সিনো-তিব্বতীয় ভাষা পরিবার
ইংরেজি : Sino-Tibetan Language Family

এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি ভাষা পরিবার। আদ্য প্রাগ্ সিনো-তিব্বতীয় ভাষা পরিবার (Proto Sino-Tibetan Language Family) থেকে এই ভাষা পরিবারের উদ্ভব ঘটেছে। হিমালয়ের পিকিং মানবগোষ্ঠীর (হোমো এরেক্টাস) উত্তরসূরী এবং হোমো স্যাপিয়েন্স (আধুনিক মানুষ) - ভাষার সংমিশ্রণে এই ভাষা পরিবারের আদি রূপ সৃষ্টি হয়েছিল। এরা বসবাস করতো চীনের ইয়াংজি, হুয়াং হো প্রভৃতি নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে। খ্রিষ্ট-পূর্ব ৪০০০ অব্দের দিকে প্রাগ্ সিনো-তিব্বতীয় ভাষা পরিবারের মানুষ চীন এবং অন্যান্য দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ফলে অঞ্চলভেদে এই আদি ভাষা থেকে নানা ধরনের ভাষার উদ্ভব ঘটে। এদের একটি দল মূল চীন ভূখণ্ডে স্থায়ীভাবে রয়ে যায়। এদের অপরাপর অংশ, চীনের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সেই সূত্রে সৃষ্ট অরাজকতার কারণে, খ্রিষ্টপূর্ব ২১০ অব্দের দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার, বিভিন্ন অংশে এবং ভারতের হিমালয় সংলগ্ন অঞ্চলে চলে আসে। তিব্বতের দিকে চলে আসা জনস্রোত হিমালয়ের উচ্চভূমিতে বসতি স্থাপন করে। অন্যদিকে এদের অপর দল মেকং নদী, মায়ানমারের ইরাবতী নদী তীরগুলোতে বসতি স্থাপন করে। এদের একটি দল খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে চীন-মায়ানমার সীমান্তের শান অঞ্চলে (বর্তমানে শান মায়ানমারের একটি প্রদেশ) এসে বসতি স্থাপন করেছিল। শান অঞ্চলের আদিবাসীরা এই নবাগতদের খুব ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারে নি। কিন্তু সংখ্যাধিক্যের কারণে এদেরকে উৎখাতও করতে পারে নি। শান অঞ্চলে এরা প্রায় ৩০০ বৎসর বসবাস করে।

খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০ অব্দের দিকে পরে এদের একটি শাখা ভারতের মণিপুর এবং মায়ানমার সীমান্তের নিকটবর্তী কাবাও উপত্যাকায় চলে আসে এবং সেখানে বসতি স্থাপন করে। এই সময় মায়ানমারের আদিবাসী হিসেবে বিবেচিত বার্মিজদের সাথে সম্প্রীতি গড়ে উঠে এবং উভয় জাতির ভাষা এবং সংস্কৃতি উভয়ের দ্বারা প্রভাবিত হয়। এরপর এদের একটি শাখা মায়ানমারের স্যাগায়িং প্রদেশের খ্যাম্পাট অঞ্চলে প্রবেশ করে। খ্রিষ্টীয় ১৪শ শতকের মধ্যভাগে এরা মায়ানমারের চীন প্রদেশের চীনা পাহাড়ের ভারত সীমান্ত বরাবর বসতি স্থাপন করে।  খ্রিষ্টীয় ১৬শ শতকের দিকে বর্তমান ভারত প্রজাতন্ত্রের মায়ানমার সংলগ্ন অঞ্চলে তিনটি ধাপে প্রবেশ করে। ভারতবর্ষে প্রথম যে মিজোরা প্রথম প্রবেশ করেছিল, তারাকে কুকি বলা হয়। ভারতে প্রবেশকারী এই জাতি গোষ্ঠীর দ্বিতীয় দলকে নব্য কুকি নামে অভিহিত করা হয়। আর এই জাতি সত্তার সর্বশেষ যে দলটি ভারতে প্রবেশ করেছিল, তাদেরকে অভিহিত করা হয় লুসাই নামে। কুকি, নব্য কুকি এবং লুসাইদের সম্মিলিত নাম হলো মিজো।

বর্তমানে এই ভাষা পরিবারের লোকের বাসবাস করে থাকে চীন, ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার, নেপাল, থাইল্যান্ড, ভিয়েৎনাম. লাওস, মালোয়েশিয়ার বিভিন্ন অংশে।  এই পরিবারের মোট ভাষার সংখ্যা ৪৬১টি। এই ভাষাকে দুটি উপ-পরিবারে বিভাজিত করা হয়েছে। এই ভাগ দুটি হলো            
            
১. চীনা উপ-পরিবার (ভাষা সংখ্যা ১৪)

             ২.
তিব্বত-বর্মীয় (ভাষা সংখ্যা ৪৪৭)


সূত্র :
http://stedt.berkeley.edu/about-st#Chinese
http://www.ethnologue.com/subgroups/central-37