সুধীন দাশগুপ্ত
১৯২৯-১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দ
কণ্ঠশিল্পী, গীতিকার, সঙ্গীত পরিচালক।
১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই অক্টোবর
বাংলাদেশের যশোহর জেলার বড়কালিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম মহেন্দ্র দাশগুপ্ত।
তাঁর মূল নাম ছিল-সুধীন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত। তবে, সুধীন দাশগুপ্ত নামেই সমধিক পরিচিত
ছিলেন।
তার বাবা মহেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত দার্জিলিং সরকারী বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ছিলেন এবং
তার মা ছিলেন সমাজকর্মী। পিতার
কর্মসূত্রে তাঁর শৈশব কেটেছিল তিনি দার্জিলিংয়ে।
শৈশবে তাঁর সঙ্গীতের হাতেখড়ি হয়েছিল মায়ের কাছে এবং মায়ের উৎসাহেই তিনি সঙ্গীতজগতে
প্রবেশ করেন। তবে শৈশবে তাঁর বিশে ঝোঁক ছিল ব্যাডমিন্টন খেলাতে। মাত্র ১৩ বৎসর বয়সে সেকালের প্রখ্যাত ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় পিকে
সেনকে দার্জিলিং-এ পরাজিত করে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি তিনবার
ব্যাডমিন্টন চাম্পিয়ান হন।
ব্যাডমিন্টন খেলার পাশাপাশি শৈশবে তিনি শিখেছিলেন পিয়ানো, মাউথ অর্গ্যান, সেতার
ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র। প্রথম দিকে পিতা মহেন্দ্রনাথ
দাশগুপ্ত সুধীন্দ্রের সঙ্গীতপ্রীতিকে ততটা উসাহ দেন নি। কিন্তু
সুধীন্দ্রের আগ্রহ দেখে, তিনি সঙ্গীত শিক্ষার জন্য লণ্ডনে
পাঠান এবং সেখানকার রয়াল কলেজ অব মিউজিক
নামক প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন। এই কলেজ থেকে তিনি মাস্টার ডিগ্রি লাভ
করেছিলেন।
১৯৪৯-৫০ খ্রিষ্টাব্দে তার পরিবার কলকাতায় স্থায়ীভাবে চলে আসে। লণ্ডন থেকে
পাশ্চাত্য সঙ্গীতের পাঠ নিয়ে ফেরার পর, তিনি
পিতামাতার সাথে কলকাতায় থাকা শুরু করেন। এই সময় ভারতীয় শাস্ত্রীয় নিয়ে চরচা করা শুরু
করেন। তিনি ভাতখণ্ডেজির রাগসঙ্গীত বিষয়ক গ্রন্থসমূহ
এবং অন্যান্য শাস্ত্রীয় সঙ্গীত-বিষয়ক গ্রন্থাদি পাঠ করে
তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জন করেন। সেই সাথে তিনি রাগসঙ্গীতের চর্চা
শুরু করেন। কথিত আছে তিনি সেতার শিখেছিলেন এনায়েৎ খাঁর রেকর্ড শুনে শুনে।
ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পাশাপাশ তিনি আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন
বাংলা লোকগানের প্রতি। তিনি ব্যক্তিগতভাবে বাংলা লোকগানের বিশাল ভাণ্ডার
গড়ে তুলেছিলেন।
১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে তিনি ধীরে ধীরে বাঙালা আধুনিক সংগীতের সাথে জড়িয়ে পরেন।
প্রথম দিকে তিনি সংগীত পরিচালক
কমল দাশগুপ্ত
সহকারি হিসেবে কাজ শুরু করেন। এর পাশাপাশি
তিনি কলকাতা
গণনাট্য সংঘের
আসা-যাওয়া শুরু করেন। পরে তিনি এই সংঘের জন্য গান তৈরির করার দায়িত্ব
গ্রহণ করেন। এই সময় হিস মাস্টার ভয়েস (এইচ এম ভি) এর ক্ষীতিশ বসু তাঁকে আধুনিক বাঙালা গান তৈরির সুযোগ
করে দেন। এই সূত্রে তিনি ১৯৫৩
খ্রিষ্টাব্দে তিনি 'কতো আশা, কতো ভালোবাসা' ও
'কেনো আকাশ হতে' শীর্ষক দুটি আধুনিক বাঙালা গানে সুর দেন।
এই গান দুটির শিল্পী ছিলেন বেচু দত্ত।
১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি লেখেন প্রখ্যাত গান 'এত সুর আর এত গান'। গানটি গেয়েছিলেন
