকার অবয়বের কেন্দ্রে রাখা হতো ছয়কোণা তারা। আর এর কেন্দ্রে ছিল একাধিক বৃত্ত পরিবেষ্টিত চক্র। মণ্ডলকে অনেক সময় বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে বুঝানো হতে। আর এর কেন্দ্র ছিল মেরুশৃঙ্গ। বৌদ্ধরা মণ্ডলের বাইরের বৃত্তকে জ্ঞানচক্র নামেও অভিহিত করেন।

অনেক সময় হেক্সাগ্রামকে সাধারণভাবে আল্পনা হিসেবে ব্যবহার করেন সৌন্দর্য সৃষ্টির জন্য। এই বিচারে কোনো স্থাপনায় এই চিহ্ন ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। এছাড়া গণিতে 'স্টার অফ ডেভিড থিয়োরাম'-এ এ চিহ্নের বিশেষ ব্যবহার করা হয় সূত্র-প্রকাশ চিহ্ন হিসেব।