রাগ: আশা-ভৈরবী (নজরুল-সৃষ্ট), তাল: ত্রিতাল
মৃত্যু নাই, নাই দুঃখ, আছে শুধু প্রাণ।
অনন্ত আনন্দ হাসি অফুরান॥
নিরাশার বিবর হ'তে
আয় রে বাহির পথে,
দেখ্ নিত্য সেথায় — আলোকের অভিযান॥
ভিতর হ'তে দ্বার বন্ধ ক'রে,
জীবন থাকিতে কে আছিস্ ম'রে।
ঘুমে যারা অচেতন
দেখে রাতে কু-স্বপন,
প্রভাতে ভয়ের নিশি হয় অবসান॥
সতীর বিরহে আকুল শিবকে আশা দেবী সান্ত্বনা দেন এই গানে। তিনি শিবকে শোনান অনন্ত আনন্দের কথা, যেখানে মৃত্যু নাই, নাই দুঃখ। আছে আনন্দময় জীবনের আস্বাদ। দেবী এই গানের মাধ্যমে নিরাশার অন্ধ-গহ্বর থেকে বাইরে এসে আনন্দময় আলোকিত জীবনের পথে চলার আহ্বান করছেন। নিজেকে অবরুদ্ধ করে থাকাটা যে বেঁচে মরে থাকার সামিল- সে কথায় স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি। এই অবরুদ্ধ দশায় যারা অচেতন থাকে, তার দুঃস্বপন্ দেখে। এ অবরুদ্ধ জীবন কাল-রাত্রির মতো। সেখান থেকে বেরিয়ে এলে, সে কালরাত্রির অবসান হয়। শুরু হয় সুপ্রভাত। এ গানের মধ্য দিয়ে মূলত আশা দেবী সতীহীন শিবের মনে আশার সঞ্চার করার চেষ্টা করেছেন।তুমি চির মধুরভাষিণী, আশা। নিরাশার অন্ধকারে যখন সবে হাবুডুবু খায়, অকুল পাথারে যখন কূল কিনারার ক্ষীণ আভাসটুকু পযন্ত দৃষ্টি পথে আসে না, জীব যখন একান্ত মনে মৃত্যুর হাতে আপনাকে সঁপে বাঁচতে চায়, তোমার হাসির ক্ষীণ রেখাই তাকে তখন ফিরিয়ে আনে জীবনের উপকূলে। তার আবার বাঁচতে সাধ যায়। তুমি আশা, এই নিরাশার অন্ধকারে, আনো— আনো— নতুন দিনের আলো। তপস্যাক্লিষ্টা নিশীথিনীর ললাটে পরাও নবারুণের চন্দন টিপ।
'বহুকাল পূর্বের কথা। উদাসী ভৈরব নামে একখানি নাটিকা বেতারে অভিনীত হবার জন্যে কবি আমাকে দিয়ে লিখিয়েছিলেন— এবং এর ছয়খানি গান তিনি রচনা ও তাতে সুরারোপ করেন। সুরগুলি রাগ-ধর্মী ও তাঁর সৃষ্ট নবরাগ। বাসন্তী বিদ্যাবীথির প্রয়োজনীয় নাটিকাটি বেতারে সাফল্যের সঙ্গে অভিনীত হয়েছিল। ... গানগুলি অরুণ-ভৈরব, আশা-ভৈরব, শিবানী-ভৈরবী, রুদ্র-ভৈরব, যোগিনী ও উদাসী ভৈরব।'