ইসলামের ঐ সওদা লয়ে এলো নবীন সওদাগর।
বদ্নসীব আয়, আয় গুনাহ্গার নূতন করে সওদা কর॥
জীবন ভ'রে করলি লোকসান আজ হিসাব তার খতিয়ে নে;
বিনিমূলে দেয় বিলিয়ে সে যে বেহেশ্তী নজর॥
কোরানের ঐ জাহাজ বোঝাই হীরা মুক্তা পান্নাতে,
লুটে নে রে, লুটে নে সব, ভরে তোল্ তোর শূন্য ঘর।
কেয়ামতের বাজারে ভাই মুনাফা যে চাও বহুৎ-
এই ব্যাপারীর হও খরিদ্দার লও রে ইহার সিল-মোহর॥
আরশ হতে পথ ভুলে এ এলো মদিনা শহর,
নামে মোবারক-মোহাম্মদ পুঁজি 'আল্লাহু আকবর'॥
এই গানটি রচনার প্রসঙ্গে আব্বাসউদ্দীন আহমদ তাঁর 'আমার শিল্পী জীবনের কথা'
গ্রন্থ থেকে জানা যায়, ইসলামী গানের রেকর্ড প্রকাশের ক্ষেত্রে গ্রামোফোন
কোম্পানির রিহাসর্সল-ইন চার্জ ভগবতী ভট্টাচার্য রাজী ছিলেন না। এ নিয়ে
আব্বাসউদ্দীন তাঁকে অনুরোধ করার পর, ভগবতী বাবু প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। পরে
একদিন গ্রামোফোন কোম্পানির রিহাসর্সল রূপে আব্বাসউদ্দীন তাঁকে দ্বিতীয়বার
অনুরোধ করেন। এবারে বগবতী বাবু রাজী হন। এ প্রসঙ্গে 'আমার শিল্পী জীবনের কথা' [পরিবেশনা:
হরফ প্রকাশনী, কলকাতা। পৃষ্ঠা: ৭৩] গ্রন্থে তিনি লিখেছেন-
'...আমি কাজিদাকে বললাম যে ভগবতীবাবু রাজী হয়েছেন। তখন সেখানে ইন্দুবালা কাজিদার কাছে গান শিখছিলেন। কাজিদা বলে উঠলেন, ইন্দু তুমি বাড়ী যাও, আব্বাসের সাথে কাজ আছে।" ইন্দুবালা চলে গেলেন এক ঠোংগা পান আর চা আনতে বললাম দশরথকে। তারপর দরজা বন্ধ করে আধঘণ্টার ভিতরই লিখে ফেললেন- ' ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ।" তখুনি সুরসংযোগ করে শিখেয়ে দিলেন। পরের দিন ঠিক এই সময় আসতে বললেন। পরের দিন লিখলেন, "ইসলামের ঐ সওদা লয়ে এলো নবীন সওদার।"
আব্বাসউদ্দীনের এই বক্তব্য অনুসারে- 'ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশীর
ঈদ' এই সময়ে রচিত হলেও, আলোচ্য গানটি এই সময়ের রচিত নয়। কারণ, এই গানটি
জয়তী পত্রিকার কার্তিক-পৌষ ১৩৩৮ (অক্টোবর-ডিসেম্বর ১৯৩১) সংখ্যায়
পূর্বেই প্রকাশিত হয়েছিল। সম্ভবত এইচএমভিতে ' ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে
এলো খুশীর ঈদ" গানটি প্রকাশের সময় এর জুড়ি গান হিসেবে পূর্বে রচিত আলোচ্য
গানটিতে সুরারোপ করেছিলেন।
রেকর্ড বুলেটিনে মন্তব্য ছিল- "আর একটি অভাব এতদিনে দূর হইল। বাংলা ভাষায় ইসলামী
ধর্ম বিষয়ক রেকর্ডের জন্য অনুগ্রাহক বর্গ যেরূপ উৎসুক হইয়া আছেন উক্ত রেকর্ডখানি
ততোধিক তৃপ্তি দিবে ইহাতে সন্দেহ নাই। এরূপ রেকর্ড আমাদের তালিকায় প্রথম।"