তাঁর বন্ধু সুবীর সেন।
১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে তাঁর প্রথম অভিষেক হয় তার। ছবিটির
নাম ছিল 'উল্কা'। ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ২৩ ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ মার্চ।
[প্রচার-পত্র]
১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে
তারাশঙ্কর
বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'ডাক হরকরা' গল্প অবলম্বনে তৈরিকৃত চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে
দায়িত্ব পালন করেন। ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ১১ এপ্রিল।
[প্রচার
পুস্তিকা] মূলত ছবির সূত্রে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। বিশেষ
করে এই ছবিতে
ছবিতে গীতা দত্তের গাওয়া 'কাঁচের চুড়ির ছটা' [শ্রবণ
নমুনা] গানটির জন্য জনপ্রিয়তা লাভ করে ছিল।
১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিপ্রাপ্ত ছায়াছবি 'গলি থেকে রাজপথ'। এই
ছবিতে প্রথম উত্তম কুমারের
অধরাভিনয়ে প্রথম নেপথ্য সঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন
মান্না দে।
উল্লেখ্য সে সময়
চলচ্চিত্রে উত্তমের কণ্ঠে দিতেন মূলত হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।
সুধীন দত্ত চমক হিসেবে ব্যবহার
করেছিলেন। এই বছরের নরেন্দ্রমিত্রের কাহিনী অবলম্বনে হেডমাস্টার' অগ্রগামী
পরিচালিত ছায়াছবি মুক্তি পায়। ছবিটিএই ছবির সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন সুধীন দাসগুপ্ত।
১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে সুধীনদাশ গুপ্তের সঙ্গীত পরিচালনায় 'শঙ্খবেলা' ছবিতে উত্তম
কুমারের ওষ্ঠাধরে প্রথম কণ্ঠ দান করেন। এই গানটি হলো‒
কে প্রথম কাছে এসেছি।
এই
নারী কণ্ঠের জন্য আগেই নির্বাচন করা হয়েছিল লতা
মুঙ্গেশকরকে। তাই পুরুষকণ্ঠের সামঞ্জস্য রক্ষা করার জন্য কিশোর কুমারের কথা ভাবা
হয়েছিল। কিন্তু উত্তমকুমার ও বিভূতি লাহার আপত্তিতে শেষ পর্যন্ত
মান্না দে
কণ্ঠ দিয়েছিলেন।
১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দের
৯ জানুয়ারি তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেন।
পরিবার:
স্ত্রী: মঞ্জুশ্রী সেনগুপ্ত
পুত্র: সৌম্য সেনগুপ্ত
কন্যা: সবেরি
সঙ্গীত-পরিচালনা ও সুরকার
ডাক হরকরা (১৯৫৭)। [প্রচার পুস্তিকা]
হেডমাস্টার (১৯৫৮)
গলি থেকে রাজপথ (১৯৫৯)
প্রবেশ নিষেধ (১৯৬০)
যাত্রী (১৯৬০)
পঙ্কতিলক (১৯৬১)
কান্না (১৯৬২)
নিশীথে (১৯৬৩)
তাহলে (১৯৬৪)
দুই পর্ব (১৯৬৪)
আকাশ কুসুম (১৯৬৫)
শঙ্খবেলা (১৯৬৬)
আকাশ চোরা (১৯৬৭)
অভিশপ্ত চম্বল (১৯৬৭)
কখনো মেঘ (১৯৬৮)
তিন ভুবনের পারে (১৯৬৯)
প্রথম কদম ফুল (১৯৬৯)
মঞ্জরী অপেরা (১৯৭০)
জয় বাংলা (১৯৭১)
ছদ্মবেশী (১৯৭১)
অরণ্য (১৯৭১)
জীবন সৈকতে (১৯৭২)
পিকনিক (১৯৭২)
জবান (১৯৭২)
হার মানা হার (১৯৭২)
সজারুর কাঁটা (১৯৭২)
এপার ওপার (১৯৭৩)
জীবন রহস্য (১৯৭৩)
বসন্ত বিলাপ (১৯৭৩)
রাতের রজনীগন্ধ্যা (১৯৭৩)
নিশিকন্যা (১৯৭৩)
সোনার খাঁচা (১৯৭৩)
প্রান্তরেখা (১৯৭৪)
সঙ্গিনী (১৯৭৪)
শর্মিলা (১৯৭৫)
সেদিন দুজনে (১৯৭৫)
পালঙ্ক (১৯৭৫)
হংসরাজ (১৯৭৬)
অপরাজিতা (১৯৭৬)
করুণাময়ী (১৯৭৮)
দৌড় (১৯৭৯)
জব চারনেকর বিবি (১৯৭৯)
শুভ সংবাদ (১৯৭৯)
পিপাসা (১৯৮২)
অমৃতকুম্ভের সন্ধানে (১৯৮২)
বাঁশরী (১৯৮৩)
সুপর্ণা (১৯৮৩)
বনশ্রী (১৯৮৩)
নির্জন সংলাপ
(১৯৮৭)