গোবর্ধন আচার্য
খ্রিষ্টীয় ১২শ শতকের সংস্কৃত কবি।  রাজা লক্ষণসেন (১১৭৯-১২০৬ খ্রিষ্টাব্দ) রাজসভার পঞ্চরত্নের অন্যতম। উল্লেখ্য অপর চারজন ছিলেন জয়দেব, শরণ, ধোয়ীউমাপতি ধর

 

তাঁর পিতা নীলাম্বর ছিলেন একজন সংস্কৃত পণ্ডিত। গোবর্ধন তাঁর কাব্যে উল্লেখ করেছেন যে, জনৈক সেনকুলতিলক রাজার পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁর গ্রন্থ রচিত। ধারণা করা হয় লক্ষণসেন-ই তাঁকে কাব্য রচনায় সহয়তা করেছিলেন।

গোবর্ধনের বিখ্যাত গ্রন্থের নাম আর্যাশপ্তশতী। আর্যাছন্দে রচিত এ গ্রন্থের নামকরণ অনুযায়ী, এতে সাতশ শ্লোক থাকার কথা থাকলেও, এতে আছে ৭৬৪টি। শ্লোকগুলি শৃঙ্গাররসপ্রধান, পরস্পর নিরপেক্ষ এবং বর্ণানুক্রমে রচিত। কাব্যটি বিভিন্ন বিভাগ বা ব্রজ্যায় বিভক্ত।

বাংলাপেডিয়ায় এই বিষয়ে কানাইলাল রায় তাঁর কাব্যের প্রকৃতি সম্পর্কে লিখেছেন-

'...গোবর্ধনের রচনায় অলঙ্কারশাস্ত্রে নিষ্ঠা ও পরিহাসরসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। এতে তৎকালীন গৌড়বঙ্গের রাজকীয় ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির কামকলাবিলাস ও ভুজঙ্গবৃত্তি প্রকটরূপে প্রকাশিত হয়েছে। এতে একদিকে যেমন মানুষের অনাবিল দাম্পত্য প্রেম ও তরুণ প্রেমের উচ্ছ্বাস বর্ণিত হয়েছে, অন্যদিকে তেমনি আবার যৌনজীবনের নানা দিক যেমন, বিধিবহির্ভূত নাগরপ্রেম, যথেচ্ছ যৌনাচার ইত্যাদি চিত্রিত হয়েছে। দারিদ্রে্যর কারণে মানুষের সামাজিক অধঃপতন, আবার তার মধ্যেই কোনো কোনো ক্ষেত্রে যথার্থ ভালবাসার চিত্রও এ কাব্যে পাওয়া যায়। পাঠকসমাজে কাব্যটি খুবই জনপ্রিয় ছিল, যে কারণে একটি কাব্য রচনা করেই গোবর্ধন বিখ্যাত হয়েছিলেন। হিন্দি কবি বিহারীলালের প্রসিদ্ধ কাবগ্রন্থ সৎসঈ গোবর্ধনের আর্যাশপ্তশতী অনুসরণে রচিত। কবি জয়দেবও গোবর্ধনের উচ্চ প্রশংসা করেছেন। পরবর্তীকালের সূক্তিমুক্তাবলী, শার্ঙ্গধরপদ্ধতি, পদ্যাবলী প্রভৃতি কোষকাব্যে গোবর্ধনের বিভিন্ন শ্লোক উদ্ধৃত হয়েছে।'