ফণিমনসা
কাজী নজরুল ইসলাম


                            আশীর্বাদ

যায় কল্যাণীয়া শামসুন নাহার খাতুন  
                     জয়যুক্তাসু   

শত নিষেধের সিন্ধুর মাঝে অন্তরালের অন্তরীপ
তারই বুকে নারী বসে আছে জ্বালি বিপদ-বাতির সিন্ধু-দীপ।
শাশ্বত সেই দীপান্বিতার দীপ হতে আঁখি-দীপ ভরি
আসিয়াছ তুমি অরুণিমা-আলো প্রভাতি তারার টিপ পরি।
আপনার তুমি জান পরিচয় – তুমি কল্যাণী তুমি নারী –
আনিয়াছ তাই ভরি হেম-ঝারি মরু-বুকে জমজম-বারি।
অন্তরিকার আঁধার চিরিয়া প্রকাশিলে তব সত্য-রূপ –
তুমি আছ, আছে তোমারও দেবার, তব গেহ নহে অন্ধ-কূপ।
তুমি আলোকের – তুমি সত্যের – ধরার ধুলায় তাজমহল, –
রৌদ্র-তপ্ত আকাশের চোখে পরালে স্নিগ্ধ নীল কাজল!
আপনারে তুমি চিনিয়াছ যবে, শুধিয়াছ ঋণ, টুটেছে ঘুম,
অন্ধকারের কুঁড়িতে ফুটেছ আলোকের শতদল-কুসুম।
বদ্ধ কারার প্রকারে তুলেছ বন্দিনীদের জয়-নিশান –
অবরোধ রোধ করিয়াছে দেহ, পারেনি রুধিতে কণ্ঠে গান।
লহো স্নেহাশিস – তোমার ‘পুণ্যময়ী’র ‘শাম্‌‍স’ পুণ্যালোক
শাশ্বত হোক! সুন্দর হোক! প্রতি ঘরে চির-দীপ্ত রোক।   

হুগলি
১৯ মাঘ, ১৩৩১

ফণি-মনসা প্রথম সংস্করণ [শ্রাবণ ১৩৩৪ বঙ্গাব্দ (জুলাই ১৯২৭)] কবিতাটি 'আশীর্বাদ' শিরোনামে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এর সাথে কবিতাটির রচনার স্থান ও কাল উল্লেখ আছে- 'হুগলি/১৯শে মাঘ ১৩৩১'। উল্লেখ্য, শামসুন নাহারের রচিত 'পূণ্যময়ী' গ্রন্থের 'প্রশস্তি' হিসেবে নজরুল এই কবিতাটি রচনা করেছিলেন।