বিষয়: নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: আমি সন্ধ্যামালতী বনছায়া অঞ্চলে
আমি সন্ধ্যামালতী বনছায়া অঞ্চলে
লুকাইয়া রই ঘন পল্লব তলে॥ বিহগের গীতি ভ্রমরের গুঞ্জন, নীরব
হয় যখন
— আমি চাঁদেরে তখন পূজা করি আঁখি-জলে॥ আমি লুকাইয়া কাঁদি বনের শকুন্তলা
মনের কথা এ জনমে হ'ল না বলা। গভীর নিশীথে বন-ঝিল্লীর সুরে, ডাকি
দূর বন্ধুরে — আমি ঝ'রে পড়ি যবে প্রভাতে সবার হৃদয় মুকুল খোলে॥
ভাবসন্ধান: গানটির বিষয়াঙ্গ প্রকৃতি ও প্রেম। এই গানের সন্ধ্যামালতি প্রকৃতির জাগতিক উপাদান। এ গানের সন্ধ্যমালতির প্রস্ফুটিত হওয়া এবং ঝরে পড়ার মধ্যে কবি খুঁজে পেয়েছেন- প্রেম বিফল নায়িকার বেদনাকে। এই বিচারে বলা যায়- এটি শৃঙ্গার রসের বিরহ-বেদনার-গান।
অন্যান্য কিছু গানের মতই, কবি সন্ধ্যামালতীর কথাই নিজের জবানিতে ব্যক্ত করেছেন। গানটির কথা সরলার্থে বলা যায়- সন্ধ্যামালতী বনছায়ার তলে, ঘন পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকে। দিন শেষে যখন পাখির কাকলি, ভ্রমরে গুঞ্জন যখন থেমে যায়, তখন চাঁদের আলয়ে ক্ষণিকের তরে সন্ধ্যামালতী বিকশিত হয়, তারপর প্রকৃতির অশ্রু হয়ে ঝরে পরে।
কালিদাসের ‘অভিজ্ঞান শকুন্তলা' নাটকে আছে- দুর্বাসার অভিশাপে রাজা দুষ্মন্ত শকুন্তলাকে ভুলে ছিল বহুদিন। এই গভীর বেদনায় শকুন্তলা বিলাপ করেছে সংগোপনে। কবি সন্ধ্যামালতী যেন সেরূপ বনের ক্রন্দসী শকুন্তলা। তার মনের বেদনা কখনো বলা হয়ে ওঠে নি। গভীর রাত্রে যখন বন-ঝিল্লির সঙ্গলাভের আশায় দূরের বন্ধুকে ডাকে। ঝিল্লীর সেই সুরে সুরে সন্ধ্যামালতী যেন ডাকে কোনো দূরের সঙ্গীকে। সারারাত কাটে তাঁর বন্ধুর সঙ্গলাভের আশায়, কিন্তু বন্ধুর দেখা মেলে না। তাই সে প্রভাতে ঝরে পড়ে। ভোরের আলোয় যখন অন্যান্য ফুলের মুকুল প্রস্ফুটিত হয়, তখন শুধু সন্ধ্যামালতীই অপ্রাপ্তির বেদনা নিয়ে বিরহী প্রকৃতির
বুকে অশ্রু হয়ে ঝরে পড়ে।
রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু
যায় নি। ব্রহ্মমোহন ঠাকুর তাঁর 'নজরুল সঙ্গীত নির্দেশিকা' গ্রন্থ থেকে জানা যায়
[পৃষ্ঠা: ৭৩]- ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দ গানটির প্রথম রেকর্ড করেছিল এইচএমভি। রেকর্ডটি পরে
বাতিল হয়েছিল। রেকর্ডের মাসের উল্লেখ না থাকায়- নজরুলের যথার্থ বয়স নির্দেশ করাটা
অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। বঙ্গাব্দের বিচারে ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দ হয় পৌষ ১৩৪৪ থেকে
পৌষ ১৩৪৫ পর্যন্ত। এই বিচারে মোটা দাগে এই গানটি ৩৮-৩৯ বৎসরের রচনা হিসেবে গণ্য করা
যেতে পারে।