জাহানদার শাহ, মোগল সম্রাট
(১৬৬১-১৭১৩ খ্রিষ্টাব্দ)

১৬৬১ খ্রিষ্টাব্দের ১০ মে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্ণ নাম ছিল- মির্জা মুহম্মাদ মুইজ্জুদ্দিন

তিনি ছিলেন সম্রাট বাহাদুর শাহ প্রথম- প্রথম পুত্র। এঁর মা ছিলেন রাজপুরী জারাল রাজপুত রাজকন্যা- নবাব বাই বেগম। রাজকাজের প্রথম অংশভাগী হয়েছিলেন তাঁর পিতামহ আওরঙ্গজেবের আমলে। ১৬৭১ খ্রিষ্টাব্দে আওরঙ্গজেব বালখের ভাইজিয়ার পদে নিযুক্ত করেছিলেন। পরে তিনি সিন্ধের সুবেদার নিযুক্ত হন। 

১৭১২ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ ফেব্রুয়ারি বাহাদুর শাহ প্রথম মৃত্যুবরণ করলে, তিনি এবং তাঁর ভাই আজিম-উশ-শান, উভয়েই নিজেকে সম্রাট ঘোষণা করেছিলেন। ফলে উভয়ের ভিতরে যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। ১২ই মার্চ আজিম-উস-শানকে হত্যা করা হয়।

পিতার হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আজিম-উশ-শানের পুত্র ফররুখসিয়ার যুদ্ধযাত্রা করেন। এই যুদ্ধে তাঁকে সাহায্য করেছিলেন বাংলার সুবেদার হুসেন আলী খান এবং তাঁর ভাই এলাহাবাদের সুবেদার আব্দুল্লাহ খান। এঁরা আজিমাবাদ থেকে এলাহাবাদে এসে পৌঁছালে, জাহানদার শাহের সেনাপতি সৈয়দ আব্দুল গাফ্ফার খান গর্দেজী বাধা দেন। যুদ্ধে গাফ্ফার খান পরাজিত ও নিহত হলে, অবশিষ্ট সৈন্য পালিয়ে যায়। এরপর জাহানদার শাহ তাঁর পুত্র সেনাপতি আব্দুল্লা খান ও পুত্র আজ-উদ্দিন শাহকে পাঠান। সম্রাটের এই বাহিনী ফতেপুর জেলার খাজওয়াহের কাছে বিদ্রোহীদের মুখোমুখী হয়। এই যুদ্ধে সম্রাটের বাহিনী পরাজিত হলে, ১৭১৩ খ্রিষ্টাব্দের ১লা জানুয়ারি ফররুখশিয়ের বাহিনী ও সম্রাটের বাহিনী আগ্রার কাছে পুনরায় যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। এই যুদ্ধে সম্রাট জাহানদার শাহের বাহিনী পরাজিত হলে, জাহানদার শাহকে বন্দী হন এবং ফররুখশিয়ের নিজেকে মুগল সম্রাট হিসেবে ঘোষণা দেন। পরাজিত জাহানদার শাহকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর ১১ ফেব্রুয়ারি কারাগারে আততায়ীর হাতে তাঁর মৃত্যু হয়।

১৬৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই অক্টোবর তাঁর প্রথম বিবাহ হয়েছিল মির্জা মোকাররম খানের কন্যাকে। এই স্ত্রীর অকাল মৃত্যুর পর, পারিবারিক সম্প্রীতি রক্ষার জন্য মির্জা রুস্তমের কন্যা সাইয়িদ-উন-নিসা বেগমের সাথে বিবাহ হয়। এই বিবাহটি বেশ আড়ম্বড়ের সাথে হয়েছিল। ১৬৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ আগষ্টে এই অনুষ্ঠিত বিবাহে সম্রাট আওরঙ্গজেব এবং বাহাদুর শাহ প্রথম-এর উপস্থিতিতে ঘটেছিল। কথিত আছে এই বিবাহের সাইয়িদ-উন-নিসা বেগমকে ৬৭,০০০ টাকার গহনা উপহার দেওয়া হয়েছিল। রাজকন্যা জিনাত-উন-নিসা বেগমের (আওরঙ্গজেবের কন্যা) তত্ত্বাবধানে এই বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর তিনি বিবাহ করেছিলেন অনুপ বাঈকে। রাজত্বলাভের পর তিনি বিলাসী জীবন শুরু করেন। প্রায় সময়ই দরবারে নাচ-গানে ডুবে থাকতেন। জিনাত-উন-নিসার বিরোধিতাকে অগ্রাহ্য করে এবং সবাইকে হতবাক করে দিয়ে তিনি দরবারের নাচের মেয়ে লাল কুনোয়ারকে চতুর্থ স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।

তাঁর সন্তানরা ছিলেন- ইজ্জ উদ্দীন মির্জা, আজ্জ উদ্দীন মির্জা, দ্বিতীয় আলমগীর, ইফাত আরা বেগম ও রাবী বেগম।