'ঐ বয়সে থিয়েটারের সব নাটক লুকিয়ে লুকিয়ে পড়তে শুরু করেছিলাম। পড়েছিলাম গিরিশ গ্রন্থাবলীর নাটকগুলি, রাজকৃষ্ণ রায়-এর নাটকগুলি, অমৃতলাল বোস-এর নাটকগুলি এবং হরিপদ চট্টোপাধ্যায়ের যাত্রাপালাগুলি। এটা সম্ভব হয়েছিল আমার মা-এর জন্য। তিনি লুকিয়ে লুকিয়ে কবিতা লিখতেন, যার একমাত্র পাঠক ছিলেন আমার বাবা। এবং শাড়ী গয়নার আব্দার না করে বাবাকে দিয়ে কেনাতেন চলতি নাটক-নভেল-এর বই- অবসরকালে পড়বার জন্য। বাবার আপত্তি ছিল না, কারণ তাঁরও ছিল প্রবল সাহিত্যারাগ। কিন্তু বাবা-মা দুজনেই হঠাৎ ক্ষান্ত হয়ে গেলেন সেইদিন যেদিন দেখা গেল, স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায় আমি প্রথম স্থান অধিকার করলেও প্রত্যেক বিষয়ে আমি হয়েছি দ্বিতীয়। লুকিয়ে লুকিয়ে নাটক-নভেল পড়াই এর একমাত্র কারণ- যেটা তাঁরা বুঝলেন, নাটক-নভেল মা-র বাক্সবন্দী হয়ে গেল। ১৯১৭ খৃঃ ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় সকলের আশা ছিল স্কলারশিপ পাব, কিন্তু পেলাম না। পেল আমার এক প্রিয় বন্ধু প্রফুল্ল কুমার দে, যে এতদিন সব পরীক্ষায় দ্বিতীয় হত।'
১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে
রাজশাহী কলেজ থেকে আইএ
পাশ করেন। এই কলেজে লেখাপড়ার সময় এই কলেজের ছাত্র অন্তিম বোসের পরিচালনায় গিরিশ
ঘোষ-এর 'পাণ্ডব-গৌরব' নাটকে দণ্ডিরাজের ভূমিকায় অভিনয় করে প্রশংসা লাভ করেন। এরপর
কলেজের ছুটিতে বালুরঘাট ভেকেশান ক্লাব গঠন করে- অতুলানন্দ রায়-এর পাণিপথ এবং ডি এল
রায়-এর 'নূরজাহান' ই-এস-ডি ক্লাব মঞ্চে অভিনয় করেন।
১৯২২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারিতে অসহযোগ
আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে। এরপর তিনি আবার পড়াশুনায় মন দেন।
১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন।
এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে এমএ শ্রেণিতে ভর্তি হন। তিনি এই
বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। এই ছাত্রাবাসের প্রভোষ্ট ছিলেন
তৎকালীন প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক এবং আইন বিশারদ ডঃ নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত। এই সময় কাজী নজরুল ইসলাম মন্মথ রায়ের নাটক পড়ে অভিভূত হয়ে, তাঁর সাথে দেখা করার
আকাঙ্ক্ষা জানান। মন্মথ রায় প্রত্যুত্তরে নজরলকে জানান 'ঐ লগ্নটির অপেক্ষায় রইলাম'।
এরপর নজরুল মন্মথ রায়কে ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দের ৪ জুলাই একটি দীর্ঘ পত্র লেখেন।
[নজরুলের
চিঠি] 'নটসূর্য শ্রীযুক্ত অহীন্দ্র চৌধুরী মিনার্ভা থেয়েটারে
যোগদান করিয়া তাঁহাদের জন্য একখানি নাটক লিখিয়া দিতে গত জুলাই মাসে অনুরোধ করেন।
তদনুযায়ী গত ১২ই আগষ্ট আমি "কারাগার" রচনায় ব্রতী হই, এবং ২৫শে আগষ্ট মধ্যে
উহার প্রাথমিক গঠন শেষ করিয়া পাণ্ডুলিপি শ্রীযুক্ত অহীন্দ্র চৌধুরীর হস্তে
সমর্পণ করি। নানা কারণে মিনার্ভা থিয়েটারে উহার অভিনয় সম্ভব হয় না।'
এই নাটকের ১৬টি গানের ভিতরে নজরুলের গান ছিল ৮টি। বাকি
৮টি গান রচনা করেছিলেন হেমেন্দ্রকুমার রায়। অষ্টাদশ রজনী অভিনীত হওয়ার পর, ১লা
