বিষয়: নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: নীরন্ধ্র মেঘে মেঘে অন্ধ গগন।
নীরন্ধ্র মেঘে মেঘে অন্ধ গগন।
অশান্ত-ধারে জল ঝরে অবিরল,
ধরণী ভীত-মগন॥
ঝঞ্ঝার ঝল্লরী বাজে ঝনন্ননন
দীর্ঘশ্বসি’ কাঁদে অরণ্য শনশন,
প্রলয় বিষাণ বাজে বজ্রে ঘনঘন-
মূর্ছিত মহাকাল-চরণে মরণ॥
শুধিবে না কেহ কি গো এই পীড়নের ঋণ,
দুঃখ-নিশি-শেষে আসিবে না শুভদিন।
দুষ্কৃতি বিনাশায় যুগ-যুগ-সম্ভব
অধর্ম নিধনে এসো অবতার নব,
আবিরাবির্ম এধি' ঐ ওঠে রব-
জাগৃহি ভগবন্, জাগৃহি ভগবন্॥
-
ভাবার্থ: বর্ষার অসুররূপী ভয়ঙ্কর রূপ এবং অসুর বিনাশী
শুভশক্তির আবির্বভাবের কামনা এই গানে উপস্থাপিত হয়েছে।
এই গানের স্থায়ীতে মেঘাচ্ছন্ন আকাশকে 'নীরন্ধ্র আকাশ' বলা হয়েছে। প্রথম পঙ্ক্তিতে 'অন্ধ'
শব্দ দ্ব্যার্থক। নীরন্ধ (ছিদ্র নাই) মেঘের আকাশ অন্ধকারচ্ছন্ন অর্থে কিম্বা নীরন্ধ
মেঘের কারণে চক্ষুষ্মান আকাশ অন্ধ (দৃষ্টিহীন) হয়ে গেছে- উভয়ই হতে পারে। এমন
মেঘাচ্ছন্ন আকাশ থেকে ঝরে পড়া প্রবল বর্ষণে 'ধরণী ভীত-মগ্ন'- শব্দ চয়নের মধ্য দিয়ে
এই গানের ভয়ঙ্কর রূপের সূত্রপাত করা হয়েছে। বর্ষা প্রকৃতির এই রূপকতার মধ্য দিয়ে কবি
অশুভ শক্তিরূপী মেঘের দ্বারা জগৎ সংসার আচ্ছন্নের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। গানটির
প্রথমাংশ এই রূপকতা উপস্থাপিত হয়েছে সন্ধ্যা-ভাষায়।
এই অংশে দেখা যায়- ঝঞ্ছা-বিক্ষুব্ধ আকাশ ঝল্লরীতে বাদিত করকশ ঝনঝন শব্দে ভয়ঙ্কর হয়ে
উঠেছে। তারই শব্দে ভীতা বনভূমি, বাতাসর শনশন শব্দে ছড়িয়ে পড়েছে ক্রন্দিত দীর্ঘশ্বাস।
এই ভয়ঙ্কর বর্ষায় মৃত্যুও যেন মহাকালের চরণে মূর্ছিত হয়ে পড়েছে। কবির কাছে মনে হয়েছে-
এই বর্ষার নিপীড়ন থেকে প্রকৃতিকে রক্ষা করার কেউ নেই। হতাশায় নিমজ্জিত কবি ভাবেন-
ঝঞ্ছা-বিক্ষুব্ধ ভয়ঙ্কর এই দুখ-নিশি শেষে, কোনো শুভ দিনের উদয় হবে না আর।
এই গানের শেষের চারটি পঙ্ক্তিকে কবি বর্ষার বিনাশিনী শক্তিকে অশুভ আসুরিক শক্তির
সাথে তুলনা করেছেন। জগতে যুগে যুগে দুষ্কৃতির কবলে পড়ে জগৎসংসার নিপীড়িত হয়েছে। এই
অশুভ শক্তির বিনাশে অবতার হিসেবে নব নব রূপে ভগবান এসেছেন। জগতে উঠুক 'আবিরাবীর্ম
এধি' রব। উল্লেখ্য ঐতরেয় উপনিষদ-এর শান্তি পাঠে অন্তর্ভুক্ত এর
অর্থ হলো- হে স্বপ্রকাশ (পরমব্রহ্ম), আমার নিকটে
প্রকাশিত হও, জেগে ওঠ হে ভগবান।
-
রচনাকাল ও স্থান: গানটির
রচনাকাল সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় না। ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে
ডিসেম্বর (বুধবার ৯ পৌষ ১৩৩৭), মন্মথ রায় রচিত 'কারাগার' নাটকটি মঞ্চস্থ হয়েছিল 'মনোমোহন
থিয়েটারে। এই নাটকে গানটি ব্যবহৃত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩১ বৎসর
৬ মাস।
- মঞ্চ:
- গ্রন্থ
-
চন্দ্রবিন্দু
- প্রথম সংস্করণ [সেপ্টেম্বর ১৯৩১, আশ্বিন ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ।]
- নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, চতুর্থ খণ্ড [জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮, মে ২০১১। চন্দ্রবিন্দু। ১৮। মল্লার-কাওয়ালি। পৃষ্ঠা: ১৭২]
-
মন্মথ রায় নাট্যগ্রন্থাবলী দ্বিতীয় খণ্ড [জগদ্ধাত্রী পূজা ১৩৫৮। ২৫শে
নভেম্বর ১৯৫১। কারাগার। পঞ্চম অঙ্ক। এক। চন্দনার গান]
- নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ (নজরুল ইন্সটিটিউট,মাঘ,১৪১৭ / ফেব্রুয়ারি, ২০১৪)। ১৫০২ সংখ্যক গান।
রাগ: মেঘমল্লার, তাল:কাওয়ালি। পৃষ্ঠা: ৪৫১।
- নজরুলের হারানো গানের খাতা [নজরুল ইনস্টিটিউট, ঢাকা। আষাঢ় ১৪০৪/জুন ১৯৯৭।
গান সংখ্যা ২২।
for Dhiren Ghatak
(HMV)/ভজন। পৃষ্ঠা
৪৮।]
- পত্রিকা:
নাচঘর [৩রা পৌষ ১৩৩৭ (বৃহস্পতিবার ১৮ ডিসেম্বর ১৮৩০)। শিরোনাম: 'কারগারের গান']