ধোয়ী
খ্রিষ্টীয় ১২শ শতকের সংস্কৃত কবি।
রাজা
লক্ষণসেন (১১৭৯-১২০৬ খ্রিষ্টাব্দ) রাজসভার পঞ্চরত্নের অন্যতম। উল্লেখ্য অপর
চারজন ছিলেন জয়দেব,
গোবর্ধন আচার্য,
শরণ ও
উমাপতি ধর।
যতদূর জানা যায়, ধোয়ী নবদ্বীপে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বংশ-পরিচয় নিয়ে বিতর্ক আছে। বিভিন্ন জনের কাছে তিনি ব্রাহ্মণ, বৈদ্য এবং তন্তুবায় সম্প্রদায়ভুক্ত বলে উল্লেখ পাওয়া যায়।
এখন পযর্ন্ত তাঁর 'পবনদূত' গ্রন্থটির পরিচয়
পাওয়া যায়। মন্দাক্রান্তা ছন্দে রচিত এই গ্রন্থে মোট ১০৪টি শ্লোক রয়েছে। এই কাব্যের
শেষভাগের ১০১ সংখ্যক শ্লোকে উল্লেখ আছে, গৌড়েন্দ্র লক্ষ্মণসেন তাঁর
পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তবে কাব্যের মূল বিষয় ছিল লক্ষ্মণসেন-এর একটি প্রেম কাহিনি।
লক্ষ্মণসেন দক্ষিণদেশে গেলে কুবলয়বতী নামক একটি গন্ধর্বকন্যা তাঁর প্রেমাসক্ত হন।
তিনি পবন অর্থাৎ বায়ুকে দূত করে তাঁর নিকট প্রেরণ করে। এটাই কাব্যের মূল
বিষয়বস্ত।
এই কাব্যে লক্ষ্মণসেন এবং গৌড়সহ ভারতের অন্যান্য কয়েকটি স্থান ও নদনদীর বর্ণনা
পাওয়া যায়।
বিশেষ করে গৌড়ের রাজধানীর চমৎকার বর্ণনা আছে। এই বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, তখন
বাংলায় সুপারি গাছের প্রাচুর্য ছিল (শ্লোক ৩৮)। আরও জানা যায় যে, দিগ্বিজয়কালে
লক্ষ্মণসেন দক্ষিণদেশীয় রাজাদের পরাজিত করেন এবং তাঁর সময়ে বিজয়পুর ছিল গৌড়ের
রাজধানী। এছাড়া তৎকালীন ভারতের দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলের কিছু ভৌগোলিক তথ্যও এ কাব্য
থেকে পাওয়া যায়। পবনের গতিপথের বর্ণনা প্রসঙ্গে কবি পাণ্ড্যদেশ, উরগপুর,
সেতুবন্ধ, কাঞ্চীপুর, চোল, কেরল, অন্ধ্র, কলিঙ্গ, সুহ্ম প্রভৃতি স্থান এবং
তাম্রপর্ণী, সুবলা, কাবেরী, গোদাবরী, রেবা, নর্মদা, গঙ্গা, যমুনা প্রভৃতি নদীর
বর্ণনা পাওয়া যায়। এছাড়া ভিল ও শবরজাতির নামও পাওয়া যায়।
সমালোচকদের মতে কাব্যটিতে কালিদাসের মেঘদূত কাব্যের প্রভাব আছে। তবে মেঘদূতের মতো
এতে পর্ববিভাগ নেই। ধোয়ীর কবিপ্রতিভার স্বীকৃতিস্বরূপ জয়দেব তাঁকে ‘কবিক্ষ্মাপতি’
(কবিদের রাজা) এবং ‘শ্রুতিধর’ উপাধিতে ভূষিত করেন।