'...এক ব্রাহ্মণ যুবতির সহিত আন্টুনির অবৈধ প্রণয় সংঘটিত হয়; সেই যুবতি কুলত্যাগিনী হইলে, আন্টুনির ফরাশডাঙায় বাস করা ভার হইয়া উঠে; তখন তিনি সেই যুবতিকে লইয়া গরিটি গ্রামে আসিয়া বাস করিতেন। আজও তাঁহার সেই বাটীর ভগ্নাবশেষ বর্তমান রহিয়াছে। এইরূপ কথিত আছে, সেই কুলত্যাগিনী ব্রাহ্মণ-কন্যা, ম্লেচ্ছ-ভোগ্যা হইলেও, হিন্দুধর্মানুমোদিত আচার-ব্যবহার যথাসম্ভব প্রতিপালন করিত, এবং তাহারই অনুরোধে আন্টুনিকে হিন্দুর দুর্গোৎসবাদি পূজা-পার্বণ অনুষ্ঠান করিতে হইত।'
হিন্দু ধর্মানুষ্ঠানে যাওয়া-আসার সূত্রে বা বৈবাহিক সূত্রে তিনি হিন্দু ধর্মের পৌরাণিক কাহিনি সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন। এই সময় জনপ্রিয় কবিগান দেখার সূত্রে এই গানের প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি সে সময়ের প্রখ্যাত বাধনদার গোরক্ষনাথের শিষ্য হন এবং কবিগানের রীতিনীতি সম্পর্কে অবহিত হন। প্রথম দিকে তিনি একটি সখের দল তৈরি করেন। পরে তাঁর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেলে, তিনি একটি পেশাদারী কবি গানের দল তৈরি করেন। এই সময়ের প্রায় সকল গানই রচনা করে দিতেন গোরক্ষনাথ। কোনো এক দুর্গা পূজার সময়, চুঁচুড়ার এক বিশিষ্ট ব্যক্তি এ্যান্টনি ফিরিঙ্গিকে কবিগানের জন্য ডাকেন। এই সময় গোরক্ষনাথের নতুন গান লিখে দেওয়ার কথা ছিল। কিছু পাওনা বাকি থাকায় গোরক্ষনাথ এ্যান্টনি ফিরিঙ্গিকে নতুন গান দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। এই সময় এ্যান্টনি ফিরিঙ্গি বিরক্ত হয়ে নিজেই আগমনী গান লেখেন এবং ওই আসর রক্ষা করতে সক্ষম হন। এরপর থেকে তিনি নিজের রচিত গান নিয়েই আসরে নামতেন। তাঁর অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ভোলা ময়রা।
কবিগানের তাঁর অপর বাঁধনদার ছিলেন ঠাকুরদাস চক্রবর্তী। দুর্গাদাস লাহিড়ি সম্পাদিত বাঙালির গান গ্রন্থে তাঁর রচিত মাত্র ২টি গান পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য তিনি কলকাতার বহুবাজর অঞ্চলে একটি কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। পরে এই মন্দিরটি 'ফিরিঙ্গি কালিবাড়ি' নামে পরিচিতি লাভ করেছিল।
সূত্র:
চন্দননগরের কথক, কবিওয়ালা ও যাত্রা। শ্রী হরিহর শেঠ। [প্রবাসী, মাঘ ১৩৩১। পৃষ্ঠা: ৫০৯-৫১০]
বাঙালির গান (আন্টুনি সাহেব)। দুর্গাদাস লাহিড়ি সম্পাদিত। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, এপ্রিল ২০০১। পৃষ্ঠা: ১৯৫-১৯৬।