প্রবোধকুমার সান্যাল
১৯০৫-১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দ
সাহিত্যিক, সাংবাদিক, পরিব্রাজক। সাহিত্যিক ছদ্মনাম 'কীর্তনিয়া'।
১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দের ৭ জুলাই (শুক্রবার
২৩ আষাঢ় ১৩১২) কলকাতার
গোয়াবাগানের ৪ নম্বর রাধানাথ বোস লেনে জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁদের আদি নিবাস ছিল ফরিদপুরে। পরে এঁদের পূর্বপুরুষরা কলকাতার বালিগঞ্জে
বসবাস শুরু করেছিলেন। বাবা রাজেন্দ্রনাথ সান্যাল ও মা বিশ্বেশ্বরী দেবী। জন্মের চার
মাস পরে তাঁর পিতা রাজেন্দ্রনাথ সান্যালের মৃ্ত্যু হয়।
এই সময় বিশ্বেশ্বরী দেবী সন্তান-সহ তাঁর শ্যামবাজারে
তাঁর মা দ্রাক্ষাময়ী দেবীর কাছে চলে আসেন। ফলে প্রবোধকুমারের শৈশব শুরু হয়েছিল মামা বাড়িতে।
প্রাথমিক শিক্ষা শেষে প্রবোধকুমার কলকাতার স্কটিশচার্চ কলেজিয়েট স্কুল
ভর্তি হন। এই স্কুলের পাঠ শেষ করে তিনি সিটি কলেজে
অধ্যয়ন করেন।
১৯২০ খ্রিষ্টাব্দ (১৩২৭ বঙ্গাব্দ)
বিজলী নামক চলচ্চিত্র
বিষয়ক পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল। পত্রিকাটির প্রধান উদ্যোক্তাদের মধ্যে তিনি ছিলেন।
কিছুদিন তিনি এই পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে
গান্ধীজির ডাকে
অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন এবং কারাবরণ করেন।
১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে
কল্লোল পত্রিকায় তাঁর 'মার্জনা' গল্পটি প্রকাশিত হয়। এই
সময় গল্প লেখার পাশাপাশি নানাবিধ পেশায় অর্থ উপার্জনের চেষ্টা
করেছেন। তিনি কিছুদিন কলকাতার তৎকালীন লবণ হ্রদ এলাকায়
মাছের ব্যবসা করেছেন। শিয়ালদহ লাইনে ট্রেনের
কামরায় তিনি 'বিচিত্রা' পত্রিকা
ফেরি করেছেন। এছাড়া অতুলপ্রসাদ সেনের
'উত্তরা' পত্রিকার
ক্যানভাসার বিহারে নানা স্থানে গিয়েছেন।
এছাড়া আলমবাজারের জুটমিল, শ্রীরামপুরের ডাকঘর ও বারাণসীর
ইন্ডিয়া প্রেসে চাকরি করেছেন। তিনি হুগলির ডাকবিভাগ ও সামরিক বিভাগের হিসাবরক্ষণ
শাখায় চাকরি করেছেন।
১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সেনাবাহিনীর সাথে উত্তর পশ্চিম ভারতের দুর্গম এলাকায় যান।
এই সময় তিনি উত্তর পশ্চিম ভারতের
বহুস্থান ভ্রমণ করেন।
১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর প্রথম উপন্যাস 'যাযাবর' প্রকাশিত হয়।
লেখালেখির সূত্রে তিনি তৎকালীন সাহিত্যমহলে জনপ্রিয়তা লাভ করেন।
সেময় তাঁর 'কল্লোল', 'প্রবাসী', 'কালিকলম', 'উত্তরা' ইত্যাদি পত্রিকার সাথে গভীর
সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর
সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছিল 'স্বদেশ' নামক একটি পত্রিকা। প্রথম বর্ষ প্রথম সংখ্যা
প্রকাশিত হয়েছিল
১৩৩৮ বঙ্গাব্দের আষাঢ় মাসে (জুন ১৯৩১) ।
১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কেদারনাথ, বদ্রীনাথ ভ্রমণ করেন। পরে হৃষিকেশ থেকে পার্বত্য শহর রাণীক্ষেত পর্যন্ত প্রায় ৪০০ মাইল পথ পায়ে হেঁটে পরিক্রমণ করেছিলেন ৩৮ দিনে।
