বেকা রেকর্ড
জার্মান রেকর্ড কোম্পানির প্রস্তুতকৃত এবং বাজারজাত রেকর্ড।
এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জার্মানির দুই ব্যবসায়ী- হেনরিচ বুম্ব
এবং ম্যাক্স কোয়েনিগ। এঁদের দুই জনের নামের
Heinrich Bumb
এবং
Max Koenig
থেকে
BK
নেয়া হয়েছিল। পরে
কোম্পানি লেবেলে এই নামটি হয়ে যায়
Beka।
ম্যাক্স কোয়েনিগ ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে এডিসন
ফোনোগ্রাফস এবং সিলিন্ডার রেকর্ড বিক্রয়ের প্রতিষ্ঠান হিসেবে একটি কোম্পানি
প্রতিষ্ঠিত করেন।
১৯০২ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে বুম্ব এবং কোয়েনিগ জোনফোন
টকিং মেশিন এবং ডিস্ক রেকর্ড বাজারজাত করা
শুরু করেন। কিন্তু
Gramophone & Typewriter Ltd.
জোনফোন টকিং মেশিন কোম্পানি কিনে নিলে,
বুম্ব এবং কোয়েনিগ
নিজেরাই একটি রেকর্ড কোম্পানি খুলে বসে। এই নতুন কোম্পানির নাম দেওয়া হয়েছিল- জি.এম.বি.এইচ
(G.M.b.H.)
।
১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে এই রেকর্ড প্রথম প্রকাশিত হয়। এই সময় যুক্তরাজ্যে এই কোম্পানি
গ্রামোফোন রেকর্ড কোম্পানির জন্য রেকর্ড তৈরি করেছে। তখন এর নাম ছিল
Beka-Grand Records।
এই রেকর্ড তৈরি হয়েছিল জার্মানী থেকে। ভারতীয় শিল্পীদের পরিবেশিত গানগুলোও প্রকাশিত
হতো জার্মানী। ভারতে এই রেকর্ডটগুলো আমদানী করতো টকিং ম্যাসিন এন্ড ইন্ডিয়ান রেকর্ড
কোম্পানি।
১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে এরা জার্মানির বাইরে ইউরোপে তাঁদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করেন এবং
তুরস্ক এবং মিশরে বাজার দখলের চেষ্টা করেন।
১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দের দিকে এই কোম্পানির নতুন নামকরণ করা
হয়-
Beka Record G.M.b.H।
এই কোম্পানিটি তাদের এই নতুন নামটি প্রকাশ করে বার্লিনে। প্রথম দিকে এরা রেকর্ড বিক্রয়ে বেশ সাফল্য পেয়েছিল। তবে
সারা পৃথিবী ব্যাপী গ্রামোফোন এবং টাইপরাইটার, লিমিটেড, আন্তর্জাতিকভাবে
খ্যত টকিং মেশিন CoM.b-H এর (ওডেন রেকর্ড), নিকোল রেকর্ড কোম্পানির
রেকর্ডের সাথে পাল্লা দিয়ে ব্যবসা করাটা বেশ দুরূহ ছিল। তারপরেও এই কোম্পানি চেষ্টা
করেছিল বিশাল প্রচারণায় নেমেছিল। এই প্রচারণার এঁরা
প্রথমে ইস্তাম্বুল যান এবং সেখান থেকে কায়রো
ভ্রমণ করেন। এরপর এঁরা ভারতের উদ্দেশ্য রওনা দেন।
১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে,
'BEKA RECORD'
লেবেলে রেকর্ড প্রকাশ করে। এই সময় এঁদের রেকর্ড তালিকায় প্রায়
এক হাজার রেকর্ডকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বেকা রেকর্ডের প্রকাশিত প্রথম রেকর্ডের
রিলিজটি ৮ ইঞ্চি, ১০ ইঞ্চি এবং ১১ ইঞ্চি আকারের। রঙ ছিল
সাদা এবং সাগরনীল বর্ণের। এর লেবেল তৈরি করা হয়েছিল রেকর্ড
শ্রবণযন্ত্রের সাথে শ্রবণরত ফ্লমিঙ্গো পাখি। এই বছরের ৫ অক্টোবর,
হেইনরিখ বম্ব এবং উইলহিম হ্যাডার্টের তাঁদের রেকর্ড বাজারজাত করার জন্য নতুন অভিযানে নামে।
এক্ষেত্রে তাদের লক্ষ্য ছিল নতুন ১০০ নতুন রেকর্ড প্রকাশ করা।
১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ নভেম্বর এঁরা বোম্বাইতে পৌঁছে,
প্রথমে এসপ্ল্যানেড হোটেলে উঠেছিলেন। এঁরা তাঁদের
রেকর্ডের প্রচারের জন্য ভালভদাস রুনচোরদাস এবং লক্ষ্মীদাস
নামক স্থানীয় রেকর্ড ব্যবসায়ীর শরণাপন্ন হন। কারণ এঁরা দুজন ১৯০২ খ্রিষ্টাব্দের
ডিসেম্বর মাসে ভারতে 'দ্য টকিং মেশিন এবং ইন্ডিয়ান রেকর্ড কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
এঁদের অফিস ছিল বোম্বের দুর্গ এলাকার চার্চগেট স্ট্রিট এবং তামারিন্দ গলিতে। ১৯০৫
খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই কোম্পানি- এডিসন, প্যাথ এবং কলম্বিয়া ফোনোগ্রাফ
বিক্রয় করতো। মূলত এই কোম্পানি ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দের দিকে
দূর-প্রাচ্যে একটি স্বনামধন্য বাণিজ্যক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল।
বোম্বেতে কিছুদিন কাটিয়ে এঁরা রেলপথে কলকাতায় আসেন। এখানে তাঁদের সহায়তা করেছিলেন-
আবদুল হামিদ গজনভী নামক একজন রেকর্ড ব্যবসায়ী। কলকাতা থেকে
এঁরা যান রেঙ্গুনে। তারপরে ব্যাংক, সিঙ্গাপুর, হংকং এবং টোকিওতে
যান। সেখান থেকে ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দের জুনের মাঝামাঝি সময়ে বার্লিনে ফিরে।
১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে বেকা কোম্পানির পরিচালক
Ernest lowe
-এর নেতৃত্বে
ভারতে আসেন ভারতীয় শিল্পীদের গানের রেকর্ড করার জন্য। এবারের অভিযাত্রায় এঁরা
রেকর্ড করেন বোম্বাই, লক্ষ্ণৌ, বেনারস এবং কলকাতায়। এরপর এইও দলটি রেঙ্গুন,
ব্যাঙ্কক ও সিঙ্গাপুরে রেকর্ড করার জন্য চলে যান। এই সময়ে রেকর্ডগুলো বাজারজাত
করেছিল'দ্য টকিং মেশিন এবং ইন্ডিয়ান রেকর্ড কোম্পানি
এই সময়ে এদের কেন্দ্রীয় অফিস ছিল বোম্বেতে। আর শাখা অফিস
ছিল কলকাতা, দিল্লী, মাদ্রাজ এবং রেঙ্গুন।
১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে গ্রামোফোন কোম্পানি কলকাতার শিলাইদহে একটি
রেকর্ড ফ্যাক্টরি স্থাপন করে। এর ফলে ক্রেতার হাতে অল্প সময়ের ভিতরে রেকর্ড পৌছে
দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। যদিও বেকা কোম্পানি বার্লিন থেকে নিয়মিত রেকর্ড সরবরাহ করতো,
কিন্তু
গ্রামোফোন কোম্পানি স্থানীয়ভাবে রেকর্ড উৎপাদনের জন্য বিশেষ সুবিধাজনক
অব্স্থায় পৌঁছে যায়।
১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে বেকা রেকর্ড কোম্পানির প্রতিনিধি আবার নতুন রেকর্ড প্রকাশের জন্য
ভারতে আসে। এদের এই কার্যক্রম ১৯১১ অব্দি চলেছিল। এই সময়ের ভিতরে ৩ হাজার রেকর্ড
করেছিল। এর ভিতরে ছিল নতুন রেকর্ড এবং পুরানো রেকর্ডের পুনঃপ্রকাশ। এই সময় ৮ ইঞ্চি
রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল 'বেকা রেকর্ড' নামে এবং বেকা গ্রাউন্ড রেকর্ড নামে প্রকাশিত
হয়েছিল ১০ ইঞ্চি পরিমাপে।
১৯১০ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে বেকা রেকর্ড জি.এম.বি.এইচ এবং বার্লিনের ফিরট্জ
পাপ্পেল জি.এম.বি.এইচ একীভূত হয়ে যায়। এর মাসখানেক পরে এই মিলিত রেকর্ড কোম্পানি
ওডেন রেকের্ড কোম্পানির নিয়ন্ত্রক কার্ল লিন্ডস্ট্রোম কিনে নেন। এই সময় থেকে টকিং
ম্যাশিন এবং ইন্ডিয়ান রেকর্ড কোং ভারতে বেকা রেকর্ড, ওডেন রেকর্ড এবং জাম্বো রেকর্ড
বাজারজাত করা শুরু করেছিল। অক্টোবর মাসে সান ডিস্ক রেকর্ড ভারতের বাজারে প্রবেশ করে।
এরা খুব কম দামে উভয়-পার্শ্ব রেকর্ড বাজারজাত করা শুরু করে। এদের রেকর্ডের দাম ছিল
মাত্র ২ টাকা। অবশ্য
গ্রামোফোন
কোম্পানি জোনোফোন রেকর্ড একই দামে রেকর্ড বিক্রয় শুরু
করেছিল। এই সময়ে জার্মানির তৈরি
PHON-O-PHON
রেকর্ডও অল্প দামে বাজারজাত করা হয়েছিল।
নানা ধারণের রেকর্ডের প্রতিযোগিতায় ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দ বেকা গ্রান্ড রেকর্ড বেশ
দাপটের সাথে বাণিজ্য করতে সক্ষম হয়েছিল এবং এই দাপট ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ প্রথমাংশ
পর্যন্ত। ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দের দিকে প্রায় ৩ হাজার রেকর্ড এদের তালিকায় ছিল।
১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে
কলাম্বিয়া রেকর্ড,
এই বেকা
রেকর্ডে স্বত্ব ক্রয় করে। এরপর থেকে এই বেকা রেকর্ড বিলুপ্ত হয়ে যায়।
সূত্র:
- কবিকণ্ঠ ও কলের গান/সন্তোষকুমার দে। বিশ্বভারতী। মার্চ ১৯৯৩
-
বাঙালির কলের গান/আবুল আহসান চৌধুরী। বেঙ্গল পাবলিকেশান্স লিমিটেড
-
Michael S. Kinnear.The Record
News July 1961
-
https://bajakhana.com.au/tag/miss-malka-jan/