রামশরণ পাল
কর্তাভজা সম্প্রদায়ের কর্তাবাবা।

তাঁর জন্মমৃত্যু কাল নিয়ে মতভেদ আছে। সব মিলিয়ে মোটা দাগে বলা যায়,
আনুমানিক ১১২৫-১১৫০ বঙ্গাব্দের (১৭১৮- ১৭৪৩ খ্রিষ্টাব্দ) মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এবং সম্ভবত ১১৮৯ বঙ্গাব্দের দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কথিত আছে,
কর্তাভজা সম্প্রদায়ের আদি গুরু আউলচাঁদ, বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করার পর কিছুদিন বজরা গ্রামে কিছুকাল কাটান। এই সময় জগদীশপুরের নন্দরাম পাল আউলচাঁদের দর্শনে আসেন। রামশরণের প্রথমা স্ত্রীর মৃত্যুর পর, তিনি সরস্বতীকে বিয়ে করেন।

আউলচাঁদ তাঁর দীক্ষাগুরু বলরামের সাথে দেশ ভ্রমণে বের হন, তখন রামশরণের অল্প বয়স ছিল। শৈশব থেকেই তিনি আধ্যাত্মিক দর্শনের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন এবং সংসার বিরাগী মনোভাবাপন্ন হয়ে ওঠেন। যতদূর জানা যায়, তাঁকে সংসারি করার জন্য অল্পবয়সে বিয়ে দেওয়া হয়। এই স্ত্রীর মৃত্যুর পর, তিনি সরস্বতীকে বিয়ে করেন। পরে তিনি সস্ত্রীক ঘোষ পাড়ায় এসে বসবাস করতে থাকেন। কিছুদিন পর
আউলচাঁদ নানা তীর্থভ্রমণ করে ঘোষ পাড়ায় আসেন। কথিত আছে রামশরণ দীর্ঘদিন রোগে ভুগছিলেন। আউলচাঁদ আসার পর তিনি সুস্থ হয়ে যান। এই ঘটনার পর, রোগ মুক্তির জন্য বহু মানুষ তাঁর কাছে আসতেন। এই সূত্রে তাঁর ভক্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই সময় তিনি আউলচাঁদের কাছে দীক্ষা নেন। এঁদের ভিতরে তাঁর ২২জন শিষ্য তাঁর আধ্যাত্মজ্ঞান ধারণ করতে সক্ষম হন এবং এঁরা মহাশয় (ধর্মগুরু) হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। এদের ভিতরে শীর্ষস্থানীয় ছিলেন- রামশরণ পাল।

রামশরণ ছিলেন পেশায় সাধারণ কৃষক। তিনি
আউলচাঁদের সংস্পর্শে এসে আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভ করেন। এছাড়া তিনি আউলচাঁদের কাছে চিকিৎসাবিদ্যা আয়ত্ব করেছিলেন। আউলচাঁদের মৃ্ত্যুর পর তিনি স্থানীয় মানুষের চিকিৎসা করতেন। হয়তো তাঁর চিকিৎসায় সেকালের দুরারোগ্য রোগ থেকে অনেকে সুস্থ হয়ে উঠেছিল। এই সূত্রে স্থানীয় মানুষের মধ্যে ধারণা জন্মেছিল যে, তিনিও আউলচাঁদের মতো অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী। তিনি নারীর বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। তাঁর আধ্যাত্বিক ভাবনা এবং রোগ নিরাময় ক্ষমতার কারণে কর্তাভজার অনুসারীরা সব মিলিয়ে রামশরণকে আউলচাঁদের উত্তরসূরী হিসেবে মনোনীত করেছিলেন। মূলত তাঁর দ্বারাই কর্তভজা ধর্ম আনুষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছিল।

কথিত আছে, সরস্বতী (
সতী মা) আউলচাঁদের মতো একটি সন্তান কামনা করেছিলেন। সরস্বতী ঠাকুরের মতো সন্তান লাভের যে আজ্ঞালাভ করেছিলেন, তা তিনি লাভ করেছিলেন ঠাকুরের মৃত্যুর প্রায় ৬ বছর পরে। তাঁর পুত্রের নাম রাখা হয়েছিল দুলালচাঁদ (রামদুলাল)। এছাড়া তিনি আউলচাঁদকে নিজের সন্তানের মতো স্নেহ করতেন, কিন্তু ভক্তি করতেন গুরুর মতো। তিনি আউলচাঁদের অলৌকিক শক্তি লাভ করেছিলেন। এই বিশ্বাস থেকে সতী মা শরণপালের  মৃত্যুর পর কর্তাভজাদের পরিচালিকা পদে অধিষ্ঠিতা হন।

তিনি কর্তভজা ধর্মের অনুসারীদের নিয়ে মেলার আয়োজন করেন।
 রামশরণের মৃত্যুর পর, তাঁর স্ত্রী সরস্বতী কর্তাভজা সম্প্রদায়ের দায়িত্বগ্রহণ করেন। 

 সূত্র: