বাহাদুর শাহ, প্রথম, মোগল সম্রাট
(১৬৪৩-১৭১২ খ্রিষ্টাব্দ)
মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ (প্রথম) ১৬৪৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই অক্টোবর বুরহানপুরে জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি ছিলেন সম্রাট আওরঙ্গজেব (১৬৫৮-১৭০৭ খ্রিষ্টাব্দ) দ্বিতীয় সন্তান। এঁর মা ছিলেন রাজপুরী জারাল রাজপুত রাজকন্যা- নবাব বাই বেগম। আঁর আসল নাম ছিল কুতুবুদ্দিন মুহাম্মদ মুয়াজ্জেম। তাঁর পিতা আওরঙ্গজেব তাঁকে শাহ আলম উপাধি দেন।

১৬৬৭ খ্রিষ্টাব্দের দিকে বাহাদুর শাহ প্রথম আওরঙ্গজেবের নির্দেশে দাক্ষিণ্যাত্যে মহারাজ যশোবন্ত সিংহের সহায়তার জন্য পাঠান। এই সময় তিনি পিতা আওরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার পরিকল্পনা করেন। আওরঙ্গজেব বিষয়টি বুঝতে পেরে, তাঁর মা বেগম নওয়াব বাঈকে ছেলের কাছে পাঠান। নওয়াব বাঈকে এই বিষয়ে নানাভাবে বুঝিয়ে রাজধানীতে ফিরিয়ে আনেন।

১৬৬৪ খ্রিষ্টাব্দে আরঙ্গজেবের নির্দেশে বাহাদুর শাহ বিজাপুর আক্রমণে অগ্রসর হন। তিনি রাজ্য আক্রমণের পরিবর্তে বিজাপুরের সুলতানের সাথে সন্ধি করেন। এরপর আওরঙ্গজেব সরাসরি বিজাপুরের দিকে নজর দেন।
১৬৮৪ খ্রিষ্টাব্দে আওরঙ্গজেব যুবরাজ মুয়াজ্জমকে বিজাপুর আক্রমণের আদেশ দেন। যুবরাজ বিজাপুর আক্রমণের পরিবর্তে একটি বিজাপুরের সুলতানের সাথে সন্ধি করেন। ১৬৮৫ খ্রিষ্টাব্দে আওরঙ্গজেব বিজাপুরের সুলতানের কাছে, সুলতানের মন্ত্রী সরফরাজ খাঁর পদচ্যুতি দাবী করেন এবং পাঁচ-ছয় হাজার অশ্বারোহী সৈন্য দাবী করেন। সুলতান এই দাবী অগ্রাহ্য করে, বিজাপুরের মোগল অধিকৃত অঞ্চল ফিরে পাওয়ার দাবি করেন। ইতিমধ্যে বিজাপুরের সুলতান গোলকুণ্ডার সুলতানের সাথে মিত্রতা স্থাপন করে, মারাঠাদের এই যুদ্ধে সামিল হওয়ার প্রস্তাব দেন। আওরঙ্গজেব বিষয়টি বুঝতে পরে, নিজেই বিজাপুর আক্রমণ করেন। ১৬৮৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বিজাপুর দখল করেন। বিজাপুরের সুলতান সিকন্দর আদিল শাহকে বন্দী করতে সক্ষম হন। পরে সিকন্দর আদিল শাহকে পাঁচ হাজারি মনসবদার পদ দিয়ে বিজাপুরকে মোগল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। এরপর

১৬৮৭ খ্রিষ্টাব্দে বাহাদুর শাহ
গোলকুণ্ডা অভিযানে শুরু করেন।  গোলকুণ্ডার সুলতান মোগলদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ফলে আওরঙ্গজেব নিজেও এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।  এই অভিযানে জয়লাভের কোনো সম্ভাবনা না দেখে কৌশলের আশ্রয় নেন। আব্দুল্লাহ পানি নামক গোলকুণ্ডার একজন প্রভাবশালী কর্মচারীর বিশ্বাসঘাতকতায় আওরঙ্গজেব আবুল হোসেনকে বন্দী করতে সক্ষম হন। এর ফলে গোলকুণ্ডা আওরঙ্গজেবের অধীকারে আসে।


আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর সিংহাসন নিয়ে তাঁর অন্যান্য ভাইদের (মুহাম্মদ সুলতান, আজম শাহ, সুলতান মুহাম্মদ আকবর ও মুহাম্মদ কাম বক্স) সঙ্গে যুদ্ধ হয় এবং সকলকে পরাজিত করে
১৭০৭ খ্রিষ্টাব্দে ক্ষমতা লাভ করেন। ভাইদের মধ্যে তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আজম শাহ। উল্লেখ্য আজম শাহের মা ছিলেন দিলরাস বানু বেগম। সম্ভবত তিনি ১৭০৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৪মার্চ ক্ষমতা দখল করেন। ক্ষমতার দ্বন্দ্বে ৮ই জুন মৃত্যবরণ করেন। এরপরই বাহাদুর শাহ ক্ষমতা দখল করেছিলেন। সিংহাসন লাভের পর, তিনি মারাঠাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব দূর করেন। এছাড়া রাজপুত ও পাঞ্জাবের শিখদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে উদ্যোগী হন। কিন্তু এই সময় রাজসিংহাসন নিরঙ্কুশ ছিল না। ১৭০৯ খ্রিষ্টাব্দে হায়দ্রাবাদে কামবক্সকে পরাজিত করে, সিংহাসন রক্ষায় নিশ্চিত হন।

বাহাদুর শাহের তরুণ বয়সে, আওরঙ্গজেব তাঁকে উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের শাসক নিয়োগ করেছিলেন। ওই অঞ্চলে তখন আওরঙ্গজেবের কঠিন রাজশাসন বিদ্যামান ছিল। বাহাদুর শাহ ওই অঞ্চলে কঠিন আইন শিথিল করে শিখদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। বিশেষ করে এই সূত্রে শেষ শিখ আধ্যাত্মিক গুরু গোবিন্দ সিংহের সঙ্গে তার বন্ধত্ব গড়ে উঠেছিল। সিংহাসন নিয়ে দ্বন্দ্বের সময় গুরু গোবিন্দ তাঁকে সামরিক সহায়তা দিয়েছিলেন।

রাজ্য শাসন ও অন্যান্য বিষয়ে তিনি মধ্যমপন্থায় জোর দেন। জিজিয়া কর আদায় বন্ধ না করলেও, তিনি তা শিথিল করেছিলেন। শিল্পকলার প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ ছিল। তিনি কবি জাফর জাতাল্লির পৃষ্ঠপোষকতা করেন। এ ছাড়া সমসাময়িক সংগীতের বিকাশে ভূমিকা রাখেন।

তবে শেষদিকে ভুটানের শাসক ও হিন্দু বিদ্রোহীরা একসঙ্গে গোরাঘাট ও ঢাকায় আক্রমণ করে। এভাবে নানাদিকে বিশৃঙ্খলা বাড়তে থাকে। তার মৃত্যুর পর মুঘল সাম্রাজ্যের পতন শুরু হয়।

১৭১২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারিতে তিনি লাহোরে মারা যান।

তাঁর দুজন স্ত্রী'র নাম পাওয়া যায়। এঁর প্রধান মহিষী ছিলেন নিজাম বাঈ। এছাড়া আরও ৮ জন স্ত্রী ছিলেন। তবে এদের নাম পাওয়া যায় না। তাঁর তিন পুত্র ছিলেন জাহানদার শাহ, আজিম-উস শাহ, রাফি-উস শাহ। দুই কন্যার নাম খুজিস্তা আক্তার জেহান শাহ ও বুলান্ড আক্তার।

বাহাদুর শাহ প্রথমের মৃত্যুর তাঁর পুত্র
জাহানদার শাহ রাজত্ব লাভ করেছিলেন।


সূত্র: