বড়ু চণ্ডীদাস
(১৩৩৯-১৩৯৯)
মধ্যযুগীয় বাংলাকাব্য
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন -এর রচয়িতা। আনুমানিক ১৩৩৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জন্মগ্রহণ
করেন। সম্ভবত ১৩৯৯ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের আবিষ্কর্তা বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ স্থানীয় প্রবাদের
সূত্রে লিখেছেন- 'বীরভূমের নানুরে বাশুলীদেবীর মন্দিরের কাছে চণ্ডীদাসের কীর্তন দলের একটি নাট্যশালা ছিল। চণ্ডীদাস একবার গৌড়ের নবাবের রাজসভায় গান গাওয়ার অনুরোধ রক্ষা করতে সেখানে যান। তাঁর কণ্ঠে ভক্তি-প্রেমের গান শুনে নবাবের বেগম মুগ্ধ হয়ে যান এবং তিনি চণ্ডীদাসের গুণের অনুরাগিণী হয়ে পড়েন। বেগম একথা নবাবের কাছে স্বীকার করলে নবাব ক্রোধের বশে চণ্ডীদাসকে মৃত্যুর দণ্ডাদেশ দেন। আত্মীয় বন্ধুবর্গের সামনে চণ্ডীদাস হস্তিপৃষ্ঠে আবদ্ধ হয়ে নিদারুণ কশাঘাত সহ্য করে প্রাণবিসর্জন দেন; বেগম সেই দৃশ্য দেখে শোকে মুর্চ্ছিতা হয়ে প্রাণবিয়োগ করেন।
অন্য লোককথা থেকে জানা যায়- শূদ্র কন্যা এবং রজকিনী
রামীর সঙ্গে তাঁর প্রেমের কারণে স্থানীয় লোকজন তাঁকে
হত্যা করেছিল। কারও কারও মতে তিনি সেই সময়ের বৈষ্ণব পীঠস্থান ইলামবাজারে পালিয়ে গিয়েছিলেন।
ধারণা করা হয়, তাঁর আসল নাম ছিল অনন্ত এবং কৌলিক উপাধি বড়ু, গুরুপ্রদত্ত নাম
চণ্ডীদাস।
চণ্ডীদাস নামে একাধিক কবির নাম পাওয়া যায়। বড়ু চণ্ডীদাস, দ্বিজ চণ্ডীদাস, দীন
চণ্ডীদাস ও চণ্ডীদাস। তবে বিভিন্ন গবেষকদের মতে বড়ু চণ্ডীদাস শ্রীকৃষ্ণচরিতের
রচয়িতা।
ধারণা করা হয় ১৪০০-১৪৩৩ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন রচনা করেন। ১৯০৯
খ্রিষ্টাব্দ বসন্তরঞ্জন রায় বাঁকুড়া জেলা থেকে
বড়ুচণ্ডীদাসের ভণিতায় একটি পুথি আবিষ্কার করেন। বাংলা সাহিত্যে এই
গ্রন্থটিই শ্রীকৃষ্ণকীর্তন নামে খ্যাত। উল্লেখ্য, এই গ্রন্থটি বন-বিষ্ণুপুরের
নিকটবর্তী কাঁকিল্যা নিবাসী দেবেন্দ্র নাথ মুখোপাধ্যায় মহাশয়ের কাছে ছিল। এই
গ্রন্থটি ১৩২৩ বঙ্গাব্দে কলকাতা বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে প্রকাশিত হয়।
বাংলা সাহিত্যের ক্রমবিকাশের ধারায়,
বিদ্যাপতি'র পরবর্তী
কবি হিসেবে বড়ু চণ্ডীদাসকে ধরা হয়।
বড়ুচণ্ডীদাসের
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন ও দীন চণ্ডীদাসের পদাবলী- গ্রন্থের সূত্রে যে চণ্ডীদাসের উল্লেখ
পাওয়া যায়, তার স্বতন্ত্র পরিচয় রয়েছে- চণ্ডীদাস নামে। তব শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের রচয়িত
বড়ুচণ্ডীদাসকেই সাধারণভাবে চণ্ডীদাস বলা হয়। যেমন- বিখ্যাত পদ- ‘সবার উপরে মানুষ
সত্য তাহার উপরে নাই’-এর রচয়িতা চণ্ডীদাস। এই চণ্ডীদাস এবং বড়ু চণ্ডীদাস অভিন্ন
বিবেচনা করা হয়। এই চণ্ডীদাসের প্রেমিকা ছিলেন রজকিনী রামী। এই প্রণয় নিয়ে বাংলা
সাহিত্য, সঙ্গীত, চলচ্চিত্রে নানা শিল্পকর্মের সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্র:
- পুরাতন বাংলা সাহিত্যের তথ্য ও কালক্রম/সুখময় মুখোপাধ্যায়।
[খান ব্রাদার্স এ্যান্ড কোম্পানি, ডিসেম্বর ২০০০]
-
বাংলা সাহিত্যের কথা/ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ।
[মওলা ব্রাদার্স, বাংলা একাডেমী, অক্টোবর ১৯৯৯]
-
বাংলা সাহিত্যের রূপরেখা।
গোপাল হালদার। [মুক্তধারা, আগষ্ট ১৯৮০]
- বাংলা সাহিত্যের সমগ্র ইতিহাস।
ক্ষেত্র গুপ্ত। [জাতীয় গ্রন্থ প্রকাশন, ফেব্রুয়ারি ২০০০।
- ভারতের ইতিহাস
। অতুলচন্দ্র রায়, প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়। [মৌলিক লাইব্রেরি, কলকাতা, জুন
২০০০]