জন শোর, স্যার
Sir John Shor
(১৭৫১-১৮৩৪ খ্রিষ্টাব্দ)
ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির তৃতীয়
গভর্নর জেনারেল এবং রাজস্ব বিশেষজ্ঞ।

১৭৫১ খ্রিষ্টাব্দের ৫ অক্টোবর পিকাডেলির জেমস স্ট্রিট-এর মেল্টন প্লেস-এ জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম থমাস শোর।

১৪ বৎসর বয়সে জন শোরকে হ্যারো স্কউলে ভর্তি হন। ১৭ বৎসর বয়সে তিনি এই স্কুল ছেড়ে হোক্স্‌টোন-এর কমার্সিয়াল স্কুলে ভর্তি হন। উদ্দেশ্য ছিল এখান  থেকে হিসাবরক্ষা বিষয়ক পাঠ শেষ করে, তাঁদের পারিবারিক বন্ধু ফ্রেড্রিক পিগৌ'র ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ পাবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১৭৬৮ খ্রিষ্টাব্দে ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি'র শিক্ষানবিশ করণিকের চাকরি নিয়ে ভারতে আসার উদ্দেশ্যে জাহাজে উঠেন। ১৭৬৯ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের কলকাতা নগরে পৌঁছান। এখানে এসে তিনি ওয়ারেন হেস্টিংস-এর সঙ্গে কোম্পানির রাজনৈতিক গোপনীয় শাখায় কাজ শুরু করেন। ১৭৭০ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে মুর্শিদাবাদের রাজস্ব বোর্ডে নিয়োগ পান।
এই সময়ই তিনি ফারসি ও বাংলা ভাষায় পারদর্শিতা লাভ করেন।

ওয়ারেন হেস্টিংসের শাসনকালেই ১৭৭২ তিনি রাজশাহী অঞ্চলের রাজস্ব বিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। ১৭৭৩ খ্রিষ্টাব্দে মুর্শিদাবাদ রাজস্ব বোর্ডের সচিব হন এবং অস্থায়ী ফারসি অনুবাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৭৭৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতা রাজস্ব পরিষদ সদস্যপদ লাভ করেন। ১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা রাজস্ব পরিষদ বিলুপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এই পদে ছিলেন।

ওয়ারেন হেস্টিংস-এর পরে ১৭৮৬ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ ভূস্বামী শ্রেণির অন্যতম সদস্য এবং সেনানায়ক লর্ড কর্নওয়ালিসকে গভর্নর জেনারেল করে পাঠানো হয়। জন শোরের শুরু থেকেই লর্ড কর্নওয়ালিসকে বিরোধিতা করা শুরু করেন। শোর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ধারণার বিরোধিতা না করেই, যুক্তি দেখান যে, অনতিবিলম্বে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করার মতো যথেষ্ট তথ্য তাদের হাতে নেই। তিনি এই আইন চালু করার জন্য দুই বা তিন বছর সময়ের প্রয়োজন আছে বলে তাঁর প্রস্তাবে উল্লেখ করেন।

পক্ষান্তরে, কর্নওয়ালিস যুক্তি দেন যে, গত বিশ বছরে সংগৃহীত তথ্যই চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত সম্পাদনের জন্য যথেষ্ট এবং কোনো এক বা একাধিক তরফের বেলায় কোনো ত্রুটি ধরা পড়লে, সেগুলি চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সু-প্রভাবে অচিরেই দূর হয়ে যাবে। কর্নওয়ালিস ও শোর তাদের নিজ নিজ অভিমত এবং এতদ্‌সংক্রান্ত যাবতীয় দলিলপত্র, কোম্পানির পরিচালক সভার কাছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। তবে এরা দুজনই একমত হন যে, কাউন্সিলের অনুমতির জন্য বসে না থেকে দশশালা বন্দোবস্ত চালু করা হোক এবং ১৭৯০ থেকে কার্যকর হবে। এই সিদ্ধান্ত অনুসারে দশশালা ব্যবস্থা চালু হয়ে যায়। ১৭৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শ মার্চ লর্ড কর্নওয়ালিস ঘোষণা করেন যে, দশশালা বন্দোবস্তের মেয়াদ অতিক্রান্ত হওয়ার পর, জমিদাররা তাদের নিজ নিজ জমিদারির নির্ধারিত রাজস্বের রদবদল করা হবে না। এছাড়া, তাদের ওয়ারিশ ও আইনগতভাবে অন্যান্য উত্তরাধিকারীদেরকে এ পরিমাণ প্রদেয় রাজস্বের ভিত্তিতে চিরস্থায়ীভাবে তালুকের ভোগদখল করার অনুমতি দেওয়া হবে (ইস্তাহার অনুচ্ছেদ ৩, ধারা ৪, প্রবিধান ১, ১৭৯৩)। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ছাড়াও, ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মহীশূরের রাজা টিপু সুলতানকে সংযত রাখার জন্য কর্নওয়ালিসের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ১৭৯০ খ্রিষ্টাব্দে কর্নওয়ালিস নিজে মহীশূরের সুলতানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনা করেন এবং মহীশূর রাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ কোম্পানি রাজ্যের সাথে অন্তর্ভুক্ত করেন। টিপু সুলতানকে পরাজিত এবং একটি আরোপিত শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরে বাধ্য করে কর্নওয়ালিস কোম্পানি রাজ্যের নিরাপত্তা বলয় বৃদ্ধি করেন।

রাজনৈতিক অত্যাবশ্যকতা ও লর্ড কর্নওয়ালিসের প্রভাবের কারণে কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পক্ষে রায় প্রদান করে এবং ১৭৯৩ সালের মার্চে বন্দোবস্ত কার্যকরী হয়। তবে শোর তাঁর পুরস্কার পান। শোরের যুক্তি ও জ্ঞান এবং জনগণ ও কোম্পানির স্বার্থ সংরক্ষণে তাঁর প্রকৃত আগ্রহে কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স এতটা প্রভাবিত হন যে, কর্নওয়ালিসের বিদায়ের পর তাঁরা ১৭৯৩ সালে তাঁকে গভর্নর জেনারেল পদে নিয়োগ করেন।

১৭৯৫ সালে তিনি খারদা যুদ্ধে (
Battle of Kharda) নিজাম ও মারাঠাদের বিরূদ্ধে ইংরেজ বাহিনীর নেতৃত্ব দেন। এই যুদ্ধে নিজাম পরাজিত হন। তাঁর শাসন আমলে প্রথম চার্টার অ্যাক্ট
১৭৯৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৭৯৮ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন-
লর্ড ওয়েলেসলি।

১৮৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।


সূত্র :