ফররুখসিয়ার, মোগল সম্রাট
(১৬৮৫-১৭১৯ খ্রিষ্টাব্দ)
১৬৮৫ খ্রিষ্টাব্দের ১১ আগষ্ট আওরঙ্গবাদে জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁর পূর্ণ নাম ছিল- আবুল মুজাফ্ফর মুইন উদ্দিন মুহাম্মদ শাহ ফররুখসিয়ার আলিম আকবর সানি ওয়ালা শান পাদশাহ-ই-বাহ্র-উ-বার।
সুদর্শন রাজকুমার হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছিল।
তাঁর পিতার নাম আজিম-উশ্-শান। মায়ের নাম সাহিবা নিসওয়ান। তিনি ছিলেন পিতার দ্বিতীয় পুত্র।
এবং সম্রাট
আওরঙ্গজেব-এর নাতি।
১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি তাঁর পিতার সাথে বঙ্গদেশে আসেন। ১৭০৭ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট
আওরঙ্গজেব আজিম-উশ্-শানকে বাংলা
থেকে প্রত্যাহার করে ফররুখসিয়ারের কাছে বাংলার শাসনভার অর্পণ করেন। মূলত ফররুখসিয়ার দায়িত্ব পান ঢাকা এবং
তৎসংলগ্ন অঞ্চলের কর্তৃত্ব। এই সময়
আওরঙ্গজেব তাঁর অপর পুত্র
বাহাদুর শাহ প্রথম-কে মুরশিদাবাদে পাঠান।
১৭১২ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ ফেব্রুয়ারি
বাহাদুর শাহ প্রথম
মৃত্যুবরণ করলে, তিনি এবং তাঁর ভাই আজিম-উশ-শান, উভয়েই নিজেকে সম্রাট ঘোষণা
করেছিলেন। ফলে উভয়ের ভিতরে যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। ১২ই মার্চ আজিম-উস-শানকে হত্যা করা
হয়।
পিতার হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আজিম-উশ-শানের পুত্র ফররুখসিয়ার যুদ্ধযাত্রা করেন। এই যুদ্ধে তাঁকে সাহায্য
করেছিলেন বাংলার সুবেদার হুসেন আলী খান এবং তাঁর ভাই এলাহাবাদের সুবেদার আব্দুল্লাহ খান। এঁরা আজিমাবাদ থেকে
এলাহাবাদে এসে পৌঁছালে,
জাহানদার শাহের সেনাপতি সৈয়দ আব্দুল গাফ্ফার খান গর্দেজী বাধা দেন। যুদ্ধে গাফ্ফার খান পরাজিত ও
নিহত হলে, অবশিষ্ট সৈন্য পালিয়ে যায়। এরপর জাহানদার শাহ তাঁর পুত্র সেনাপতি আব্দুল্লা খান ও পুত্র আজ-উদ্দিন শাহকে পাঠান।
সম্রাটের এই বাহিনী ফতেপুর জেলার খাজওয়াহের কাছে বিদ্রোহীদের মুখোমুখী হয়। এই যুদ্ধে সম্রাটের বাহিনী পরাজিত হলে,
১৭১৩ খ্রিষ্টাব্দের ১লা জানুয়ারি
ফররুখশিয়ের বাহিনী ও সম্রাটের বাহিনী আগ্রার কাছে পুনরায় যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। এই যুদ্ধে
সম্রাট জাহানদার শাহের বাহিনী পরাজিত হলে,
জাহানদার শাহকে বন্দী হন এবং
ফররুখশিয়ের নিজেকে মুগল সম্রাট হিসেবে ঘোষণা দেন।
পরাজিত জাহানদার শাহকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর ১১ ফেব্রুয়ারি কারাগারে আততায়ীর হাতে তাঁর মৃত্যু হয়।
ফররুখশিয়ের সম্রাট হওয়ার পর, হুসেন আলী খান এবং
তাঁর ভাই আব্দুল্লাহ খানকে ওয়াজির (প্রধানমন্ত্রী) ও
মীরবক্স-পদে নিযুক্ত করেন। এর ফলে এই দুই ধীরে ধীরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নিজেদের
কব্জায় আনতে থাকেন। ফলে ফররুখশিয়ের নিজেকে বিপন্ন বোধ করতে থাকেন। তিনি রাষ্ট্রীয়
ক্ষমতা নিজের অধিকারে আনার উদ্যোগ নিলে এই দুই ভাই ১৭১৯ খ্রিষ্টাব্দে ফররুখশিয়েরকে
ক্ষমতাচ্যুত করেন। ১৭১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ আগষ্ট তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর সাইদ
ভ্রাত্রীদ্বয় আজিম উস শানের ভাই রাফি-উস-শানের সর্বকনিষ্ঠ পুত্র
রাফি-উদ-দারাজাতকে
বাদশাহ বলে ঘোষণা
দেন।
ফররুখশিয়রের স্ত্রীর তালিকা
গোহার-উন-নেসা বেগম, ইন্দিরা কানওয়ার বাঈ, ভিপদেবী
বাঈ।
সন্তান: বাদশাহ বেগম