বিষয়: নজরুল সঙ্গীত
শিরোনাম: জাগো অরুণ-ভৈরব জাগো হে শিব-ধ্যানী
		
			
				জাগো অরুণ-ভৈরব জাগো হে শিব-ধ্যানী।
শোনাও তিমির ভীত বিশ্বে নব দিনের বাণী॥
				
          তোমার 
				তপঃ-তেজে, শিব
          দগ্ধ বুঝি হয় ত্রিদিব,
শরণাগত চরণে তব
						─ হের নিখিল প্রাণী॥
				ধ্যান হোক ভঙ্গ তব শক্তি ল'য়ে সঙ্গে,
সৃষ্টির আনন্দে, হর, লীলা কর রঙ্গে।
          ললাটের বহ্নি ঢাকো
          শশী-লেখার তিলক আঁকো,
ফণি হোক মণিহার, হে পিনাক-পাণি॥
				
		
	- ভাবসন্ধান: হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি অবলম্বনে জগৎঘটক রচিত উদাসী ভৈরব 
	নাটিকায় ব্যবহৃত নজরুলের রচিত সূচনা সঙ্গীত। এই কাহিনি মতে দক্ষ একটি যজ্ঞের 
	আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু জামাতা শিবের প্রতি বিদ্বেষবসত, শিব এবং কন্যা সতীকে এই 
	যজ্ঞে আমন্ত্রণ করেন নি। সতী তা জানতে পেরে অযাচিতভাবে এই যজ্ঞে যাওয়ার অনুমতি 
	লাভের জন্য শিবের কাছে যান। এই সময় শিব ধ্যান মগ্ন ছিলেন। তাই তিনি শিবের ধ্যান 
	ভাঙার জন্য যোগিনীদের সাথে নিয়ে ধ্যানমগ্ন শিবের সামনে উপস্থিত হন। 
			
 
 শিবের ধ্যানভঙ্গের প্রাথমিক পর্যায়ে সতী এই গানটির মাধ্যমে শিবের বন্দনা করছেন।
শিব সূর্যের মত তেজস্বী, এই অর্থে শিবকে 'অরুণ-ভৈরব' নামে অভিহিত করা হয়েছে। আবার নজরুল তাঁর সৃষ্ট রাগ 'অরুণ-ভৈরব' শব্দটি এখানে কৌশলে ব্যবহার করেছেন। এই বিচারে শব্দটি দ্ব্যর্থভাব প্রকাশ করে। স্থায়ীর পংক্তিতে 'তিমির-ভীত' শব্দের দ্বারা তামস রূপে ভীত বিশ্বের দশাকে বিশেষিত করা হয়েছে। এই পংক্তিতে পাপ-পঙ্কিলে নিমজ্জিত শঙ্কিত বিশ্বে কল্যাণের বাণী শোনানোর জন্য ধ্যানমগ্ন শিবকে জেগে উঠার জন্য প্রার্থনা করা হচ্ছে। 
	শৈবশক্তির তীব্র তপঃতেজ দগ্ধ হয় ত্রিদিব (স্বর্গলোক)। সেই তেজি শিবের কাছে যোগিনীসহ দুর্গা শরণাগত 
	হয়েছেন। সঞ্চারীতে সেই শিবকে সৃষ্টির লীলায়িত রঙ্গে তাঁর সকল শক্তি নিয়ে জেগে উঠার জন্য প্রার্থনা করা হয়েছে। একই সাথে এই প্রার্থনাও করা হয়েছে, যেনো শিবের 
	সেই তেজে ধ্বংসের তীব্রতা না থাকে। তাই শিবের কাছে প্রার্থিনীদের আবেদন, যেনো শিব তাঁর ত্রিনয়নের অগ্নিকে আবরিত 
	করে রাখেন। এর পরিবর্তে যেন
	কপালের স্নিগ্ধ চন্দ্রচিহ্ন তিলকরূপে অলঙ্কার হিসেবে শোভা পায়। আর শিবের কণ্ঠের সর্প যেনো বিষাক্ত ফণা না তুলে, কণ্ঠের মণিহার রূপে বিরাজ করে।
 
 ঝাঁপতালে নিবদ্ধ এই গানের চলন ধ্রুপদের মতো। কিন্তু যথার্থ ধ্রুপদ নয়। এই বিচারে এই গানের সুরাঙ্গকে ‘সাদরা’ হিসেবে বিচার করা যেতে পারে। এর গম্ভীর চলনে গভীর ধ্যানমগ্ন-দশা থেকে জাগরিত দশায় ফিরিয়ে আনার জন্য সুরের চলনে পাওয়া যায়, ধ্রুপদের প্রশান্তরূপ।এতে ধ্রূপদের বিশেষ অলঙ্কার অনুনাদিত গমকের ব্যবহার নেই। নবারুণের কোমল-স্নিগ্ধ আলোয় যেমন করে পরম প্রশান্তিতে পৃথিবী জেগে ওঠে। এই গানের ‘অরুণভৈরব’ চলন যেন তেমনি। 
	মূলত এই গানের সুরের চলনে রয়েছে ‘অরুণভৈরব’
	রাগের স্নিগ্ধ সুর-প্রভা।
 
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। 
		গানটি কাজী নজরুল ইসলাম, জগৎ ঘটক রচিত 
	উদাসী ভৈরব
	নামক নাটকের জন্য লিখেছিলেন। নাটিকাটি ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ১২ নভেম্বর (রবিবার, 
	২৬ কার্তিক ১৩৪৬), প্রাতঃকালীন অধিবেশনে ৯.১৫-৯.৫৯ মিনিট পর্যন্ত, কলকাতা বেতার 
	কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪০ বৎসর ৫ মাস।
 
 
- গ্রন্থ:
	- 
	উদাসী ভৈরব। 
	[পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সংগীত আকাদেমি]। সতী ও যোগিনীদের গান।
- নবরাগ 
	(নজরুল ইনস্টিটিউট। সেপ্টেম্বর ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ)।  
	পৃষ্ঠা: ২৩-২৫। 
- নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ১১৯৬।
 
 
- পত্রিকা: বেতার জগৎ (পত্রিকা), ১০ম বর্ষ ২১শ 
	সংখ্যা। উদাসী ভৈরব। ১ নভেম্বর, ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দ সংখ্যা।
পৃষ্ঠা: ৮১৫। [নমুনা]
 - বেতার:       
	উদাসী ভৈরব। 
	নাটিকা। প্রথম গান। কলকাতা বেতার কেন্দ্র [১২ 
	নভেম্বর ১৯৩৯ (রবিবার, ২৬ কার্তিক ১৩৪৬), প্রাতঃকালীন 
	অনুষ্ঠান। ৯.১৫-৯.৫৯। নাট্যকার জগৎ ঘটক। পরিকল্পনা, গীত রচনা ও সংগঠন- নজরুল ইসলাম। ধ্যানস্থ শিবের সম্মুখে সতী, যোগিনী ও ভৈরবীগণ সহ, শিবের ধ্যানভঙ্গের আশায় 
পরিবেশিত গান। শিল্পী- নিতাই ঘটক, গীতা মিত্র ও ইলা ঘোষ]
	- সূত্র: বেতার জগৎ-এর ১০ম 
বর্ষ ২১শ সংখ্যা  [পৃষ্ঠা: ৮১৫, ৮৪৩-৮৪৪]
 
 
- সুরকার: নজরুল ইসলাম 
- স্বরলিপিকার: জগৎ ঘটক। [নবরাগ (নজরুল ইনস্টিটিউট। সেপ্টেম্বর ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ)]
[নমুনা]
- পর্যায়:
	- বিষয়াঙ্গ: নাট্যগীতি । 
	ভক্তি (হিন্দুধর্ম, প্রার্থনা) 
- সুরাঙ্গ: 
	সাদরা।  
				
- রাগ: 
	
	অরুণ ভৈরব। [এই গানটি নজরুল-সৃষ্ট 'অরুণ-ভৈরব' রাগে নিব্দ্ধ। এই বিষয়ে জগৎ ঘটক তাঁর স্বরলিপি গ্রন্থ 'নবরাগ' -এ লিখেছেন—
	
'বহুকাল পূর্বের কথা। উদাসী ভৈরব  নামে একখানি নাটিকা বেতারে অভিনীত হবার জন্যে কবি আমাকে দিয়ে লিখিয়েছিলেন— এবং এর ছয়খানি গান তিনি রচনা ও তাতে সুরারোপ করেন। সুরগুলি রাগ-ধর্মী ও তাঁর সৃষ্ট নবরাগ। বাসন্তী বিদ্যাবীথির প্রয়োজনীয় নাটিকাটি বেতারে সাফল্যের সঙ্গে অভিনীত হয়েছিল। ... গানগুলি অরুণ-ভৈরব, আশা-ভৈরব, শিবানী-ভৈরবী, রুদ্র-ভৈরব, যোগিনী ও উদাসী ভৈরব।'