ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
(১৮৯৪-১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দ)
উপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, সঙ্গীতজ্ঞ, সমাজবিজ্ঞানী।
১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ অক্টোবর ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল
প্রেসিডেন্সির
হুগলী
জেলার চাতরায় মামা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।
পিতার নাম ভূপতিনাথ মুখোপাধ্যায় এবং মায়ের নাম এলোকেশী দেবী।
এঁদের পৈতৃক নিবাস ছিল বর্তমান
ভারত-এর
পশ্চিমবঙ্গ -এর উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার ভাটপাড়ার
নিকটবর্তী নারায়ণপুর গ্রামে। পিতা ভূপতিনাথ
ছিলেন বারাসতের আইনজীবী।
১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে ভূপতিনা
কলকাতার
অখিল মিস্ত্রি লেনে বাসা ভাড়া করে সপরিবারে বসবাস শুরু করেন। এই সূত্রে ধূর্জটিপ্রসাদের শৈশবের
লেখাপড়ার শুরু হয়েছিল বারাসত গভর্নমেন্ট হাই স্কুলে।
এই স্কুলে লেখাপড়ার মাঝে কিছুদিন হেয়ার স্কুলে লেখাপড়া করেছেন।
বারাসত গভর্নমেন্ট হাইস্কুল থেকে তিনি ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে এন্ট্রান্স পাশ করেন।
এরপর তিনি ভর্তি হন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি এই স্কুলে
লেখাপড়া করলেও শেষ পর্যন্ত অসুস্থতার জন্য পরীক্ষা দিতে পারেন নি।
১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে রিপন কলেজ (বর্তমানের সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) থেকে তিনি ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন।
এরপর তিনি এই কলেজেই রসায়ন, গণিতসহ ইংরেজিতে অনার্স শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯১৪
খ্রিষ্টাব্দে অনার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি পাওয়ার পরও রসায়ন বিজ্ঞানের ব্যবহারিক
পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার জন্য, পাশ করতে ব্যর্থ হন। এরপর তিনি লণ্ডন স্কুল অব
ইকনমিক্স -এ অর্থনীতি পড়ার জন্য যাত্রা করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য কলম্বো থেকে
ফিরে আসেন। ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য রাচি যান।
১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বঙ্গবাসী কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। এই কলেজে তিনি ইতিহাস
এ্মএ শ্রেণিতে ভর্তি। এছাড়া আইন কলেজেও ভর্তি হয়েছিলেন। ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর
সাম্যয়িক দৃষ্টিহীনতা দেখা দেয়। কিন্তু এমএ পাশ করতে সক্ষম হন।
১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি
ছায়াদেবীকে বিবাহ করেন।
১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম শ্রেণিতে এমএ পাশ করেন। এই বছরেই তাঁর পিতার মৃত্যু হয়।
১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজে প্রভাষক হিসেব যোগদান করেন।
১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয়ে
তিনি অর্থনীতির ও সমাজতত্ত্বের প্রভাষক হিসাবে যোগ দেন।
১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ ফেব্রুয়ারি-তে তাঁর একমাত্র পুত্র
কুমারপ্রসাদের জন্ম হয়।
১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে তদানীন্তন যুক্তপ্রদেশ (অধুনা উত্তর প্রদেশ)
গোবিন্দ বল্লভ পন্থী কংগ্রেস সরকারের ডিরেক্টর অফ ইনফরমেশন
পদে কাজ করেন। ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের ১
অক্টোবর যুক্ত প্রদেশের ডিরেক্টর অফ ইনফরমেশন পদত্যাগ
করেন।
১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দের ১২ অক্টোবর লক্ষ্ণো বিশ্ববিদ্যালয়ে
রিডার পদ পান।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এক বছরের জন্য