১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি যুগান্তর পত্রিকার রবিবাসরীয়
সাহিত্য বিভাগের সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন।
১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ জানুয়ারি ফরিদপুর জেলার বিপিনবিহারী
মৈত্রর কন্যা জয়ন্তীকে তিনি বিবাহ করেন। সেই বছরেই তাঁদের প্রথম সন্তান বাণীর জন্ম
হয়।
১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের যুগান্তর পত্রিকার চাকরি ছেড়ে দিয়ে সাহিত্য রচনায় মন দেন।
১৯৪৭-এর বাংলাভাগকে কেন্দ্র করে তৎকালীন সামাজিক ও রাজনৈতিক
পরিস্থিতি নিয়ে লেখা বিতর্কিত এই উপন্যাসটি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার
১৪/৭/১৯৫৫ তারিখে বিজ্ঞপ্তি জারি করে বাজেয়াপ্ত করেছিল।
১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে আগ্রায় নিখিল ভারত বঙ্গ-সাহিত্য সম্মেলনে তিনি সভাপতিত্ব করেন
১৯৫৭ খ্রিষ্তাব্দে ব্রহ্মদেশে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত বঙ্গ-সাহিত্য সম্মেলনে তিনি সভাপতিত্ব করেন। এছাড়া
এই বছরে তিনি পাকিস্তানে ভারতীয় সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন এবং পরের বছর সোভিয়েট রাশিয়ার আমন্ত্রণে তাসখন্দে অনুষ্ঠিত আফ্রো-এশীয় সাহিত্য সম্মেলনে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন।
১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতায় 'হিমালয়ান অ্যাসোসিয়েশন' নামে
একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
১৯৬৮
খ্রিষ্টাব্দে তিনি হিমালয়ান
ফেডারেশনের সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে সুইডেনের স্টকহোমে ভাইঝি জামাইয়ের সাহায্যে
গিয়েছেন উত্তরমেরু অভিযানে। এই সময়
তিনি উত্তরমেরু ভ্রমণ করেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ৭৩ বৎসর।
১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে মধ্যপ্রদেশের বাস্তার জেলার দণ্ডকারণ্য
অঞ্চল ঘুরতে গিয়ে জিপ দুর্ঘটনায় আহত হন। এরপর তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন এবং প্রায় ৬ মাস
শ্যাসায়ী ছিলেন।
১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ এপ্রিল, ৬ বালিগঞ্জ টেরেসের বাড়িতে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।
সম্মাননা:
- শিশির কুমার পুরস্কার, মতিলাল পুরস্কার (১৯১০)
- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্ণপদক (১৯১১)
- শরৎ পুরস্কার এবং আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন (১৯৮০)।
সাহিত্যকর্ম
- উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থ
- যাযাবর (১৯২৮)
- প্রিয়বান্ধবী (১৯৩১)
- অগ্রগামী (১৯৩৬)
- আঁকাবাঁকা (১৯৩৯)
- পুষ্পধনু (১৯৫৬)
- বিবাগী ভ্রমর
- হাসুবানু
- বনহংসী
- কাঁচ কাটা হীরে
- নিশিপদ্ম
- ভ্রমণকাহিনি
- মহাস্থানের পথে
- দেবাত্মা হিমালয়
- উত্তর হিমলায় চরিত
- পর্যটক পত্র
- অন্যান্য
- বনস্পতির বৈঠক (১ম ২য় খণ্ড)
সূত্র: