বামাচরণ ভট্টাচার্য
ঊনবিংশ শতাব্দীর বাঙালি ব্রাহ্মণ পণ্ডিত, সেতার, সুরবাহার ও সুরসৃঙ্গার বাদক এবং ধ্রুপদ গায়ক।

বামাচরণের জন্মমৃত্যু কাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায় না। পিতার নাম রামকমল শিরোমণি। তবে ব্রাহ্মণ পদবী ছিল ভট্টাচার্য। উল্লেখ্য, তাঁর পিতামহ রামকমল শিরোমণি ছিলেন রাঢ়ী শ্রেণির ব্রাহ্মণ এবং পেশাদার পুরোহিত।

শৈশবে তিনি পিতার কাছে ব্যাকরণ ও কাব্যশাস্ত্র শেখেন। বামাচরণ প্রথম জীবনে পিতার উত্তরসূরী হিসেবে পেশাদার পুরোহিত ছিলেন। এরপর তিনি বেদ অধ্যায়নের জন্য বেনারস যান। এই পাঠ শেষ করার পর তিনি, বেশ কয়েক বছর ময়ূরভঞ্জ স্টেটে প্রধান পুরোহিত হিসেবে ছিলেন।

হিন্দু দর্শনের পাশাপাশি বিভিন্ন সঙ্গীতগুরুর কাছে তিনি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম নেন। তিনি মোহম্মদ আলী খান ও ওয়ারিশ আলী খানের কাছে বীণা, যদুভট্টের কাছে ধ্রুপদ, আহমেদ আলী খানের কাছে খেয়াল, দুন্নি খানের কাছে ঠুমরি শেখেন। এছাড়া বাসাদ খান এবং কাশেম আলী খানের কাছে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম। এছাড়া রানাঘাটের পাল চৌধুরীর জমিদারের সভানর্তকী হিঙ্গানজান এবং দিলজানের কাছে নৃত্যবিষয়ক জ্ঞান লাভ করেন। এই দরবারের সুরবাহারবাদক শাহজাদ মহাম্মদ খানের কাছে সুরবাহারের তালিম নেন।

এরপর রাজা নরজোলের এক সঙ্গীত আসরে দিন যোগদান করেন। সে সময়ের প্রখ্যাত সরোদবাদক মুরাদ আলী খান, ওই আসরে ছিলেন। এই আসরে বামাচরণ মুরাদ আলী খানের বাজনা শোনেন এবং তাঁকে অনুকরণ করে তাঁর বাদনশৈলী উপস্থাপন করেন। মুরাদ আলী এই বাজনা শুনে মুগ্ধ হন এবং তাঁকে শিষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন। এরপর তিনি কুমার নরেন্দ্র নাথ মিত্রের ঝামাপুকুরস্থ বাসভবনে সেতার পরিবেশন করে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন। তিনি সেকালের বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ স্যার শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুরের বিশেষ প্রিয় শিল্পী ছিলেন।

বামাচরণ সেতারের পাশাপাশী সুরশৃঙ্গার বাদনেও কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়া ধ্রুপদ শিল্পী হিসেবেও তিনি যথেষ্ঠ সুনাম ছিল অর্জন করেছিলেন। উল্লেখ্য তাঁর সুযোগ্য পুত্র জিতেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বিশেষ সেতার বাদক হিসেবে বিশেষ সুনাম অর্জন করেছিলেন।


তথ্যসূত্র :