রমেশ শীল
[১৮৭৭-১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দ]
কবিয়াল, মাইজভাণ্ডারী গানের সাধক ও রচয়িতা, ব্রিটিশ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী ও বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের ভাষাসৈনিক
।
১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দের
বাংলাদেশের
চট্টগ্রাম সদর জেলার
বোয়ালখালি থানার অন্তর্গত গোমদণ্ডী গ্রামে জন্মগ্রহণ
করেন। তাঁর পিতা চণ্ডচরণ শীল পেশায় ছিলেন নাপিত ও কবিরাজ। চতুর্থ শ্রেণিতে অধ্যায়নকালে তাঁর মৃত্যুবরণ হলে করলে, রমেশ সংসারের প্রয়োজনে নাপিতের কাজ শুরু করেন। পরে ভাগ্যান্বেষণে তিনি বার্মার (বর্তমান মিয়ানমার) রেঙ্গুন শহরে গমন করেন। সেখানে তিনি একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে যোগ দেন এবং পরবর্তীতে একটি দোকানেরও মালিক হন। কিন্তু
দেশের টানে তিনি নিজের গ্রামে ফিরে আসেন। গ্রামে এসে তিনি পূর্বের নরসুন্দর কাজের পাশাপাশি কবিরাজ হিসেবে কাজ শুরু করেন। এই কবিরাজি করতে করতেই কবিগানের প্রতি তিনি ভীষণ ভাবে অনুরাগী হয়ে উঠেন।
দেশে ফিরে তিনি কবি গানের প্রতি আকৃষ্ট হন। এই সূত্রের তিনি কবি গান রচনা এবং
পরিবেশন করা শুরু করেন। ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি প্রথম মঞ্চে কবিগান পরিবেশন করে সমাদৃত হন। ১৮৯৯
খ্রিষ্টাব্দে
কবিগানের আসরে তিনি তিনজন কবিয়ালকে পরাজিত করলে, আসরের
আয়োজকদের কাছ থেকে মোট তের টাকা সন্মানী লাভ করেন। এই সূত্রে পেশা হিসেবে কবিগানকে বেছে
নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এই সময় কবিগান গান ধীরে ধীরে রচিহীন এবং অশালীন গানে পরিণত হয়েছিল। অশ্লীলতা মুক্ত কবিগানের
চর্চার জন্য তিনি, ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে একটি সংগঠন তৈরির উদ্যোগ নেন। কবিয়ালদের এই সমিতির নাম রাখা হয় ‘রমেশ উদ্বোধন কবি সংঘ’।
এই সময় তিনি ধীরে ধীরে বাম রাজনীতির সাথে যুক্ত হন এবং সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ শুরু
করেন।
১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আনিষ্ঠানিকভাবে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন।
১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার শ্রদ্ধানন্দ পার্কে কবিকে সম্বর্ধিত ও ‘বঙ্গের শ্রেষ্ঠতম কবিয়াল’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ১৯৫৪
খ্রিষ্টাব্দে প্রাদেশিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের পক্ষে জোরাল অবস্থান নিয়েছিলেন। যে কারণে যুক্তফ্রন্ট সরকার ভেঙ্গে দেওয়ার পরে অন্যান্য নেতা-কর্মীর সাথে
তাঁকেও গ্রেফতার করা হয়। এই সময় তাঁর রচিত ‘ভোট রহস্য’ পুস্তিকাটি বাজেয়াপ্ত করে কেন্দ্রীয় সরকার। কবি দীর্ঘ্যদিন কারাভোগ করেন। ১৯৫৮
খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তানের সামরিক শাসনের বিরোধিতা করার কারণে ইতিপূর্বে প্রাপ্ত সাহিত্য ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়। শেষ জীবনে কবি নিদারুণ অর্থ কষ্টের সম্মুখিন হন।
১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দের ৬ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
পরিবার: প্রথম স্ত্রী ছিলেন অপূর্ববালা, এবং দ্বিতীয় স্ত্রী অবলাবালা। তিনি চার পুত্র ও এক কন্যার
জনক ছিলেন।
রমেশ শীলের রচিত গ্রন্থাবলী
- পাকিস্তান সঙ্গীত
- দেশ দরদী গানের বই
- লোক কল্যাণ
- ১৩৬৭ সালের তুফানের কবিতা
- এসেক সিরাজিয়া
- মহাকাব্য বহি
- ১৯৬৩ সালের তুফানের কবিতা
- শান্তির কবিতা ।
এছাড়াও রমেশ শীল বেদুঈন ছদ্দনামের "বদলতি জমানা" শীর্ষক এবং ঋষিভত্ত ছদ্মনামের
"ভণ্ড সাধুর" কবিতা শীর্ষক দু'টি পুস্তক প্রকাশ করে ছিলেন। তার অন্যান্য
প্রকাশনার মধ্যে রয়েছে, নিকুঞ্জ বিহারী চৌধুরী সহযোগে "গান্ধী হত্যার কবিতা"।
রমেশ শীলের
গানের তলিকা
সম্মাননা:
- ঢাকার কেন্দীর কারাগারে সহবন্দীদের আয়োজিত জন্মদিনের সংবর্ধনা, ১৯৫৮
- ঢাকার বুলবুল একাডেমী প্রদত্ত সংবর্ধনা, ১৯৬২
- চট্টগ্রামের নাগরিক সংবর্ধনা, ১৯৬৪
- একুশে পদক পুরস্কারে ২০০২ খ্রিষ্টাব্দ মরণোত্তর।