ঈদ
কলকাতা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত গীতিনাট্য ও বিশেষ অনুষ্ঠান।
১৩৬৫ বঙ্গাব্দের ৭ই বৈশাখ ঈদ সংখ্যা দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় ঈদ সংখ্যা'য় এই নাটিকাটি প্রথম
প্রকাশিত হয়েছিল।
এই নাটিকাটি সম্পর্কে পত্রিকায় বলা হয়েছিল-
"এই নাটিকাটি বিদ্রোহী কবি নজরুল
ইসলামের একখানি অপ্রকাশিত রচনা । পূর্ব পাকিস্তানের (তৎকালীন) মুখ্যমন্ত্রী
জনাব আতাউর রহমান খান ব্রিটেনস্থ পাকিস্তানী হাই কমিশনের বিজ্ঞান শিক্ষা
সম্পর্কিত লিয়াজো অফিসার জনাব কামাল রহিমের কাছ থেকে এটি সংগ্রহ করে 'ইত্তেফাকে"র
ঈদ সংখ্যায় প্রকাশের জন্য দিয়েছেন । জনাব রহমানের সহযোগিতায় কবির এই
অপ্রকাশিত রচনা পাঠক সমাজে পেশ করতে পেরে আমরা নিজেদের ধন্য মনে করছি । সেই
প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযোগ্য যে, জনাব আতাউর রহমান খান এই নাটিকাটির পাণ্ডুলিপিখানি
জাতীয় সম্পদ হিসেবে সংরক্ষণের জন্য বাংলা একাডেমীকে দান করবেন।"
এই অনুষ্ঠানটির কলকাতা বেতারকেন্দ্র থেকে প্রচারের সময় এবং
বিষয়বস্তু নিয়ে মতভেদ রয়েছে। যেমন-
প্রচার সময়:
- এই গীতিনাটিকা সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়- শেখ দরবার আলমের রচিত 'অজানা
নজরুল' থেকে। এই গ্রন্থের 'কলকাতা বেতারে নজরুল: তার আজান ও কোরান পাঠ (পৃষ্ঠ
৪৯৪) প্রবন্ধ থেকে জানা যায়-
- ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ৬ কার্তিক (বৃহস্পতিবার
১লা সওয়াল ১৩৬০, ২৩শে অক্টোবর ১৯৪১) ঈদ-উল- ফেতারের দিন সকাল সাড়ে ছ'টায়
অল- ইন্ডিয়া রেডিওর ক. কেন্দ্র থেকে বিশেষ প্রাতঃকালে ৩০ মিনিটের একটি
অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়েছিল।
- অনুপম হায়াৎ-এর 'নাট্যকার নজরুল' গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে- '...'ঈদ'
শ্রুতিনাটক কলকাতা বেতার কেন্দ্র হতে প্রচারিত হয় ১৯৪১ খৃষ্টাব্দের ২৩ অক্টোবর
পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন (১ শওয়াল, ১৩৬০ হিজরি, ৫ কার্তিক ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ ভোর
বেলায়)। উল্লেখ্য, ৫ কার্তিক ছিল ২২ অক্টোবর।
- আসাদুল হকের রচিত 'নজরুল যখন বেতারে
গ্রন্থে [পৃষ্ঠা: ২১৮] বলা হয়েছে- হ্যঁ ১৯৪১ খ্রীষ্টাব্দের ২৩শে অক্টোবর,
বৃহস্পতিবার সকালে 'ঈদ' গীতিনাট্যটি কলকাতা বেতার থেকে প্রচারিত হয়েছিল।
মূলত ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে ঈদুল-ফেতরের দিন ঈদ-উল- ফেতারের দিন
'১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ৬ কার্তিক (বৃহস্পতিবার
১লা সওয়াল ১৩৬০, ২৩শে অক্টোবর ১৯৪১)' ছিল না। কারণ-