ফেব্রুয়ারি সরকার এই
নাটকের অভিনয় বন্ধ করে দেয়। এছাড়া সাবিত্রী নাটকে নজরুলের রচিত ও সুরারোপিত
মোট ১৩টি গান ব্যবহৃত হয়েছিল। 'নাট্যনিকেতন-অধিকারী অগ্রজ-প্রতিম শ্রীযুক্ত প্রবোধচন্দ্র গুহ তাঁহার 'নাট্যনিকেতন'
অভিনয়ার্থে সাত দিনের মধ্যে 'সাবিত্রী' নাটক রচনা করিয়া দিবার জন্য আমাকে পত্র
লিখিলে, সাবিত্রী উপাখ্যানে নাটকত্বের প্রাচুর্য নাই মনে করিয়া আমি প্রথমতঃ
অস্বীকৃত হই। শ্রীযুক্ত প্রবোধ বাবু আমাকে কলিকাতায় আসিবার জন্য টেলিগ্রাম করেন,
এবং আমি কলিকাতায় আসিলে, নানা আলোচনার পর স্থির হয়, সাবিত্রী উপাখ্যানকে
সুসমঞ্জস্ কল্পনায় পল্লবিত করিয়া আমিই নাটক লিখিব। তদনুযায়ী গত ৪ঠা বৈশাখ হইতে
৭ই বৈশাখ, এবং ২৫ বৈশাখ হইতে ৫ জ্যৈষ্ঠ, এই চৌদ্দ দিনে, আমার নানা প্রতিকূল
অবস্থার মধ্য দিয়া, "সাবিত্রী: রচনার কার্য সমাপ্ত হয়।' ১৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৮, শনিবার, নাট্যনিকেতনে মঞ্চস্থ হয়েছিল। লেখকের কথা থেকে জানা
যায়- উল্লেখ্য,নাটকটি গ্রন্থাকারে প্রথম প্রকাশকাল ১ আষাঢ় ১৩৩৮। এই গ্রন্থে মোট
নজরুলের রচিত ও সুরারোপিত মোট ১৩টি গান ব্যবহৃত হয়েছিল। এর ভিতরে 'কুসুম সুকুমার
শ্যামল তনু' গানটি জয়তী পত্রিকার 'পৌষ-মাঘ, ১৩৩৭ সংখ্যায় পূর্বে প্রকাশিত হয়েছিল।
ফলে সাবিত্রী' নাটকের নতুন গান ছিল ১২টি। ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি (পৌষ-মাঘ ১৩৪২) মাসে টুইন রেকর্ড কোম্পানি মন্মথ
রায়ের রচিত 'নরমেধ' নামক একটি রেকর্ড প্রকাশ করেছিল। এই নাটকে নজরুলের রচিত মোট ৫টি
গান ব্যবহৃত হয়েছিল। এই বছরের নভেম্বর (কার্তিক-অগ্রহায়ণ ১৩৪৩) মাসে, এইচএমভি রেকর্ড
কোম্পানি মন্মথ রায়ের রচিত 'সুরথ উদ্ধার' নাটক প্রকাশ
করে।
এই নাটকের গানগুলো রচনা করেছিলেন
কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের
২৮ এপ্রিল. মন্মথ রায়ের নাটক 'সতী" অভিনীত হয়। 'সতী' নাটকে
কাজী নজরুল ইসলাম
ও সুর সংযোজনা করেন। মন্মথ রায়ের নাট্যগ্রন্থাবলী
পূর্ণাঙ্গ নাটক প্রবন্ধ
সূত্র:
রাজাশাহী কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএ পাশ করার পর তিনি কলকাতার স্কটিশচার্চ কলেজে
ভর্তি হন। এই সময় তিনি 'বঙ্গে মুসলমান' নাটক রচনা করেন। মন্মথরায়ের মতে- 'খুন
সম্ভবত ১৯২০ সালে 'বঙ্গে মুসলামান' নাটকটি আমাদের সেই ভেকেশান ক্লাব এর প্রযোজনায়
এবং আমার পরিচালনায় ই-এস-ডি ক্লাব মঞ্চে অভিনীত হল।'
১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে গান্ধীর ডাকে সাড়া দিয়ে সর্বভারতব্যাপী
অসহযোগ আন্দোলন
ছড়িয়ে পড়েছিল। এই সময় মন্মথ ছিলেন
স্কটিশ চার্চ কলেজের
বিএ ক্লাসের ছাত্র। এই সময় তিনি স্কটিশ চার্চ কলেজের
ছাত্রাবাস ছেড়ে নন্দকুমার লেনের একটি মেসে আস্তানা গেড়েছিলেন। এই সময় তাঁর সাথে
থাকতেন
পবিত্র
গঙ্গোপাধ্যায়। আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য বিএ পরীক্ষা বর্জন করার ইচ্ছা থাকলে তিনি
তাঁর বাবার ইচ্ছায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণের প্রস্তুতি। পরীক্ষার প্রথম দিনে অশ্বারোহী
