শ্রীকৃষ্ণকীর্তন
বড়ুচণ্ডীদাস


ভূমিকা
জন্মখণ্ড তাম্বুলখণ্ড দানখণ্ড নৌকাখণ্ড ভারখণ্ড ছত্রখণ্ড বৃন্দাবনখণ্ড কালিয়দমনখণ্ড যমুনাখণ্ড বাণখণ্ড বংশীখণ্ড রাধাবিরহ খণ্ড  


ভূমিকা
 

মধ্যযুগীয় বাংলা-কাব্য। ১৩১৬ বঙ্গাব্দে (১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দ) বসন্তরঞ্জন রায় বাঁকুড়া জেলা থেকে বড়ুচণ্ডীদাসের ভণিতায় একটি পুথি আবিষ্কার করেন। বাংলা সাহিত্যে এই গ্রন্থটিই শ্রীকৃষ্ণকীর্তন নামে খ্যাত। উল্লেখ্য, এই গ্রন্থটি বন-বিষ্ণুপুরের নিকটবর্তী কাঁকিল্যা নিবাসী দেবেন্দ্র নাথ মুখোপাধ্যায় মহাশয়ের কাছে ছিল। এই গ্রন্থটি ১৩২৩ বঙ্গাব্দে কলকাতা বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে প্রকাশিত হয়।

বসন্তরায়ের বিবরণ থেকে জানা যায়, মূলগ্রন্থটি তুলোট কাগজের উভয় পৃষ্ঠায় লিখিত ছিল। পাতার আকার ছিল ১৩.২৫X ৩.৭৫ ইঞ্চি। এই গ্রন্থের প্রথম দুটি পাতা পাওয়া যায় নাই। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন নামটি বসন্তরায়ের দেওয়া। এ প্রসঙ্গে এই গ্রন্থের ভূমিকায় বসন্তরায় লিখেছিলেন- 'দীর্ঘকাল যাবৎ চণ্ডীদাস বিরচিত কৃষ্ণকীর্তন-এর অস্তিত্ব মাত্র শুনিয়া আসিতেছিলাম। এতোদিনে তাহার সমাধান হইয়া গেল। আমাদের ধারণা আলোচ্য পুথিই কৃষ্ণকীর্তন এবং সেইহেতু উহার অনুকরণ নাম নির্দেশ করা হইল।'

বসন্তরায়ের এই গ্রন্থ আবিষ্কারের পূর্বে- এই গ্রন্থ সম্পর্কে জানা গিয়েছিল,  ১৩৮০ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত জগবন্ধু ভদ্রের সম্পাদিত 'মহাজন-পদাবলী' (প্রথমখণ্ড), পৃষ্ঠা ৪৬, থেকে জানা যায় ১৩১১ বঙ্গাব্দে ব্রজসুন্দর সান্ন্যাল রচিত চণ্ডীদাস-চরিত গ্রন্থে এবং ত্রৈলোক্যনাথ ভট্টাচার্যের চণ্ডীদাস প্রবন্ধে (নব্যভারত, ফাল্গুন ১৩০০) এই গ্রন্থের নাম পাওয়া যায়। যদিও এঁদের বর্ণিত কৃষ্ণকীর্তন  নামক গ্রন্থটিই যে বসন্তরায়ের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, এ কথা সন্দেহাতীতভাবে বলা যায় না। ডঃ বিজন বিহারী ভট্টাচার্য এবং ডঃ অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এই গ্রন্থের নাম শ্রীকৃষ্ণকীর্তন-এর পরিবর্তে শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ হওয়া উচিৎ বলে দাবি করেছেন।

এই গ্রন্থের বৈদ্যুতিন সংস্করণ করা হলো-  মুহম্মদ আবদুল হাই ও আনোয়ার পাশা সম্পাদিত বড়ুচণ্ডীদাসের কাব্য (আশ্বিন, ১৩৮৮ সন) অনুসারে।

বাংলা সাহিত্যের ক্রমবিকাশের ধারায়, বিদ্যাপতি'র পরবর্তী কবি হিসেবে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন -এর রচয়িতা বড়ু চণ্ডীদাসকে ধরা হয়। আনুমানিক ১৩৭০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। সম্ভবত ১৪৩৩ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ধারণা করা হয়, তাঁর আসল নাম ছিল অনন্ত এবং কৌলিক উপাধি বড়ু, গুরুপ্রদত্ত নাম চণ্ডীদাস। চণ্ডীদাস নামে একাধিক কবির নাম পাওয়া যায়। বড়ু চণ্ডীদাস, দ্বিজ চণ্ডীদাস, দীন চণ্ডীদাস ও চণ্ডীদাস। তবে বিভিন্ন গবেষকদের মতে বড়ু চণ্ডীদাস শ্রীকৃষ্ণচরিতের রচয়িতা।

 ১৩১৬ বঙ্গাব্দে (১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দ) বসন্তরঞ্জন রায় বাঁকুড়া জেলা থেকে বড়ুচণ্ডীদাসের ভণিতায় একটি পুথি আবিষ্কার করেন। বাংলা সাহিত্যে এই গ্রন্থটিই শ্রীকৃষ্ণকীর্তন নামে খ্যাত। উল্লেখ্য, এই গ্রন্থটি বন-বিষ্ণুপুরের নিকটবর্তী কাঁকিল্যা নিবাসী দেবেন্দ্র নাথ মুখোপাধ্যায় মহাশয়ের কাছে ছিল। এই গ্রন্থটি ১৩২৩ বঙ্গাব্দে কলকাতা বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে প্রকাশিত হয়।

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম কাহিনি কাব্য, যা একই সাথে কাব্য ও গীতির সংমিশ্রণে সৃষ্ট। গ্রন্থটি গীতগোবিন্দের আদর্শে রচিত। বিষয়বস্তু, বিষয়বস্তুর কাব্যিক উপস্থাপন, রাগ-তালে নিবদ্ধ করার প্রয়াস এই সবই গীতগোবিন্দকে মনে করিয়ে দেয়। এই পর্যায়ে শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের রাগ ও তালের দিকে একটু নজর দেব।

শ্রীকৃষ্ণকৃর্তনের রাগ পরিচিতি

বড়ুচণ্ডীদাসের পদে অধিকাংশ গানের সাথে একাধিক তাল বা ছন্দের নাম পাওয়া যায়। একাধিক তালে নিবদ্ধ পদগুলো, তালফেরতায় গাওয়া হতো কিনা তর্কসাপেক্ষ। নিচের এই তালগুলোর উল্লেখ করা হলো।