হরুঠাকুর

(১৭৪৯-১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দ)
বাংলা গানের মধ্যযুগীয় গীতিকার এবং গায়ক।

১৭৪৯ খ্রিষ্টাব্দে (১১৪৫ বঙ্গাব্দ) কলকাতার সিমুলিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম কালীচন্দ্র দীর্ঘাঙ্গী। হরুঠাকুরের মূল নাম ছিল হরেকৃষ্ণ। জাতিতে বৈদিক শ্রেণির ব্রাহ্মণ ছিলেন। লোকমুখে ইনি হরুঠাকুর নামে পরিচিতি লাভ করেছিলেন।

শৈশবে পাঠশালায় তাঁকে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে তাঁকে গঙ্গা-বন্দনা, দাতাকর্ণ, চাণক্যশ্লোক' প্রভৃতি কণ্ঠস্থ করতে হয়েছে। সেই সূত্রে তাঁর সঙ্গীতের পাঠ শুরু হয়েছিল। বড় হয়ে তিনি নিজেই গান বাঁধা এবং গাওয়া শুরু করেন। ধীরে ধীরে বর্ধমান, কৃষ্ণনগর, বিষ্ণুপুর অঞ্চলে তাঁর গানের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। সেকালে কবি গানের খুব কদর ছিল। প্রথমে তিনি একটি সখের কবিগানের দল করেন। কিন্তু সখের দল নিয়ে দেশবিদেশে অনুষ্ঠান করাটা মুশকিল হয়ে পড়লে, তিনি সখের দলটিকে পেশাদারি কবিগানের দল করেন।

কথিত আছে রাজ সভায় একটি কবিতার চরণ উল্লেখ করে, তা পূরণ করার জন্য সভাকবিদের আহ্বান করেন। এই চরণটি ছিল
               'বড়শি গিলেছে যেন চাঁদে'
সভায় উপস্থিত কবিরা এই চরণটি সম্পূর্ণ করতে অক্ষম হলে, হরু ঠাকুরকে ডাকা হয়। হরুঠাকুর সভায় এসে তৎক্ষণাৎ এই চরণটি সম্পূর্ণ করে বলেন-
              একদিন শ্রীহরি, মৃত্তিকা ভোজন করি, ধুলায় পড়িয়া বড়ো কাঁদে।
              রানি অঙ্গুলি হেলায়ে ধীরে, মৃত্তিকা বাহির করে, বড়শি গিলেছে যেন চাঁদে

এরপর মহারাজ সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে এক হাজার টাকা পুরস্কার দেন। পরে মহারাজ তাঁকে সভাসদদের অন্তর্ভুক্ত করেন। এর ফলে তাঁর পক্ষে কবিগানের দল পরিচালনা অসম্ভব হয়ে পড়ে। সে সময় রাজবাড়িতে বা অন্যান্য অভিজাত ধনীগৃহে কবির লড়াই হলে, তিনি বিচারক হিসেবে উপস্থিত থাকতেন।

হরুঠাকুর ছিলেন রঘুনাথ দাস-এর
একনিষ্ঠ শিষ্য। প্রথম দিকে তিনি হরুঠাকুর-এর গানগুলো সংশোধন করে দিতেন। কৃতজ্ঞতা স্বরূপ হরুঠাকুর এই গানগুলোর ভণিতায় গুরুর নাম হিসেবে 'রঘু', 'দাস রঘুনাথ' নাম ব্যবহার করেছেন। দুর্গাদাস লাহিড়ি সম্পাদিত বাঙালির গান গ্রন্থে তাঁর ৪২টি কবিগানের নমুনা আছে। হরুঠাকুরে অন্যতম শিষ্য ছিলেন ভোলা ময়রা। হরুঠাকুর এই শিষ্যের জন্য বহু গান রচনা করেছিলেন।

১৮২৪ বঙ্গাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
 



সূত্র :
বাঙালির গান। দুর্গাদাস লাহিড়ি সম্পাদিত। এপ্রিল ২০১।