- হিন্দু পঞ্জিকা মতে শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া।
' হিজরি' পঞ্জিকা মতে ১৩৬০ খ্রিষ্টাব্দের ১লা শওয়াল ছিল ২২ অক্টোবর
(বুধবার, ৫ কার্তিক ১৩৪৮)। The Indian Listener Vol VI
No. 20 এবং বেতার জগতের ১২শ বর্ষ ২০ সংখ্যায় থেকে জানা যায়- ঈদুল
ফিতর উপলক্ষে ২২ অক্টোবর (৫ কার্তিক ১৩৪৮), ভারতীয় বেতার কেন্দ্রগুলো বিশেষ
অনুষ্ঠান প্রচার করেছিল। যেমন এই দিন দিল্লী বেতার কেন্দ্র থেকে ঈদ 'মোবারক
অনুষ্ঠান' সম্প্রচারিত হয় সকাল আটটায়। এ ছাড়া সন্ধ্যা ৭.৩০টায় 'ঈদ মোবারক'
প্রচারিত হয় কলকাতা ক-এর তৃতীয় অধিবেশনে। এই অনুষ্ঠানটির বিষয়বস্তু লিখেছিলেন এ
কে কে সৈয়দ সিদ্দিকী। কলকাতা কেন্দ্র থেকে "ঈদ মোবারক" নামক বিচিত্রানুষ্ঠান
প্রচারিত হয়েছিল সন্ধ্যা ৭.৩০ থেকে ৭.৫৯ মিনিট পর্যন্ত। এই অনুষ্ঠানটি রচনা
করেছিলেন- এ,কে, এম সৈয়দ সিদ্দীকি। সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন মোহাম্মদ হোসেন খসরু
(ওস্তাদ)। রূপদান করেছিলেন- কেমাল চৌধুরী, আমীর খাঁ, সমর বিশ্বাস, মোশারফ্
হোসেন, আবদুল হালিম, রেহেনা ও সুশীলা চক্রবর্ত্তী।
- The Indian Listener Vol VI No. 20
এবং বেতার জগতের ২২শ বর্ষ ২০ সংখ্যা থেকে জানা যায়, ২৩ অক্টোবর বেতার
সম্প্রচার শুরু হয়েছিল ৭.৩০টায়। প্রথম অনুষ্ঠানটি ছিল- প্রশান্ত দাসগুপ্তের
ভোরের রাগ ভিত্তিক খেয়াল দিয়ে। এই দিনের সম্প্রচারের তালিকায় 'ঈদ' নামক কোনো
নাটকের নাম পাওয়া যায় না।
আসাদুল হক তাঁর 'নজরুল যখন বেতারে' গ্রন্থে বেতার সম্প্রচারের সময় সম্পর্কে
দৃঢ়তার সাথে উল্লেখ করেছেন- 'সকাল ছ'টায় (সাড়ে ছটা নয়)'। কারণ হিসেবে উল্লেখ
করেছেন-
'সময় পরিবতনের কারণ হিসেবে জানা যায় ঈদের নামাজ
শুরু হয় সাতটায় তাই নামাজীরা গৃহ ত্যাগ করেন সাধারণতঃ সাড়ে ছ্টায়। অধিকাংশ
মুসলমান এ অনুষ্ঠান যাতে শুনতে পান তার জন্যই এ সময় পরিবর্তন করে ব্যবস্থা
নেওয়া
হয়েছিল-যাতে নামাজে যাবার আগেই অনুষ্ঠানটি বাসা থেকেই শুনতে পান।
নজরুল নিজে উদ্যোগ গ্রহণ করে তদানিন্তন কলকাতা বেতারের কর্মকর্তার নিকট থেকে
এই বিশেষ সময়ে অনুষ্ঠানটি প্রচারের ব্যবস্থা করেছিলেন ।'
- ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত 'ঈদ' গীতিনাট্যটি প্রকাশিত হয়েছিল। এতে
আজান. কোরান পাঠ ও কবিতা আবৃত্তির কোন উল্লেখ নেই। মফিজ চৌধুরীর মতে- আজান, কোরান পাঠ ও কবিতা আবৃত্তি সবই অনুষ্ঠানে অন্তত ছিল ।
তাঁর মতে এই অনুষ্ঠানটি ছিল এক ঘন্টার, আধ ঘন্টার নয়। কারণ এতে ছিল কবিতা আবৃত্তি, কোরান পাঠ, আজান ও ঈদ মোবারক
সম্বন্ধ
বক্তব্য এবং গানের মূল অনুষ্ঠান। সব মিলিয়ে এটি ছিল ১ ঘন্টার অনুষ্ঠান ৷