সৈনরা মেয়ে-পিকেটারদের উপর হামলা করলে, তিনি পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনে যোগদান করেন।
পরে তিনি 'ভারত সেবক-সংঘ'-এর সদস্য হিসেবে অন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেন। গান্ধীজির
প্রতিশ্রুতি মতে ঐ বছরের ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে স্বরাজ কথা থাকলেও, তা পূরণ হয় নি।
এই আশা পূরণ না হওয়ার সূত্রে তিনি সুভাষচন্দ্র বসুর পরিচালিত 'গৌড়ীয় সর্ববিদ্যায়তন
থেকে উপাধি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাগ্রহণকালে নাট্যচর্চা বাদ দিয়ে ক্রীড়াচক্রের সাথে জড়িয়ে
পড়েন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাথেলেটিক ক্লাব-এর সম্পাদক নির্বাচিত হন। এছাড়া
তিনি ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। এই সময় ডঃ
নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীদের দিয়ে একটি নাটক মঞ্চস্থ করার
উদ্যোগ নেন। তবে তিনি শর্ত দেন যে, এই নাটকটি ছাত্রদের মধ্য রচনা করতে হবে। এই
সূত্র তিনি রচনা করেন 'অম্বা' নামক একাঙ্কিকা। এই একাঙ্কিকায় ছিল সাতটি
চরিত্র। ডঃ নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত নাটকটি দেখে বাদ দিয়ে দেন। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের
ছাত্রাবাসের প্রায় সকলেই অভিনয় করতে চান। ফলে নাটকে অন্ততঃ ২০-২৫টি চরিত্র থাকলে
ভালো হয়। তবে তিনি মন্মথকে আশ্বাষ দিয়ে বলেন যে, নাটকটি 'ভারতবর্ষ' পত্রিকায় যাতে
ছাপানো হয়, তার ব্যবস্থা করবেন।
এরপর তিনি বালুরঘাটে চলে আসেন এবং ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের ৬ নভেম্বর 'দেবদাসী' নামে একটি
একাঙ্কিকা রচনা করেন। এরপর তিনি ঢাকায় ফিরে এসে জানলেন- জগন্নাথ হল ড্রামাটিক
এ্যাসোসিয়েশান বঙ্কিমচন্দ্রের চন্দ্রশেখরের নাট্যরূপ মঞ্চস্থ করার উদ্যোগ নিয়েছেন।
মন্মথ এই ক্লাবের কাছে তাঁর সদ্যরচিত 'দেবদাসী' উপস্থিত করলে, ক্লাব উভয় নাটকই
মঞ্চস্থ করার উদ্যোগ নেন। এই বছরের ২১
ডিসেম্বর এবং ২২ ডিসেম্বর জগন্নাথ হল ড্রামাটিক এ্যাসোসিয়েশান দেবদাসী
এবং চন্দ্রশেখর মঞ্চস্থ করে। দেবদাসী নাটকে মন্মথ অভিনয় করেছিলেন
বিনয়াদিত্যের ভূমিকায়। এই দিনই ডঃ নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত কলকাতা থেকে ঢাকায় ফেরেন।
প্রথম অঙ্কের বিরতির পর গ্রিনরূপে নরেশচন্দ্র তাঁকে জানান যে, 'ভারতবর্ষ' পত্রিকায়
'মুক্তির
ডাক' ছাপাতে রাজি হয় নি। তবে স্টার থিয়েটার নাটকটি বড়দিনে মঞ্চস্থ করেবে।
১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে ২৫ ডিসেম্বর নাটকটি
অহীন্দ্র চৌধুরীর পরিচালনায়
আর্ট থিয়েটার 'অম্বা' একাঙ্কিনাটি মঞ্চস্থ হয়েছিল 'মুক্তির
ডাক' নামে। এই দিন স্টারের নিজস্ব নাটক 'বিজয়-বৈজয়ন্তী-কর্ণার্জুন'-এর সাথে
মঞ্চস্থ। উল্লেখ্য 'ভারতবর্ষ' পত্রিকার অধিকর্তা ছিলেন হরিদাস চট্টোপাধ্যায়। একই
সাথে তিনি ছিলেন স্টার থিয়েটারের তদানীন্তন পরিচালক এবং আর্ট থিয়েটার লিমিটেডের
অন্যতম ডিরেক্টর। তিনি চাননি, নাটকটি মঞ্চস্থ হওয়ার আগে পত্রিকায় প্রকাশিত হোক। এই
নাটকের উদ্বোধনীর দিনে মন্মথ কলকাতায় যান এবং উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে
স্টারের কলাকুশলীদের সাথে পরিচিত হন। এই নাটকে সেকালের প্রখ্যাতা অভিনেত্রী
কৃষ্ণভামিনী 'অম্বার' চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। নাটকটি জনপ্রিয়তা পায় নি। তাছাড়া
স্টারের অনেকে এ নিয়ে হরিদাস চট্টোপাধ্যায় বেশ অপমানিত হন। পরে তিনি নাটকটি ছাপানোর
ব্যবস্থা করেন। এরপর একাঙ্কিকাটি গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এন্ড সন্স প্রকাশ করেছিল।
১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেক এমএ পাশ করে, আইনশাস্ত্রে ভর্তি হন।
১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনবিদ্যায় এমএ পাশ করার পর তিনি দিনাজপুরের বালুরঘাটে
ফিরে যান। এই বছরেই বাসন্তিকায় তাঁর সেমিরেমিস নাটকটি প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এখানে আইন ব্যবসা শুরু করেন। আইন ব্যবসার
পাশাপাশি তিনি আগের মতই নাটক লিখে চলেছিলেন।
১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এ সকল নাটকের
অধিকাংশই ছিল একাঙ্কিকা। এসকল একাঙ্কিকা ভারতবর্ষ, সবুজপত্র, কল্লোল, বিচিত্রা প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।
এই সময়ের একাঙ্কিকাগুলো ছিল-
এই চিঠিপত্রের সূত্রে নজরুলের সাথে মন্মথ রায়ের গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। নজরুল
মন্মথ রায়ের অনেকগুলো নাটকের জন্য গান লিখেছিলেন।
১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ সেপ্টেম্বর বুধবার মনোমোহন থিয়েটারে 'চাঁদ সওদাগর' মঞ্চস্থ
হয়।
১৯২৯ বঙ্গাব্দের
৩১শে ডিসেম্বর (১৬ই পৌষ ১৩৩৬), মহুয়া নাটক কলকাতার
মনোমোহন থিয়েটার-এ প্রথম মঞ্চস্থ হয়েছিল। আর গ্রন্থাকারে
প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৩০
খ্রিষ্টাব্দের ৮ই জানুয়ারি। এই নাটকে
ব্যবহৃত হয়েছিল নজরুলের রচিত ও সুরারোপিত মোট ১৫টি গান।
১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ ডিসেম্বর, কলকাতার
'মনোমোহন থিয়েটার-এ কারাগার নাটকটি প্রথম মঞ্চস্থ হয়েছিল।
এই নাটকটি ছিল একটি ফরমায়েসি রচনা। এ বিষয় নাটকটির প্রথম
সংস্করণের নাট্যকার 'লেখকের কথা' অংশে লিখেছেন-
১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে
নাট্যনিকেতন মঞ্চস্থ হয়েছিল সাবিত্রী নাটক। এই নাটক রচনার উপলক্ষ জানা যায়,
পুস্তাকাকারে মুদ্রিত এই গ্রন্থের 'লেখকের কথা' অংশ থেকে। এখানে তিনি লিখেছেন
'সাবিত্রী'র পরম সম্পদ হইয়াছে তাহার গান। লিখিতে গর্বে এবং গৌরবে আমার বুক
ভরিয়া ওঠে যে সমস্ত গান গুলির কথা এবং সুরই গীত-সুন্দর সুর-যাদুকর বাংলার
কবি-দুলাল কাজী নজরুল ইসলামের সস্নেহদান।
১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দের ২ ডিসেম্বর, তাঁর রচিত করেন 'অশোক' নাটকটি 'রংমহল
থিয়েটার'-এ অভিনীত হয়েছিল। পরিচালনায় ছিলেন নরেশ মিত্র। অভিনেত্রী শান্তি
গুপ্তা এই নাটকেই প্রথম রঙমহলে আউষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছিলেন। অন্য শিল্পীরা ছিলেন
রবি রায়, ভূমেন রায়, রতীন বন্দ্যোপাধ্যায়, নরেশ মিত্র, চারুবালা প্রমুখ। এই
নাটকে সতু সেন
মঞ্চসজ্জা ও আলোকসম্পাত উচ্চমানের হয়েছিল।
১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর
নাট্যনিকেতন-এর জন্য রচনা করেছিলেন 'মীরকাশিম' নাটক। এরপর প্রায় ১৪ বৎসর তিনি
কোনো নাটক রচনা করেন নি। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে পুনরায় নাটক লেখার জন্য মনস্থির করেন।
১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে তিনি রচনা করেন 'মহাভারতী' নামক নাটক। নাটকটি
মন্দিরা পত্রিকা ১৩৫৯ বঙ্গাব্দে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দের
২৬ জানুয়ারি, শ্রীরঙ্গম নাট্যমঞ্চে বাটকটি অভিনীত হয়েছিল। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে
জানুয়ারি, পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণীতে অনুষ্ঠিত জাতীয় মহাসভা কংগ্রেস নাটমঞ্চে অভিনীত
হয়েছিল। ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত '১৮৫৭ বিদ্রোহ শতবার্ষিকী জয়ন্তী'
উৎসবে ভারত সরকারের আমন্ত্রণে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের লোকরঞ্জন শাখা ২৪ এবং ২৫ আগষ্ট
মহাভারতীর হিন্দী অনুবাদ অভিনীত হয়।
১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা ডিসেম্বর 'রংমহল
থিয়েটার', মঞ্চস্থ করেছিল মন্মথ রায়ের রচিত 'খুনী বাড়ি'। ৯ ডিসেম্বর বহুরূপী
নাট্যদল, রঙমহলে মঞ্চস্থ করে 'ধর্মঘট' নামক নাটক। নাটকটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল
বঙ্গশ্রী পত্রিকার মাঘ-ফাল্গুন-চৈত্র ১৩৩০ সংখ্যায়।
১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে বন্দিতা নাটক রচনা করেন। এই বছরে বহুরূপী নাট্য প্রতিষ্ঠানের
মুখপত্র 'বহুরূপীতে প্রকাশিত হয় 'অমৃত অতীত' নামক নাটক। নাটকটি তিনি রচনা করেছিলেন-
গন্ধর্ব নাট্যদলের নাট্যনির্দেশক শ্যামল ঘোষের অনুরোধে। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের ২১
ফেব্রুয়ারি নাটকটি রঙমহল নাট্যমঞ্চে 'গন্ধর্ব' নাট্যদল মঞ্চস্থ করেছিল। এই বছরের ৩
জুন তাঁর রচিত 'লালন ফকির' নাটক মঞ্চস্থ হয় 'রূপকার' নাট্যদলের প্রযো্জনায়।
নজরুল ছাড়াও মন্মথের রচিত নাটকে ব্যবহৃত হয়েছিল অজয় ভট্টাচার্য, হেমেন্দ্রকুমার
রায়ের গান। নাটক রচনার পাশাপাশি তিনি ভাণ্ডার ও বসুন্ধরা পত্রিকার সম্পাদনা
করেছিলেন। তিনি বেশ কিছু চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লিখেছিলেন। এর ভিতরে উল্লেখযোগ্য
চিত্রনাট্য ছিল- ক্ষুধিত পাষাণ, চাঁদ সদাগর, অভিনয়, রাজনর্তকী, যোগাযোগ ইত্যাদি।
পশ্চিম বঙ্গ সরকারের প্রচার ও প্রযোজকের দায়িত্বে থাকাকালে তিনি প্রায় ৫০টি
তথ্যচিত্র তৈরি করেন। তিনি কিছুদিন অল ইন্ডিয়া রেডিও-র প্রডিউসার ছিলেন।
১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে সরকার কর্তৃক উত্থাপিত নাট্যবিলের বিরুদ্ধে নাট্যশিল্পীদের
আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন।
১৭৭৯ খ্রিষ্টাব্দে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবং ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাম্মানিক ডিলিট উপাধি পান।
১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
একাঙ্কিকা