বোনোবো শিম্পাঞ্জি
ইংরেজি নাম :
Bonobo
Chimpanzee।
গণ :
Pan।
বৈজ্ঞানিক নাম :
Pan paniscus
Schwarz, 1929
Hominidae
গোত্রের
অন্তর্গত একটি
Pan
নামক
গণ-এর দুটি প্রজাতির একটি। অপর
প্রজাতিটির নাম
সাধারণ
শিম্পাঞ্জি
। উভয় প্রজাতির ভিতরে
বোনোবো শিম্পাঞ্জি আকারে অপেক্ষাকৃত ছোটো। এই অঞ্চলের পিগমি নৃগোষ্ঠীর নাম থেকে এই
শিম্পাঞ্জিকে অনেক সময় পিগমি শিম্পাঞ্জি বলা হয়। নামকরণ করা হয়েছে।
Hominidae গোত্রের প্রাণিকূলের মূল ধারা থেকে গরিলা (Gorilla) নামক গণ পৃথক হয়ে যায় ৭০ লক্ষ বৎসর আগে। এরপর ৬০ লক্ষ বৎসর আগে এই গোত্রের মূলধারা পুনরায় বিভাজিত হয়ে প্যান গণের উদ্ভব হয়। আর মূল ধারা থেকে আধুনিক মানুষ (হোমো স্যাপিয়েন্স) সৃষ্টি হয় দুই লক্ষ বৎসর আগে। প্রায় এই কারণে শিম্পাঞ্জিকে মানুষের অধিকতর নিকটবর্তী জ্ঞাতি ধরা হয়। এরা আফ্রিকার কঙ্গো অঞ্চল ও মধ্য আফ্রিকার জঙ্গলে বসবাস করে।
এই প্রজাতির শিম্পাঞ্জির মুখমণ্ডল এবং হাত পায়ের তালু ছাড়া সমস্ত শরীর বড় বড় কালো লোমে ঢাকা। তবে পুরুষ শিম্পাঞ্জির মাথার চুলের পরিমাণ কম থাকে। পুরষ শিম্পাঞ্জির এদের ওজন ৩৪-৬০ কেজি। স্ত্রী শিম্পাঞ্জির গড় ৩০ কেজি। এদের দেহের মাথা থেকে দেহের পশ্চাৎদেশ পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ২৮ ইঞ্চি থেকে ৩৩ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে। দুই পায়ে দাঁড়ানো অবস্থায় এদের উচ্চতা দাঁড়ায় প্রায় ৪৫ ইঞ্চি।
এই
শিম্পাঞ্জি মানুষের মতো সম্মুখভাগে যৌনক্রিয়া করে। যৌন প্রক্রিয়া চলার সময় এরা
মানুষের মুখ-চুম্বন করে। মানুষ ছাড়া যৌনক্রিয়ার এই প্রক্রিয়া অন্য প্রাণীর দেখা
যায় না। এরা প্রায়ই যৌনসঙ্গী বদলায়। স্ত্রী শিম্পাঞ্জির ভগাঙ্কুর মানুষের চেয়ে
প্রায় তিনগুণ বড়। অনেক সময় দুটি শিম্পাঞ্জি গাছে পা ঝুলিয়ে পরস্পরে পুরুষাঙ্গে
হস্তমৈথুন করে।
৮ মাস গর্ভধারণের স্ত্রী শিম্পাঞ্জি একটি
শাবক প্রসব করে। প্রায় তিন বৎসর এরা মায়ের দুধ খায়। এই সময়ে শাবকগুলো মায়ের
দেহের সাথে প্রায় লেপ্টে থাকে। তিন বৎসর পর শাবকগুলো স্বাধীনভাবে চলাফেরা শুরু
করলেও মায়ের সাথে থাকে আরও ৫-৭ বৎসর। এরপর এরা স্বাধীনভাবে জীবন-যাপন শুরু
করলেও শিম্পাঞ্জির দলের সদস্য হিসেবে থাকে। এদের গড় আয়ু প্রায় ৫০ বৎসর।
সাধারণ শিম্পাজিদের দলে শিশু, বৃদ্ধ মিলে
প্রায় ১৫ থেকে ১৫০ সদস্য থাকে। এরা সামাজিক জীবন-যাপন করে। দলের নেতা থাকে কোনো
পুরুষ শিম্পাঞ্জি। রাত্রি বেলায় উঁচু গাছের উপরে ডালাপালা দিয়ে শোয়ার জায়গা
তৈরি করে ঘুমায়। কখনো কখনো বড় গাছের খোঁড়লের ভিতর ঘুমায়। এদের নিজস্ব বাসা বলে
কিছু নেই কিন্তু দলগত এলাকা আছে।
এরা গাছের পাতা, ফল, মধু ইত্যাদি আহার করে। এক্ষেত্রে এরা গাছের ডাল, পাথর
ইত্যাদি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। অনেক সময় এরা লেপার্ডের শাবক হত্যা
করে খায়। কখনো কখনো দলবদ্ধভাবে আক্রমণ করে লাল কলোবাস বানর (Piliocolobus
badius) শিকার করে খায়।
বর্তমানে এদের প্রধান শত্রু হলো- পশুশিকারী মানুষ। এছাড়া আফ্রিকান চিতা কখনো কখনো এদের হত্যা করে। এছাড়া নিউমেনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হুপিং কাশি, যক্ষা, পীতজ্বর, এইডস জাতীয় রোগে বহু শিম্পাঞ্জি মারা যায়। আফ্রিকার অরণ্যভূমি গাছপালা কমে যাওয়ার জন্য প্রতিকূল পরিবেশে এই শিম্পাজির সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।