আব্দুল
আহাদ
(১৯২০-১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দ)
সুরকার, কণ্ঠশিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালক।
১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে
রাজশাহী জন্মগ্রহণ করেন। তবে তাঁর পৈত্রিক নিবাস ছিল ফরিদপুর
জেলার ভাঙ্গা থানার অন্তরর্গত ফুকুরহাটি গ্রাম। তাঁর
পিতা আব্দুস সামাদ খান ছিলেন শিক্ষা বিভাগের কর্মচারী। চাকরির জন্য তাঁর পিতাকে
নানা জায়গায় থাকতে হয়েছে। সেই কারণে, তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা একই স্থানে সম্পন্ন
হয় নি।
তিনি প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ নিয়েছিলেন পাবনাতে। পরে তিনি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে
ভর্তি হন। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে এই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। এরপর তিনি
কলকাতার সিটি কলেজে আইএ-শ্রেণিতে ভর্তি হন। এই সময় তিনি কলকাতার কারমাইকেল হোস্টেলে
থাকতেন। প্রাথমিকভাবে তিনি জমিরুদ্দীন খাঁর ছেলে বালির কাছে কিছুদিন গান শেখেন।
এরপর তিনি ওস্তাদ মঞ্জুসাহেবের কাছে রাগ সঙ্গীতের তালিম নেন।
১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে নাহার দের সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় তিনি গজলে প্রথম এবং ভজনে দ্বিতীয়
স্থান লাভ করেন।
১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে ভূপেন ঘোষের আয়োজিত সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় তিনি ঠুমরি ও গজল গানে
প্রথম হন।
১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সরকারি বৃত্তি পেয়ে তিনি শান্তিনিকেতনে ভর্তি হন। উল্লেখ্য
শান্তিনিকেতনের সঙ্গীতভবনে তিনিই প্রথম বাঙালি মুসলমান ছাত্র ছিলেন।
১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে শান্তনিকেতনে একটি যন্ত্রসঙ্গীতদের দল গঠন করেন। শান্তিনিকেতনের
উত্তরায়েণে নবাগত শিক্ষার্থীদের গানের অনুষ্ঠানে 'দিনের পর দিন যে গেল' গান গেয়ে
রবীন্দ্রনাথের আশীর্বাদ লাভ করেন।
১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে শান্তিনেকতনের পাঠ শেষ করে, তিনি কলকাতার গ্রামোফোন রেকর্ড
কোম্পানীতে রবীন্দ্রসঙ্গীতের ট্রেনার হিসেবে যোগদান করেন। এই সময় তাঁর প্রশিক্ষণে
পঙ্কজকুমার মল্লিক 'সঘন গহন রাত্রি' এবং তুমি কি কেবলি ছবি' গান দুটি রেকর্ড করা
হয়। এই সময় তিনি কলকাতা বেতারে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করতেন। এর পাশাপাশি তিনি
আধুনিক গানে সুরারোপ করা শুরু করেন। সে সময়ে তাঁর সুরারোপিত এবং সন্তোষ সেনগুপ্তের
গাওয়া অনেক গান জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এর ভিতরে উল্লেখযোগ্য গান ছিল 'তুমি আমি দুই তীর
সুগভীর তটিনীর' এবং 'সে পথ ধরি আস নাই, আস নাই তুমি'।
১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের ২০ ডিসেম্বর হিমাদ্রী চৌধুরীর [মূল নাম:
ওবায়েদ উল হক] পরিচালিত
দুঃখে যাদের জীবন গড়া'
ছবি মুক্ত পায়। এই ছায়াছবির তিনি সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে পাক-ভারত বিভাজনের পর, ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি
ঢাকাতে চলে আসেন
এবং ঢাকা বেতারে সঙ্গীত প্রযোজক হিসেবে যোগদান করেন। এই সময় থেকে দীর্ঘকাল তিনি
বেতারে সঙ্গীত শিক্ষার আসর পরিচালনা করেন। এর পাশাপাশি তিনি এই সময় বহু গানের সুর
দেন। এর ভিতরে উল্লেখযোগ্য গান ছিল 'এই বাংলার সবুজে শ্যামলে', আমার দেশের মাটির
গন্ধে', পূর্ব বাংলার শ্যামলিকা', 'দুর্গম এ যাত্রা পথে', 'জীবন এমন সুর পেয়েছে',
কালোর তিমিরে এসেছে আলোর পায়রা', আমি সাগরের নীল', আমি তো আমার গল্প বলেছি', 'অনেক
বৃষ্টি ঝড়ে তুমি এলে', সঙ্গীতা যদি ডাকে' ইত্যাদি। এই সময় তিনি বেশকিছু চলচ্চিত্রের
সঙ্গীত পরিচালনা করেন। এর ভিতরে 'সালামত', 'নবারুণ', 'আসিয়া' ও 'দূর হ্যায় মুখ কা
গাঁও' উল্লেখযোগ্য।
রেডিওর নিয়মিত কাজ এবং চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা ইত্যাদির বাইরে তিনি ছায়ানট,
বুলবুল ললিতকলা একাডেমী এবং শিল্পকলা একাডেমীতে সঙ্গীতশিক্ষক হিসেবে পাঠদান করেছেন।
১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকা আর্টস কাউন্সিলের পরিষদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।
১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে স্পেন সরকারের বৃত্তি নিয়ে মাদ্রিদের কনজারভেটরিও অব মিউজিক-এর
প্রশিক্ষণে যোগদান করেন। সেখানে স্প্যানিশ সঙ্গীতের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পাকিস্তান টেলিভিশন কর্পোরেশনের সিগনেচার টিউন তৈরি করেন।
১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে ঐক্যতান নামক গানের দলের সংগঠক হিসেবে যুক্ত হন।
১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে ইরানে অনুষ্ঠিত 'ইন্টারন্যাশনাল আর্ট ফেস্টিভ্যাল'-এ যোগদান
করেন।
১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে কলিম শরাফীর সাথে 'আমার সোনার বাংলা' গানটি সেকালের বিশিষ্ট
শিল্পীদের দিয়ে রেকর্ড করান। এই রেকর্ডটি প্রকাশ করেছিল ই.এম.আই।
১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে কানাডায় অনুষ্ঠিত 'ওয়ার্ল্ড মিউজিক উইক-এ যোগদান করেন।
১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটেনের 'ব্রিষ্টল মিউজিক ফেস্টিভ্যাল'-এ যোগদান করেন।
১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে ভারতে অনুষ্ঠিত রবীন্দ্রনাথের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উৎসবে যোগদান
করেন।
১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সম্মাননা
১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে 'তঘমা-ই-ইমতিয়াজ' পদক পান।
১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে 'সিতারা-ই-ইমতিয়াজ' খেতাব পান।
১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে 'স্বাধীনতা পুরস্কার' পান।
১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে 'কাজী মাহবুববউল্লাহ' পুরস্কার পান।
১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে 'নাসির উদ্দীন স্বর্ণপদক-১৯৮৪' লাভ করেন।
প্রকাশনা :
গণচীনে চব্বিশ দিন, নব দিগন্তের গান' সিন্ধু দেশের সঙ্গীত (অনুবাদ), আসা যাওয়ার
পথের ধারে।