উল্লিখিত সূত্রে যদি ঈদ নাটকটি ১ ঘণ্টার হয়ে থাকে, এবং তা ২২ অক্টোবর প্রচারিত
হয়. তাহলে অনুষ্ঠানটি ৬.৩০টায় শুরু
হয়েছিল বলে মনে হয়ে। কারণ- The Indian Listener Vol VI No. 20
থেকে জানা যায়, ৭.৩০টায় শুরু হয়েছিল কৃষ্ণচন্দ্র দে, রাধারাণী, ভীষ্মদেব
চট্টোপাধ্যায় বীণাপাণি মুখোপাধ্যায় এবং সন্তোষসেন গুপ্তের গানের অনুষ্ঠান। এই
অনুষ্ঠানের ইংরেজি নাম ছিল- My Song
For You'। [পৃষ্ঠা ৫৯] বাংলা নাম
ছিল- গীতি-অর্ঘ্য।
অনুষ্ঠানের বিষয়
এই গীতিনাটিকা সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়- শেখ দরবার আলমের রচিত 'অজানা
নজরুল' থেকে। এই গ্রন্থের 'কলকাতা বেতারে নজরুল: তার আজান ও কোরান পাঠ (পৃষ্ঠ
৪৯৪) প্রবন্ধ থেকে জানা যায়-
- ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ৬ কার্তিক (বৃহস্পতিবার
১লা সওয়াল ১৩৬০, ২৩শে অক্টোবর ১৯৪১) ঈদ-উল- ফেতারের দিন সকাল সাড়ে ছ'টায়
অল- ইন্ডিয়া রেডিওর ক. কেন্দ্র থেকে বিশেষ প্রাতঃকালে ৩০ মিনিটের একটি
অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়েছিল। মূলত "ঈদ-মোবারক" নামক নাটিকাটি প্রচারিত হয়েছিল
২২ অক্টোবর। রচনা করেছিলেন- এ,কে,এম সৈয়দ সিদ্দীকি।
আনন্দবাজার পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি এই
অনুষ্ঠানের যে বিষয়াবলি সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন, তা হলো-
- আজান ও পবিত্র কোরান পাঠ: কাজী
নজরুল ইসলাম
- নাটিকা: ঈদ (কাজী নজরুল
ইসলামের রচিত)। যন্ত্রসহযোগিতায় ছিল- ষন্ত্রীসংঘ। অভিনয় ও সঙ্গীতে
ছিলেন- কাজী নজরুল ইসলাম, চিত্তরঞ্জন রায়, মুহাম্মদ হোসেন (খসরু),
কামাল চৌধুরী, রেহানা বেগম এবং আফরোজা আখতার।
- আলোচনা: মফিজউদ্দিন চৌধুরী,
আবৃ্ত্তি: কামাল চৌধুরী।
- আসাদুল হক তাঁর 'নজরুল যখন বেতারে' গ্রন্থে-
কামাল চৌধুরীর সাথে কথোপকথনের সূত্রে লিখেছেন
'কামাল চৌধুরীর সাথে কথা
বলে
আমি জেনেছিলাম, এ অনুষ্ঠানের জন্য মোট দুশো টাকা তারা পেয়েছিলেন। যার মধ্য থেকে
নজরুলকে দেওয়া হয়েছিল এক শত কড়ি টাকা । প্রসঙ্গত আরো কিছু কথা উল্লেখ করা
প্রয়োজন মনে করি, কামাল চৌধুরী এ সময় কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে প্রথম বর্ষের
ছাত্র
ছিলেন । তার মুখেই শুনেছি এ অনুষ্ঠানে যারা অংশ গ্রহণ করেছিলেন তারা যথাক্রমে-
১. কাজী নজরুল ইসলাম ২. আবু সাঈদ চৌধুরী ৩. কামাল চৌধুরী ৪. মফিজ চৌধুরী
৫. বেলা মুখার্জী ৬. বীরেন ভদ্র ৭. আফারোজা আখতার ৮. রওশন আরা
৯. মুহাম্মদ হোসেন (খসরু) ১০. রেহানা বেগম ১১. চিত্তরঞ্জন রায় ।
এতে ব্যবহৃত হয়েছিল মোট ৩টি গান। এই গান ৩টি হলো-
- এলো ঈদল-ফেতর এলো ঈদ ঈদ ঈদ [তথ্য]
- নাই হল মা বসন ভূষণ
[তথ্য]
- বিদায় বেলায় সালাম লহ [তথ্য]