বিষয়: নজরুল সঙ্গীত
শিরোনাম: শোন্ ও-সন্ধ্যা-মালতী,বালিকা তপতী
শোন্ ও-সন্ধ্যা-মালতী, বালিকা তপতী
বেলা শেষের বাঁশি বাজে, বাজে।
শোনো মাধবী চাঁদের মধুর মিনতি
উদাস আকাশ মাঝে॥
তব
মৌন ব্রত ভাঙ্গো কও কথা কও
মোর নৃত্য আরতির সঙ্গিনী হও,
মাধবী হেনা হের এলো বাহিরে
-
রসরাজে
হেরি'
রাস-নৃত্যের সাজে॥
তুমি
যার লাগি' সারাদিন, বিরহ ধ্যান-লীন একাকিনী কুঞ্জে,
হের সে-মাধব, নিশীথের
ভ্রমর হয়ে তব পাশে গুঞ্জে।
সুন্দর দাঁড়ায়ে তব দ্বারে আঁধারে
মঞ্জরি-দীপ
জ্বালো ডাকো তারে,
বুকের চন্দন-সুরভি ঢালো
-
পাতার আঁচলে
মুখ ঢেকো না লাজে॥
-
পাণ্ডুলিপি নমুনা
- ভাবসন্ধান: গানটি নজরুল রচিত 'নব রাগমালিকা' গীতিনাট্যের প্রথম অনুষ্ঠানের চতুর্থ গান।
কবি তাঁর নিজের সৃষ্টি রাগের নাম রেখেছিলেন সন্ধ্যামালতী। রাগের নামের সাথে মিল রেখে গানটি রচনা করেছিলেন
সন্ধ্যামালতী ফুলকে নিয়ে। কবি সন্ধ্যামালতী ফুলকে ডেকে বলছেন- 'হে সূর্যকন্যা-রূপী
সন্ধ্যামালতী, বেলা শেষের যে সন্ধ্যামালতী রাগের সুর বাজছে, তা শোনো। দেখ- মধুক্ষরা
চাঁদের মধুর মিনতি যেন উদাস আকাশে ছড়িয়ে পড়ছে। স্তব্ধতা বিসর্জন দিয়ে মুখরিত হও'। কবি
সন্ধ্যামালতীকে তাঁর পূজা আরতির সঙ্গিনী হয়ে- মাধবী, হেনাদের সাথে রাসনৃত্যের অংশভাগী হওয়ার জন্য আহ্বান করছেন।
গানটির আভোগীতে এসে, কবি রাধার সাথে সন্ধ্যামালতীকে তুলনা করেছেন। সন্ধ্যামালতী যেন সারাদিন কুঞ্জে
একাকিনী শ্রীরাধার মতো কৃষ্ণের প্রতীক্ষায় থাকে। কৃষ্ণরূপী ভ্রমর যেন তার চারদিকে গান গেয়ে
প্রদক্ষিণ করে। তাই কবি তাঁকে তার দলমণ্ডলের প্রদীপ দিয়ে বরণ করার জন্য
উৎসাহ দান করে বলছেন। তিনি আসন্ন মিলনের লজ্জায় সন্ধ্যামালতীকে পাতার আড়ালে মুখ লুকাতে বারণ
করছেন।
গানটিতে পাওয়া যায়, সন্ধ্যমালতীর বন্দনার ভিতর দিয়ে রাগের বিমূর্ত
সৌন্দর্য-সন্দর্শনের সাধনা। তাই বাণীর চেয়ে এই গানের সুরবিন্যাসের প্রকৃতি
অন্বেষণটাই বড় হয়ে ওঠেছে। আদ্ধা-কাওয়ালি তালে নিবদ্ধ এই গানে পাওয়া সরল চলনের পরিবরতে আড়ে আড়ে চলা। এই চলনে রয়েছে সলজ্জ-সংকোচ।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে
কিছু জানা যায় না। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ জানুয়ারি, (সোমবার ২৯ পৌষ ১৯৪৭) সন্ধ্যা ৭.২০টায় কলকাতা বেতারকেন্দ্র থেকে
নজরুল-সৃষ্ট রাগ নিয়ে তৈরি 'নব রাগমালিকা' গীতিনাট্যের প্রথম পর্ব প্রচারিত হয়েছিল। এই গানটি ছিল গীতিনাট্যের
চতুর্থ গান। এই সময় নজরুলের বয়স
ছিল ৪০ বৎসর ৭ মাস।
- গ্রন্থ:
- নজরুলগীতি-অখণ্ড, হরফ।
নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ (নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি ২০১২)। ১৭৪৯ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৫২০।
- নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, ছত্রিশতম খণ্ড (নজরুল ইন্সটিটিউট, আষাঢ় ১৪২১। জুন ২০১৪)। ২৪ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৭৬-৭৮।
- নজরুল সুরমালিকা-২ (ডি. এম. লাইব্রেরী, জ্যৈষ্ঠ ১৪১০। মে ২০০৩)। ১৯ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৫০-৫১।
- নবরাগ (নজরুল ইনস্টিটিউট। সেপ্টেম্বর ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ)। ৭ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ১৫-১৭।
নবরাগ (হরফ প্রকাশনী। কবির ৭৩তম জন্মদিন, ১৩৭৯ বঙ্গাব্দ)। ৭ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ২১-২৩।
[নমুনা]
- সন্ধ্যামালতী
- প্রথম সংস্করণ [শ্রাবণ ১৩৭৭ (জুলাই-আগষ্ট ১৯৭১)]
- নজরুল রচনাবলী জন্মশতবার্ষিকী সপ্তম খণ্ড [১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪১৫, ২৫
মে ২০০৮। সন্ধ্যামালতী, গান ৫৮ পৃষ্ঠা: ১৫৪-১৫৫]
- বেতার:
-
নব রাগমালিকা
(গীতিনাট্য)।কলকাতা
বেতারকেন্দ্র [১৩ জানুয়ারি ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ (সোমবার ২৯ পৌষ ১৯৪৭) সন্ধ্যা
৭.২০টা] রাগ: বেণুকা (নজরুল-সৃষ্ট)।
শিল্পী : গীতা মিত্র।
- পত্রিকা:
- বেতার জগৎ,১৬ জানুয়ারি, ১৯৪০ সংখ্যা 'নব রাগ মালিকা ১৩ জানুয়ারি,
১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে শিল্পী ছিলেন গীতা মিত্র। চরিত্র-রূপমঞ্জরী।
- রেকর্ড:
- কলম্বিয়া [জুলাই ১৯৪০ (আষাঢ়-শ্রাবণ ১৩৪৭)। জিই ২৫৫১। শিল্পী: শ্রীমতী
রাধারাণী। সুরকার নজরুল ইসলাম]
- সঙ্গীতবিষয়ক তথ্যাবলি:
- স্বরলিপিকার:
- এস. এম. আহসান মুর্শেদ। [নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, ছত্রিশতম খণ্ড (নজরুল ইন্সটিটিউট, আষাঢ় ১৪২১। জুন ২০১৪)]
[নমুনা]
- নবরাগ' গ্রন্থে জগৎ ঘটক কৃত স্বরলিপিটি শুদ্ধ নয়। (সূত্র: নজরুল সঙ্গীত নির্দেশিকা, ব্রহ্মমোহন ঠাকুর। গান- ২৪০২। পৃষ্ঠা: ৬৭৩-৬৭৪।]
[নমুনা]
- বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি- সঙ্গীত।
- সুরাঙ্গ:
খেয়ালাঙ্গ ।
- গ্রহস্বর: শুদ্ধ নিষাদ