রাজশাহী জেলা
ইংরেজি :
Rajshahi District

বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগের একটি জেলা।
স্থানাঙ্ক : ২৪০৭/ -২৪৪৩/  উত্তর অক্ষাংশ ৮৮১৭/ -৮৮৫৮/দ্রাঘিমাংশ।
অবস্থান: এর উত্তরে নওগাঁ  এবং চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলা, পূর্বে নাটোর জেলা, দক্ষিণে কুষ্টিয়া জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ

এর আয়তন ২৪০৭.০১ বর্গকিলোমিটার বর্গকিমি। এই জেলার ৯টি উপজেলা নয়টি। এই ইউনিয়নগুলো হলো
পবা, গোদাগাড়ী, ভানোর, মোহনপুর, বাগমারা, পুঠিয়া, দুর্গাপুর, চারঘাট ও বাঘা।  থানা ১৩টি (মেট্রোপলিটন এলাকায় ৪টি)। ১টি সিটি কর্পোরেশন। এই জেলার ইউনিয়ন ৭১টি, পৌরসভা ১৪টি, মৌজা ১,৭১৮টি এবং গ্রাম ১,৯১৪টি।

 

নাটোরের রাণী ভবানীর শাসনামল পর্যন্ত নাটোর শহরের দক্ষিণ পাশ দিয়ে প্রবাহিত হতো স্রোতস্বিনী নারদ নদ। পরবর্তীকালে নদের গতিমুখ বন্ধ হয়ে গেলে সমগ্র শহর এক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে নিপতিত হয়। এই শহরে পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থার একমাত্র সংযোগস্থল ছিল নারদ নদ। কালক্রমে এই নদ অচল হয়ে পড়লে শহরের পরিবেশ ক্রমাগত দূষিত হয়ে পড়ে । ইংরেজ শাসকরা সেজন্য জেলাসদর নাটোর থেকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে । প্রিংগল ১৮২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে এপ্রিল জেলাসদর হিসাবে পদ্মানদীর তীরবর্তী রামপুর-বোয়ালিয়ার নাম উল্লেখ করে প্রস্তাবনা পেশ করেন। উল্লেখ্য সেন বংশের রাজা বিজয় সেন-এর সময়, তাঁর রাজ্যের রাজধানী বর্তমান রাজশাহী শহর থেকে মাত্র ৯ কিমি দূরে অবস্থিত ছিল। মধ্যযুগে বর্তমান রাজশাহী পরিচিত ছিল রামপুর-বোয়ালিয়া নামে । এর সূত্র ধরে এখনও রাজশাহী শহরের একটি থানার নাম বোয়ালিয়া। ১৮২৫ খ্রিষ্টাব্দে নাটোর থেকে জেলা সদর রামপুর-বোয়ালিয়াতে স্থানান্তরিত হয়। জেলা সদর স্থানান্তরের পর ইংরেজ সরকার মহকুমা প্রশাসনের পরিকাঠামো তৈরি করে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী নাটোরকে রাজশাহী জেলারা মহকুমা করা হয়।

১৮২৯ খ্রিষ্টাব্দে উত্তর বঙ্গের বিশাল অংশ নিয়ে গঠিত হয়েছিল একটি বিভাগ তৈরি করা হয়।  সে সময় এই বিভাগের সদর দফতর ছিল মুর্শিদাবাদ। ১৭৭২ খ্রিষ্টাব্দে রাজশাহী জেলা গঠন করা হয় এবং সেই সূত্রে রাজশাহী ধীরে ধীরে গুরুত্বপূর্ণ শহরে পরিণত হয়। তখন রাজশাহী ছিল মুর্শিদাবাদ বিভাগের অন্তর্গত।


১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দে গঠিত হয় রাজশাহী পৌরসভা। কয়েক বছর পর বিভাগীয় সদর দপ্তর বর্তমান রাজশাহী শহরের রামপুর-বোয়ালিয়া মৌজায় স্থানান্তরিত হয়। ব্রিটিশ রাজত্বের সময়েও রাজশাহী বোয়ালিয়া নামে পরিচিত ছিল। রাজশাহীকে সে সময়ে রেশম চাষের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছিল। তখন রাজশাহীতে একটি সরকারী কলেজ ও রেশম শিল্পের জন্য একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়। ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে বিভাগীয় সদর দপ্তর স্থানান্তরিত হয় জলপাইগুড়িতে।


১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই জুনের ভয়াবহ ভূমিকম্পে রাজশাহী শহরের বেশীরভাগ ভবন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। ১৮৯৭-১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে দিনাজপুর জেলার দক্ষিণ অংশে অবস্থিত মহাদেবপুর থানা রাজশাহীতে স্থানান্তরিত হয়।

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে পাক-ভারত বিভাজনের পর তদানীন্তন পূর্ব-পাকিস্তানের বিভাগে পরিণত করা হয় এবং এই বিভাগের সদর দফতর রাজশাহী শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময় রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলো ছিল
কুষ্টিয়া, খুলনা, দিনাজপুর, পাবনা, বগুড়া, যশোহর, রংপুর, রাজশাহী।


১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে রাজশাহী বিভাগের খুলনা, কুষ্টিয়া, যশোর এবং ঢাকা বিভাগের বরিশাল জেলা কর্তন করে খুলনা বিভাগ গঠন করা হয়। ফলে রাজশাহী বিভাগের জেলার সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচটি। এই জেলগুলো ছিল
দিনাজপুর, পাবনা, বগুড়া, রংপুর ও রাজশাহী 


১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে এই রাজশাহী জেলার ৪টি মহকুমাকে জেলাতে পরিণত করা হয়। এই জেলাগুলো হলো
রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
 

এই জেলার প্রশাসনিক শহরের নাম রাজশাহী। এটি উত্তরবঙ্গের প্রধান শহর। শহরটি পদ্মানদীর তীরে অবস্থিত।  বাংলাদেশের প্রাচীনতম জাদুঘর হচ্ছে রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর। ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই নভেম্বর বাংলার তৎকালীন গভর্নর লর্ড কারমাইকেল এটি উদ্বোধন করেন। রাজশাহী রেশমীবস্ত্র, আম, লিচু এবং মিষ্টান্নসামগ্রীর জন্য প্রসিদ্ধ। রেশমীবস্ত্রের কারণে রাজশাহীকে রেশমনগরী নামে ডাকা হয়।
 

রাজশাহী জেলাকে শিক্ষা নগরী বলা হয়। এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, একটি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়, একাধিক ঐতিহ্যবাহী কলেজ (রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী নিউ ডিগ্রী কলেজ, রাজশাহী মহিলা কলেজ), কারিগরী মহাবিদ্যালয় সহ আরও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

রাজশাহীর উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

দর্শনীয় স্থান


সূত্র :
http://www.rajshahi.gov.bd