যুক্তপ্রদেশ সরকারের লেবার এনকোয়ারি কমিটির সদস্য হন।
১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ৫ নভেম্বর লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয়ে
প্রফেসর পদ পান।
১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ইকনমিক ডেলিগেট হয়ে সোভিয়েত
রাশিয়া যান।
১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে ১৯ অক্টোবর তিনি নেদারল্যান্ডসের ইনস্টিটিউট অফ
সোশ্যাল সায়েন্সে সমাজতত্ত্ব বিভাগে ভিজিটিং প্রফেসরপদে কাজ করার জন্য আমন্ত্রিত
হন।
১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ শে অক্টোবর হতে ১৯৫৪
খ্রিস্টাব্দের ১৪ ই মে তিনি সেখানে "সোসিওলজি অফ কালচার" (সংস্কৃতির সমাজবিজ্ঞান)
বিষয়ে বক্তৃতা দেন।
১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে ইন্টারন্যাশনাল সোসিওলোজি এ্যাসোসিয়েশানের
সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ৪ মে ভিজিটিং
প্রফেসরপদ ত্যাগ করে দেশে ফিরে আসেন।
১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ১ অক্টোবর, লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
অবসর গ্রহণ করেন। এই দিনই তিনি আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড.জাকির হোসেনের আহ্বানে,
তিনি আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপক
এবং বিভাগীয় প্রধান হিসেব যোগদান করেন।
১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে তিনি
দেরাদুনে ইন্ডিয়া সোসিওলজিক্যাল কনফারেন্সে সভাপতিত্ব করেন।
আগষ্ট মাসে বান্দুং সম্মেলনে যোগ দেন এবং তিনদিন এশিয়ার দেশগুলির ইকনমিক কো-অপারেশন সেমিনারে বক্তৃতা করেন।
ডিসেম্বর মাসে তাঁর কণ্ঠনালীতে ক্যান্সার রোগ ধরা পড়ে।
১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে তিনি চিকিৎসার জন্য সুইজারল্যান্ড যান। ৯ মে তাঁর
অস্ত্রোপচার হয়। নভেম্বর মাসে তিনি দেশে ফিরে আসেন।
১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৭
আগষ্ট তিনি উত্তরপ্রদেশ সরকারের উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ
করেন।
১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ডিসেম্বর কলকাতার ৪ শম্ভুনাথ স্ট্রিটের বাড়িতে মৃত্যুবরণ
করেন।
সঙ্গীত শিক্ষা
তিনি ধ্রুপদ শিল্পী রাধিকা গোস্বামী এবং মহিম মুখোপাধ্যায়ের কাছে সঙ্গীতের পাঠ
গ্রহণ করেন। তাঁর কর্মব্যস্ত জীবনের মধ্যে সঙ্গীত ও সাহিত্য চর্চা চালিয়ে গেছেন।
বিশেষ করে তাঁর সাথে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গীতবিষয়ক আলোচনা এবং পত্রালাপ তৎকালীন সঙ্গীত
জগতেকে বিশেষভাবে আলোড়িত করেছিল। তাঁর রচিত 'কথা ও সুর' গ্রন্থটিতে তাঁর সঙ্গীতবিষক
ভাবনার কথা জানা যায়। এছাড়া রবীন্দ্রনাথের সাথে পত্রালাপ সংকলন 'সুর ও সংগীত'
নামে প্রকাশিত হয়েছিল।
ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের রচিত গ্রন্থাবলি:
- বাংলা গ্রন্থ
সুর ও সঙ্গতি (১৯৩৫)। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে সহ-রচিত।
- আবর্ত (১৯৩৭)
- মোহানা (১৯৩৪)
- আমরা ও তাঁহারা (১৯৩১)
- মনে এলো
ঝিলিমিলি
চিন্তসি (১৯৩৪)
- কথা ও সুর (১৯৩৮)
- Basic Concepts in Sociology (সমাজবিজ্ঞানের মৌলিক ধারণাসমূহ, ১৯৩২)
- Personality and the Social Sciences (ব্যক্তিত্ব এবং সামাজিক বিজ্ঞান, ১৯২৪)
- Indian Music: An Introducton (ভারতীয় সঙ্গীত: পরিচিতি, ১৯৪৫)
- Modern Indian Culture: A Sociological Study (আধুনিক ভারতীয় সংস্কৃতি: একটি সমাজতাত্ত্বিক গবেষণা, ১৯৪২
- Problems of Indian Youth (ভারতীয় তরুণদের সমস্যা, ১৯৪২)
- Views and Counterviews (মতামত এবং পাল্টা মতামত, ১৯৪৬)
- On Indian History (ভারতের ইতিহাসে, ১৯৪৪)
- Diversities (বৈচিত্র্য)
Realist (বাস্তববাদী)
সূত্র: