বিষয়: নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: মোর প্রিয়া হবে এসো রানী
মোর প্রিয়া হবে এসো রানী দেব খোঁপায় তারার ফুল
কর্ণে দোলাব তৃতীয়া তিথির চৈতী চাঁদের দুল॥
কণ্ঠে তোমার
পরাব বালিকা
হংস-সারির
দুলানো মালিকা
বিজলি জরীণ ফিতায় বাঁধিব মেঘ রঙ এলো চুল॥
জোছনার সাথে চন্দন দিয়ে মাখাব তোমার গায়
রামধনু হতে লাল রঙ ছানি' আল্তা পরাব পায়।
আমার গানের সাত সুর দিয়া
তোমার বাসর রচিব প্রিয়া
তোমারে ঘেরিয়া গাহিবে আমার কবিতার বুলবুল॥
- ভাবসন্ধান:
এই গানটির রচনার প্রেক্ষাপট নিয়ে একটি গল্প প্রচলিত আছে। কোনো এক আড্ডায় কথায় কথায় কেউ একজন বলেন, প্রেয়সীকে যদি আমরা মনের মতো সাজাতে চাই। তাহলে কিভাবে সাজাবো। আর্থিক সামর্থ্যের কারণে, সে ইচ্ছা হয়তো পূরণ করা সকলের জন্য সম্ভব হয় না। যদি আমাদের প্রত্যেক্যের সামর্থ থাকতো, তবে কে কিভাব আমরা আমাদের প্রিয়াকে সাজাতাম। এরপর নানাজন নানা ভাবে তাদের প্রিয়াকে সাজানোর কথা বললেন। ওই আসরে বসে নজরুল ইসলাম ছিলেন। তিনি তাঁর এই ইচ্ছাকে প্রকাশ করে এই গান রচনা করেছিলেন। গল্পটি হয়তো সত্যি, হয়তো নয়। কিন্তু এই গানে কবি তাঁর প্রিয়াকে সাজানোর এমন কিছু অসামান্য উপকরণ গ্রহণ করেছেন, মানুষের কাছে চিরন্তন সৌন্দর্যময় উপকরণ, কিন্তু তা ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
এই গানের উপকরণ বাস্তবের গোলাপ, পদ্ম, হীরা, মাণিক্য ইত্যাদির মতো অর্থ বা সম্পদের বিনিময়ে সংগ্রহ করার মতো নয়। কল্প-বাস্তব জগতের তৈরি নান্দনিক রসবোধ থেকে এ সকল উপকরণ সংগ্রহ করে অকৃপণ হাতে কবি তাঁর প্রিয়াকে সাজিয়েছেন। বাস্তবতার নিরিখে এসকল উপকরণ কল্পনার, কিন্তু কল্পনার চোখে তাই বাস্তব হয়ে ফুটে উঠেছে এই গানে।
গানের স্থায়ীতে তিনি প্রিয়ার খোঁপা সাজাতে চান 'তারার ফুল' দিয়ে আর কানে দিতে চান চৈত্র মাসের তৃতীয়া তিথীর দ্যুতিময় বাঁকা চাঁদ।
অন্তরাতে তাঁর প্রিয়ার কণ্ঠের হার গ্রহণ করেছেন আকাশে উড়ন্ত হাঁসের দোলায়মান সারি থেকে। আর বিজলির চমক যে দ্যুতিময় রেখা আকাশে ফুটে, সে রেখাকে বর্ষার কালো মেঘের মতো চুলে চকমকে জরির ফিতা হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছেন।
সঞ্চারীতে এসে কবি সরাসরি কোনো উপকরণ গ্রহণ করার কথা ভাবেন নি।
তিনি একাধিক সৌন্দর্যের সুসমন্বিত সৌন্দর্যকে গ্রহণ করেছেন। তিনি জোছনা আর চন্দনের সংমিশ্রণে তৈরি করবেন প্রিয়া গায়ে মাখার অঙ্গরাগ। আর রঙধনুর ভিতর
থেকে শুধু লাল রঙটুকু প্রিয়ার পায়ের আলতা নির্বাচন করেছেন। আভোগীতে
দেখি - কবি ফুল, মালা, গন্ধদ্রব্য দিয়ে বাসর ঘর সাজাতে চান না। তাঁর যে বাসর হবে শুধুই সঙ্গীতময়। আর সে আসরে কবি প্রিয়াকে আবরিত করবেন তাঁর গীতিকাব্যের বাণী ও ছন্দের আবেশে।
-
রচনাকাল ও স্থান:
গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না।
১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ডিসেম্বর (শনিবার ২৮ অগ্রহায়ণ ১৩৪৭), কলকাতা
বেতারকেন্দ্র থেকে 'গুলবাগিচা' নামক গীতি-বিচিত্রা প্রচারিত হয়। এই
গীতি-বিচিত্রায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে এই গানটি প্রথম প্রচারিত হয়েছিল। এই সময়
নজরুলের বয়স ছিল ৪১ বৎসর ৬ মাস।
- গ্রন্থ: গুলবাগিচা (গীতিবিচিত্রা)।
নজরুল রচনাবলী
অষ্টম
খণ্ড [১২ ভাদ্র
১৪১৫,
২৭ আগষ্ট
২০০৮। পৃষ্ঠা
১৭১।]
- বেতার:
গুল্বাগিচা
(গজল-গীতিচিত্র)।
কলকাতা বেতার কেন্দ্র। [১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের
১৪ ডিসেম্বর (শনিবার ২৮ অগ্রহায়ণ ১৩৪৭)] তৃতীয় অধিবেশন। সময়: রাত ৮টা থেকে
৮.২৯ মিনিট।
- সূত্র:
- বেতার জগৎ। ১১শ বর্ষ, ২৩ সংখ্যা। ১লা ডিসেম্বর ১৯৪০। পৃষ্ঠা: ১২৮৫
- রেকর্ড: এইচএমভি [ডিসেম্বর ১৯৪২ (অগ্রহায়ণ-পৌষ ১৩৪৯)।
এন ২৭৩৪৭। শিল্পী: সত্য চৌধুরী।
- সুরকার: নজরুল ইসলাম
- স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি: নীলিমা দাস।
[নজরুল
সঙ্গীত স্বরলিপি, বত্রিশতম খণ্ড, নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা। ফাল্গুন ১৪১৫। ফেব্রুয়ারি
২০০৯] ১৫ সংখ্যক গান। রেকর্ডে সত্য চৌধুরী-র গাওয়া গানের সুরানুসারে স্বরলিপি করা হয়েছে।
[নমুনা]
- পর্যায়
- বিষয়াঙ্গ: প্রেম
- সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্য