সৈয়দ মোহাম্মদ আহসান, ভাইস এডমিরাল
(১৯২০- ?)
পাকিস্তানের
নৌবাহিনী প্রধান, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে প্রাক্তন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর।
১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর
মাসে ব্রিটিশ-ভারতের হায়দ্রাবাদে জন্মগ্রহণ করেন।
উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের লেখাপড়া শেষ করেন হায়দ্রাবাদের নিজাম কলেজে থেকে।
১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ব্রিটিশ শাসনাধীন
রাজকীয় ভারতীয় নৌবাহিনীতে যোগ দেন।
১৯৩৮-১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তরাজ্যে দুই বছর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আরাকানে এক নৌযুদ্ধে সাহসিকতার জন্য, ব্রিটিশ সরকার তাঁকে
‘ডিসটিংগুইশ্ড সার্ভিস ক্রস’ অ্যাওয়ার্ড পুরস্কার প্রদান করেন। যুদ্ধের পরে তিনি ইংল্যান্ডের লিভারপুলে
একটি টেকনিক্যাল স্কুলে ইনস্ট্রাক্টর নিযুক্ত হন।
১৯৪৬-১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভারতের ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেনের এডিসি ছিলেন।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর এডিসি হন।
১৯৫৫-৫৬ খ্রিষ্টাব্দে ওয়াশিংটনে পাকিস্তান দূতাবাসে তিনি নৌবাহিনীর অ্যাটাসে
হিসেবে ছিলেন।
১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সিতারা-ই-কায়েদে আযম উপাধি পান।
১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পাকিস্তান নৌবাহিনীর রিয়ার এডমিরাল পদে উন্নীত হন।
১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব পাকিস্তান অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান
হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সিয়াটো (ব্যাঙ্ককে) সেনাবাহিনীর ডেপুটি চীফ
প্ল্যানিং অফিসার হিসেবে কাজ করেন।
১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তান নৌবাহিনীর
প্রধান হন।
১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে ভাইস-এডমিরাল পদে উন্নীত হন।
১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে মার্চ সেনাবাহিনী প্রধান আগা মুহাম্মদ ইয়াহিয়া খান
সামরিক আইন জারি করলে, তিনি অন্যতম সামরিক আইন প্রশাসক এবং প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা
পরিষদের সদস্য নিযুক্ত হন।
এই বছরেই তিনি
সিতারা-ই-পাকিস্তান এবং হিলাল-ই-কায়েদে আযম খেতাবে ভূষিত হন। এই বছরের ১লা
সেপ্টেম্বর তিনি পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ৭ ও ১৭ ডিসেম্বর
জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে।
এরপর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিবর্তে,
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১লা মার্চ জাতীয় সংসদের আসন্ন অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য
স্থগিত ঘোষণা করেন। ফলে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে
প্রচন্ড বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।
এই সময় পাকিস্তানি সেনানায়করা হত্যা ও ধ্বংসের ভিতর দিয়ে, পূর্ব-বাংলাকে দমন করার
জন্য
অপারেশন সার্চ লাইট
নামক একটি অভিযানের পরিকল্পনা করে।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২২ ফেব্রুয়ারি
মাসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চস্তরের কর্মকর্তাদের ভিতরে এই অভিযানের প্রাথমিক আলোচনা হয়।
এর ভিতরে ছিলেন সৈয়দ মোহাম্মদ
আহসান, পূর্বাঞ্চলীয় এয়ার কমান্ডার মিট্টি মাসুদ এবং অন্যান্য সামরিক অফিসার।
এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল-
-
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে
মার্চের মধ্যে পূর্ব-পাকিস্তানের বড় বড় শহরগুলোকে সামরিক নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আনা
-
এরপর এক মাসের মধ্যে সকল
বিরোধী রাজনৈতিক দল অথবা সামরিক শক্তি নির্মূল করে ফেলা।
-
এই উদ্দেশ্য সফল করার জন্য
সেনাবাহিনীকে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের অবাধ ক্ষমতা দেওয়া
এই সময় পূর্ব পাকিস্তানের
পূর্ব-পাকিস্তানের গভর্নর
জিওসি লেফট্যান্ট জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খান এবং পূর্ব পাকিস্তানের
ভাইস
এডমিরাল সৈয়দ মোহাম্মদ আহসান,
পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের উপর সামরিক হামলার বিরোধিতা করেন। এই বিরোধিতার
কারণে উভয়কে তাঁদের পদ থেকে অপসারণ করা হয়।
এবং প্রাদেশিক সামরিক প্রশাসক লে.জে. সাহেবজাদা
ইয়াকুব খানকে গভর্নরের দায়িত্ব দেন।
সূত্র: বাংলাপেডিয়া