তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয়েছিল গুপ্তিপাড়ায়। এরপর ১৭৭০-৭১ খ্রিষ্টাব্দের দিকে শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে কাশীতে আসেন। এখানে তিনি সঙ্গীত ও বেদান্ত দর্শন শেখেন। এরপর তিনি সঙ্গীতের উচ্চতর পাঠ গ্রহণের জন্য দিল্লী, লক্ষ্ণৌ-তে যান। এখানে তিনি সঙ্গীত শিক্ষার পাশাপাশি ফার্সি ভাষা শেখেন। বারনসীতে প্রায় ১০ বৎসর বিভিন্ন শিক্ষকের কাছে ভারতীয় সঙ্গীত শিক্ষা করেন। বারানসীতে থাকার সময় কালী মীর্জা টপ্পা শিখেছিলেন মিঞা গাম্মু'র (শোরী মিঞা'র শিষ্য) শিষ্যদের কাছ থেকে। কারও কারও মতে তিনি মিঞা গাম্মু'র শিষ্য শাদে খাঁর কাছে টপ্পা শিখেছিলেন।
১৭৮০-৮১ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি সঙ্গীত শিক্ষা শেষে পৈত্রিক বাসস্থান
গুপ্তিগ্রামে ফিরে আসেন। কিছুদিন পর স্থানীয় এক ব্রাহ্মণ কন্যাকে বিবাহ করেন।
গ্রামে ফিরে তিনি অন্য পেশার পরিবর্তে সঙ্গীতকে বেছে নেন। তিনি ধনীদের সঙ্গীত আসরে
সম্মানীর বিনিময়ে গান শোনাতেন এবং সম্মানীর বিনিময়ে সঙ্গীতের পাঠদান করতেন। তাঁর
শিষ্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন অম্বিকাচরণ।
রাজা
রামমোহন রায় তাঁর কাছে সঙ্গীতের
পাঠ নেন।
১৮০৫ খ্রিষ্টাব্দে দিকে তিনি বরধ্মানের রাজা প্রতাপচাঁদের দরবারের সভাগায়ক
নিযুক্ত হন। কলকাতার গোপীমোহনের সঙ্গীতসভায় তাঁর যাতায়াত ছিল। দীর্ঘদিন পশ্চিমের
ওস্তাদ ও অভিজাতদের সংস্পর্শে থেকে, ওই অঞ্চলের অভিজাত মুসলমানদের পোশাকে অভ্যস্থ
হয়ে পরেন। বাংলাদেশে ফিরে আসার পরও তিনি ওই জাতীয় পোশাকই পরতেন।
অভিজাত মুসলমানদের পোশাক পড়ার কারণে তিনি কালী মীর্জা নামে পরিচিত হয়ে উঠেন।
তিনি একাধারে গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক ছিলেন। তিনি নিধুবাবু'র অনেক আগে থেকে বাংলা টপ্পার প্রচলন করেন। উল্লেখ্য, ছাপরা থেকে কলকাতায় ফিরে নিধুবাবু'র বাংলা টপ্পা শুরু করেন ১৭৯৪ খ্রিষ্টাব্দে। সময়ের নিরিখে বাংলা টপ্পার আদি পুরুষ বলতে কালী মির্জাকে বিবেচনা করা হয়। বাংলা টপ্পার প্রচলনের ক্ষেত্রে নিধুবাবু'র বিশেষ অবদান হলো- তিনি এই গানকে জনপ্রিয় করে তুলতে সক্ষম হয়েছিললেন। তাছাড়া নিধুবাবু'র একরকম ধ্যানজ্ঞানই ছিল বাংলা টপ্পা। কালী মীর্জা এই বিচারে অতটা নিষ্ঠাবান ছিলেন না। তিনি বাংলা টপ্পার সাথে সাথে হিন্দুস্থানী টপ্পা এবং ধ্রুপদ, খেয়াল গানের চর্চা করতেন।
তাঁর জীবদ্দাশাতেই তাঁর পত্নী এবং সন্তানদের মৃত্যু হয়। এছাড়া তাঁর অতি প্রিয় ছোট ভাইও মৃত্যুবরণ করেন। এই সব শোক সহ্য করতে না পেরে তিনি কাশীতে চলে যান। ১৮২০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি কাশীতে পরলোকগমন করেন।
যতীন্দ্রমোহন ঠাকুরের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত 'গীতলহরী' গ্রন্থে কালী মীর্জার ২৩৭টি গান পাওয়া যায়। দুর্গাদাস লাহিড়ি সম্পাদিত বাঙালির গান গ্রন্থে তার রচিত ৯১টি গান পাওয়া যায়।
তথ্যসূত্র
:
সংসদ বাঙালি চরিতাবিধান (প্রথম খণ্ড)। জানুয়ারি ২০০২।
বাঙালির রাগসঙ্গীত চর্চা। দীলিপকুমার মুখোপাধ্যায়।